Advertisement
E-Paper

মেরে পাস ‘বেটা’ হ্যায়

না, এমন সংলাপ ছিল না ‘পা’তে। তবু ‘পুত্র’ অমিতাভ বচ্চন-কে নিয়ে গর্ব কম নেই বিদ্যা বালন-এর। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।এমন মানুষের থেকে নিজেকে দূরে রাখবে যারা তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ছোট করতে চায়। কিন্তু যাঁরা মহান, তাঁরা বুঝিয়ে দেন যে তুমিও পারবে তোমার স্বপ্নকে সফল করতে। আর সেটাই নিঃশব্দে করে চলেন অমিতাভ বচ্চন। তাঁর সান্নিধ্য মানে আশ্বাস। সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিশ্বাস। কে যেন বলে যায় ‘হ্যাঁ, আমিও পারব’।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০

অনুষ্ঠানটা ছিল কান চলচ্চিত্র উত্‌সব। সেখানে বিদ্যা বালন জুরিতে। সে উত্‌সবের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত অমিতাভ বচ্চন। একই মঞ্চে নিজের ‘ছেলে’ থুড়ি অমিতাভ বচ্চনকে দেখে হঠাত্‌ বিদ্যার দমবন্ধ হয়ে আসে!

কেন এমন হল বিদ্যার?

২০০৯-এ তো অভিনয় করেছিলেন অমিতাভের সঙ্গে। পরিচালক আর বাল্কির ‘পা’তে তিনি ছিলেন ১২ বছরের অমিতাভের মা। শ্যুটিংয়ের সময় ও ছবির প্রোমোশনে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। তবু চার বছর পর ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরাতে গিয়ে বিদ্যার কেন এমন অভিব্যক্তি? আসল ব্যাপারটা হল, যত বার অমিতাভের সঙ্গে বিদ্যার সাক্ষাত্‌ হয়ে থাকে, সেই মুহূর্তগুলো অন্য একটা মাত্রা পেয়ে এসেছে। সে দিন কান-এর আন্তর্জাতিক মঞ্চেও অন্যথা হয়নি। ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছর নিয়ে আলোচনা। সেখানে অমিতাভের হিন্দিতে ভাষণ। আর সেই একই মঞ্চে নিজের উপস্থিতি। সব মিলিয়ে একটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। মুহূর্তটা এতটাই বিরল যে নিজেকে নাকি বিদ্যা চিমটি কেটে মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, সত্যিই এমনটা ঘটছে।’

ইতিহাসের পক্ষ থেকে সে দিন এই দুর্লভ মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে ছিলেন বিদ্যা। আর মনে মনে প্রার্থনা করেছিলেন যেন এমন মুহূর্ত তাঁর জীবনে আবার ফিরে আসে।

মঞ্চ পাল্টে যেতে পারে।

কিন্তু ব্যক্তিটির নাম যেন একই থেকে যায়।

এমন এক ব্যক্তি, যিনি নিজেই স্বয়ং অনুপ্রেরণা। যাঁর বৃত্তের মধ্যে থাকা মানে রোমাঞ্চের স্বাদ পাওয়া। আর সে স্বাদ পেয়ে বুঁদ হয়ে থাকা। এটা জেনেও যে এই রোমাঞ্চ সৃষ্টি করার প্রক্রিয়াটার হয়তো ব্যাখ্যা মিলবে না কোনও দিন। শুধু অনুভব করে যেতে হবে। নিশ্বাস নেওয়ার মতো করে আত্মস্থ করতে হবে। তার পর নিপুণ ভাবে তুলে রেখে দিতে হবে স্মৃতির চিত্রপটে।

আর প্রয়োজনের সময় এই স্মৃতি থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে শুরু করতে হবে পথ চলা।

যে ভাবে বিদ্যা এত দিন করে এসেছেন।

মঙ্গলবার সকালে দেড় মাসের আউটডোর শ্যুটিংয়ের জন্য পাড়ি দেওয়ার আগেই আবার একবার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন বিদ্যা। ফ্লাইট ছাড়ার আগে আনন্দ প্লাস-য়ের বিশেষ অমিতাভ বচ্চন সংখ্যার জন্য জানালেন তাঁর ‘ছেলে’র এমন পাঁচটা গুণ, যা সারাজীবন তাঁকে মুগ্ধ করে যাবে।

প্যাশন প্যাশন প্যাশন

মাঝে মাঝে ওঁকে দেখে আমার আশ্চর্য লাগে। মনে হয় এই বয়সে এখনও এই রকম একনিষ্ঠ ভাবে কী করে উনি কাজ করে যান? ৪০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে। এখনও কী প্যাশন! কাজ সম্পর্কে এতটাই ‘ড্রিভেন’। আমার তো মোটে দশ বছর কাজ হল ইন্ডাস্ট্রিতে। কত সময় খারাপ চিত্রনাট্য পড়তে গিয়ে মনে মনে ঘ্যানঘ্যান করি। একটু অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি। বিরক্ত লাগে। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে উনি কাজ করছেন। তার মানে ওঁর কাছে তো এই রকম ঝড়তিপড়তি চিত্রনাট্য অনেক এসে থাকবে। তবু তো কোনও দিন শুনিনি উনি বিরক্ত হয়েছেন। এ সবের উর্ধ্বে চলে গিয়েছেন উনি। একটাই লক্ষ্য। সেটা হল একাগ্রতার সঙ্গে কাজটা ভাল করা। আর সেটা করার ইন্টারেস্টটাও বজায় রাখা। এটাই তো শেখার।


‘পা’: মা ও ছেলে।

ব্লগ দিয়ে যায় চেনা

এত দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ ছবি, কাল বিজ্ঞাপন, পরশু টেলিভিশন। এই সব কিছু করেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন উনি। সোশ্যাল মিডিয়াতে উনি কী অসম্ভব অ্যাকটিভ! আমি এই প্রজন্মের হয়েও তো সেটা করতে পারিনি। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতেই পারলাম না সে ভাবে। ব্লগ বলুন, ট্যুইটার বলুন, সব জায়গায় উনি রয়েছেন। নিজে হাতে ব্লগ লেখেন। নিজেই ট্যুইট করেন। আর এর মধ্যে দিয়ে ফ্যানদের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ রাখেন। দেখে একটা কথা মনে হয়। এ সব উনি করে চলেছেন কারণ ওঁর মধ্যে রয়েছে অন্য এক শক্তি। যার নাম হল প্যাশন ফর লাইফ। জীবনকে ভালবাসার স্পৃহা আজও জিইয়ে রেখেছেন উনি।

লক্ষ্যে স্থির

মনে আছে যখন ‘পা’তে অভিনয় করছি, আমি তো সেটে ঢুকে সব্বার সঙ্গে হাই হ্যালো করে চলেছি। এর সঙ্গে গল্প, ওর সঙ্গে ঠাট্টা। ওই যে রকম হয়। কিন্তু ওঁকে লক্ষ করলাম একদম অন্য রকম। কিছু দৃশ্যে শ্যুটিং করার আগে নিজেকে সবার থেকে একদম সরিয়ে ফেলেছেন। মনে হল এনার্জি সংরক্ষণ করছেন। যাতে শ্যুটিংয়ের সময় সবটা উজাড় করে দিতে পারেন। তারকাদের একটা সমস্যা আছে। উই আর কনস্ট্যান্টলি অন ডিসপ্লে। সবই যেন খুল্লমখুল্লা। পরোক্ষ ভাবে একটা প্রেশার থাকে যাতে অফস্ক্রিনেও আমরা একই রকম ব্যবহার করি। কিন্তু উনি একদম আলাদা। একেবারে যাকে বলে ‘ট্রু টু হিমসেল্ফ’। এবং সেটা করেও কিন্তু উনি সবার প্রতি খুব সম্মানজনক ব্যবহার করে চলেন। এই নয় যে নিজের কাজ করছেন বলে অন্যের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসলেন। কাউকে বলে বসলেন, কেন আমাকে বিরক্ত করছ! জানো না, আমি কাজ করছি? এ সব কোনও দিন করতে শুনিনি।

ফোকাস শব্দটার অন্য একটা মানে দিয়েছেন তিনি। তাই উনি অমিতাভ বচ্চন।

দেওয়া নেওয়া

হিন্দি আর ইংরেজি ভাষার উপর ওঁর দখল আমাকে মুগ্ধ করেছে। জলদগম্ভীর সেই কণ্ঠস্বর। শুনলেই কেমন একটা লাগে। কত পড়াশোনা ওঁর। আর যখন একসঙ্গে অভিনয় করেছি, তার অভিজ্ঞতা তো একদম স্বতন্ত্র। মনে আছে ‘পা’ করার সময় একটা দৃশ্যে আমার ক্লোজ আপ নেওয়ার কথা হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম উনি নিজের ক্লোজ আপটা নেওয়ার পর নিশ্চয়ই মেক আপ ভ্যানে চলে যাবেন। কিন্তু না। যতক্ষণ আমার ক্লোজ আপটা নেওয়া হল, উনি ঠায় দাঁড়িয়েই থাকলেন। শ্যুটিংয়ের পর আমি ওঁকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম ওই ভাবে অপেক্ষা করার জন্য। উত্তরে উনি বলেছিলেন, “ধন্যবাদ কীসের? অভিনয় তো দেওয়া নেওয়ার প্রক্রিয়াতেই চলে। অভিনয় করার সময় মনে রাখবে যে তোমার পিছনের পাঁচ নম্বর সারির ব্যক্তির প্রতিক্রিয়াও তোমার অভিনয়কে প্রভাবিত করতে পারে!”

তুমিও পারবে

বহু বছর আগে মার্ক টোয়েনের একটা লেখায় পড়েছিলাম ‘কিপ অ্যাওয়ে ফ্রম পিপল হু ট্রাই টু বিলিটল ইয়োর অ্যাম্বিশনস। স্মল পিপল অলওয়েজ ডু দ্যাট, বাট দ্য রিয়েলি গ্রেট মেক ইউ ফিল দ্যাট ইউ, টু, ক্যান বিকাম গ্রেট।’ এমন মানুষের থেকে নিজেকে দূরে রাখবে যারা তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ছোট করতে চায়। কিন্তু যাঁরা মহান, তাঁরা বুঝিয়ে দেন যে তুমিও পারবে তোমার স্বপ্নকে সফল করতে। আর সেটাই নিঃশব্দে করে চলেন অমিতাভ বচ্চন। তাঁর সান্নিধ্য মানে আশ্বাস। সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিশ্বাস। কে যেন বলে যায় ‘হ্যাঁ, আমিও পারব’।

amitabh bachchan special amitabh bachchan issue2 ananda-plus priyanka dasgupta vidya balan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy