Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বাজুবন্ধ খুল খুল যায়

মনে পড়ে যায় বিখ্যাত সেই গানের কলি। কিন্তু খোলার আগে তো পরা। এখন যে আবার ফ্যাশনে সেই সাবেক গয়না। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেরি হলেও বিয়ের গয়না নিয়ে প্ল্যানিং সেরে ফেলেছেন আলিয়া ভট্ট। কনে-সাজের তালিকায় বাজুবন্দ বা আর্মলেট কিন্তু অনিবার্য। প্ল্যানিং না হয় হল। তাই বলে আর্মলেটের মত ভারি সেকেলে গয়না? ট্যাব ম্যনিয়াক, নেট তন্ন তন্ন করা প্রজন্মের সবকিছুই তো চাই ‘বোল্ড আর ব্রাইট।’

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেরি হলেও বিয়ের গয়না নিয়ে প্ল্যানিং সেরে ফেলেছেন আলিয়া ভট্ট। কনে-সাজের তালিকায় বাজুবন্দ বা আর্মলেট কিন্তু অনিবার্য।

প্ল্যানিং না হয় হল। তাই বলে আর্মলেটের মত ভারি সেকেলে গয়না? ট্যাব ম্যনিয়াক, নেট তন্ন তন্ন করা প্রজন্মের সবকিছুই তো চাই ‘বোল্ড আর ব্রাইট।’ আদিম যুগের অনন্ত বা হাতের ওপর অংশের গয়না বা বাজুবন্ধ আজ সাপের খোলস আর ময়ূরের পেখমের একঘেয়ে ডিজাইন ছেড়ে জেন ওয়াইয়ের নগ্ন বাহুতে সোহাগ ছড়াচ্ছে।

বলিউডের বিখ্যাত অ্যাক্সেসরি ডিজাইনার নীতিন অরোরা বলছেন, এ বছর ভাইব্র্যান্ট, বোল্ড, ফাঙ্কি গয়নার। এমন কোনও গয়না, যা শরীরের একটা অংশকেই কেবল হাইলাইট করবে। সেই দিক থেকে এখন আর্মলেটের চাহিদা তুঙ্গে। এ গয়না পরলে বালা, চুড়ি, ঘড়ি কিছুই পরার দরকার হয় না। অলঙ্কার শিল্পী নারায়ণ সিংহ অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তাঁর মতে, চাইলেই কিন্তু আর্মলেট পরা যায় না। যাঁরা গয়নার ক্ষেত্রে ‘অফ বিট’ হতে চান তাঁরাই কেবল জম্পেশ বাজুবন্ধ পরার কথা ভাবতে পারেন।

শুধু বিয়ের কনের বেনারসি নয়, কলেজ ফেরত কফি আড্ডায়, স্প্যাগেটি বা স্লিভলেস টপের সঙ্গে রঙিন পুঁতি বা পাথর বসানো বাজুবন্ধেই আজ লুকিয়ে আছে স্টাইল। খোলা পিঠের নেশা আর এক ফালি কোমরের রহস্যকে ছাপিয়ে গেছে নগ্ন হাতের উষ্ণ আলিঙ্গন। হাতের পেশীকে টোন করতে তাই ওয়েট ট্রেনিং-এর নেশায় মেতে উঠেছে।

হাত সাজিয়ে তুলতে অভিনেত্রী গার্গী রায় চৌধুরি রাত পার্টির গাউনের সঙ্গে বাঁ হাতে জড়িয়ে নিতে বলছেন রূপো বা পাথর বসানো আর্মলেট। “কানে গয়না পরা এখন বন্ধ করে দিয়েছি। নাকে ছোট্ট নোস পিন দিয়ে মুখটাকে সিম্পল রেখে হাতের গয়নার দিকে এখন মন দিয়েছি। লুকটাই পুরো বদলে যাচ্ছে,” বলেন উচ্ছ্বসিত গার্গী।

চলবে না

• অফিস সাজে

• থলথলে চামড়ায়

• শরীরের চেয়ে মোটা হাতে

• ব্লাউজ বা কোনও পোশাকের ওপরে

• দুই হাতে পরা যাবে না

সোনার দোকান বা নিউ মার্কেটের রুপোর দোকান ছাড়াও কুন্দন, কালার বিড, চেন সেটিং-এর পাথর বসানো, স্টিল বা লোহার পাত দেওয়া হরেক ডিজাইনের আর্মলেট অনলাইনে ঢেলে বিক্রি হচ্ছে। ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজন বলে সার্চ দিলেই তার সন্ধান পাওয়া যাবে। হরেক রকম তার নকশা। কোনওটা বরফির মতো, কোনওটা বা ছোট ছোট চাকতির আকারে পুঁতি দিয়ে গাঁথা। অনেকটা আদিবাসী গয়নার মতো। কোনওটা গোল্লা গড়নের, ক্লিপ দিয়ে আটকানো। কোথাও বা শুধুই চেন দেওয়া, তাতে ঝুলছে একটা কুন্দনের বল বা ঝুমকো। কোনও ক্ষেত্রে রুপোর একটা বড় ফুল হাইলাইট করা হচ্ছে। কোনওটা আবার গলার চোকারের মত দেখতে, হাতের মাপের আকারে তৈরি করা। কোনওটা বা তিন প্যাঁচের আংটির মত দেখতে।

তিনশ থেকে আটশো টাকার আর্মলেট মেয়েরাই নয় ছেলেরাও চুটিয়ে পরছে। “ইদানিং জ্যামিতিক নকশার চামড়া, লোহা বা স্টিলের আর্মলেটের চাহিদা ছেলেদের মধ্যে খুব বেশি। কুর্তার চেয়ে টি শার্ট আর জিনসের সঙ্গেই বাইসেপসের ওপরে এই ধরনের আর্মলেট পরলে সম্মোহিত করা পৌরুষ জেগে ওঠে,” বলছেন নারায়ণ সিংহ। তবে যাঁরা গয়না হিসেবে আর্মলেট পরতে চান না, তাঁদের ট্যাটু দিয়ে তাবিজের লুকটা আনার পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনার নীতা অরোরা।

ফুলশয্যায় একঘেয়ে আংটি দেওয়ার চল থেকে বেরিযে এসে কর্পোরেট কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার অর্ণব বউকে সোনার পাতের ওপর ডায়মন্ডের বিড দিয়ে ঘেরা বাজুবন্ধ উপহার দিয়েছিলেন। “খুব স্লিক আর ট্রেন্ডি হওয়ায় ওয়েস্টার্ন পোশাক থেকে শাড়ি সবের সঙ্গেই আমি ওটা পরতে পারি,” বলছেন অর্ণবের স্ত্রী সুদীপ্তা। সাবেকি গয়না নিয়ে বাড়াবাড়ি পছন্দ না করলেও প্রেসিডেন্সির আরাত্রিকা বিয়ের জন্য একটা ওপর হাতের গয়নার প্ল্যানিং মনে রেখে দিয়েছে। “জমকালো শাড়ির সঙ্গে বা অফিস থেকে নেমন্তন্নে বাজুবন্ধ পরি, বেশি গয়না নিয়ে মাথাও ঘামাতে হয় না। ব্যাগে ক্যারিও করা যায়,” বলছেন কপিরাইটার সুনয়না ঘোষ।

শাড়ি, লং ড্রেস, স্কার্ট সবকিছুর সঙ্গেই বাজুবন্ধ চলতে পারে তবে জামাকাপড়ের সুতোর বুনোট কেমন তা বুঝেই বুঝে বাজুবন্ধ বাছতে হবে। পরামর্শ দিচ্ছেন জেন ওয়াই অ্যাক্সেসরি ডিজাইনার নীনা খৈতান। যেমন শিফন বা জর্জেটের সঙ্গে জিঙ্ক, সিলভার, আয়রন বা গোল্ড চলতে পারে। খাদির ফ্যাব্রিকের সঙ্গে পুঁতি, পাথর বা চেনের মিশেল সাজে ভারসাম্য আনবে। কস্টিউম জুয়েলারির শোরুমেও রমরমিয়ে বিকোচ্ছে নানা ধাঁচের বাজুবন্ধ। আসলে সাজ মানে তো কেবল বিয়ে আর পার্টি নয়। রোজই নিজেকে পালটে সাজাতে চায় আধুনিকারা। তবে আর কি? স্টক কমে আসার আগে অনলাইন বা গয়নার দোকান থেকে আপনার ওপর হাতের সাজের গয়নাকে বাক্সবন্দী করে ফেলুন। কথা হোক এবার হাতে আর চোখে। বাজুবন্ধ খুলে খুলে যাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

baju bandh srobonti bandopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE