লস এঞ্জেলেসের কোডাক থিয়েটার আর মুম্বইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলের বলরুম। মাঝে এক যুগ। তখন আশুতোষ গোয়ারিকরের চিন্তা ছিল অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড হাতে উঠবে তো! আর
এখন উত্কন্ঠা টিআরপি সাত ছোঁবে তো! কারণ এ বার স্টার প্লাসের ‘এভারেস্ট’ নামে এক নতুন টিভি সিরিজের লেখক তিনি। প্রযোজকও। তফাত একটাই এখন আর কারওকে ‘শাট আপ’ বলেন না...
শুনলাম হৃতিক রোশনকে নিয়ে ‘মহেঞ্জো দাড়ো’র শ্যুটিং আবারও পিছিয়ে গেল...
হ্যাঁ, ‘এভারেস্ট’য়ের রিসার্চে অনেকটা সময় চলে গেল। তাই ‘মহেঞ্জো দাড়ো’ একটু পিছিয়ে দিতেই হত। আইডিয়াটা অনেক দিনই মাথায় ছিল, কিন্তু রিসার্চ করতে গিয়ে দেখলাম অনেক কিছুই অজানা। তাই সময়টা দিলাম। আসলে একবার ভাল করে রিসার্চ করা থাকলে সেটা বাস্তবায়িত করতে তেমন সময় লাগে না। এখন তো আবার হৃতিকের চোট। যেমন অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স আছে তাতে হতিকের পুরো ফিট হওয়াটা দরকার। ‘মহেঞ্জো দাড়ো’ হৃত্বিক ছাড়া হতেই পারে না। তাই আর নভেম্বরে হবে না। জানুয়ারির প্রথমেই শ্যুটিং শুরু করব। ওটার জন্য ভাল করে সময় দেওয়া দরকার।
এর মাঝে তো টেলিভিশনের একটা শোও করে ফেললেন?
আমি তো কেরিয়ার শুরুই করেছিলাম টিভিতে...
হ্যাঁ। সে তো অভিনয়। কিন্তু শো প্রোডিউস করা তো অন্য ব্যাপার...
একদম তাই। আসলে দু’টো আইডিয়া মাথায় ঘুরছিল। লিঙ্গ বৈষম্য আর পর্বতারোহণ। হঠাত্ই একদিন মাথায় এল দু’টো আইডিয়াকে মিলিয়ে একটা সিনেমা করলে কেমন হয়! কিন্তু থিমটা দেখাতে গেলে যে সময় লাগবে সেটা সিনেমার ওই দু’-তিন ঘণ্টার মধ্যে আঁটবে না। আর জোর করে আঁটানোটা ঠিকও হবে না। তাই গৌরব (বন্দ্যোপাধ্যায়, স্টার প্লাসের জেনারেল ম্যানেজার)কে আইডিয়াটা বলি। ও পাঁচ মিনিটেই রাজি হয়ে যায়।
আপনার শেষ সিনেমা চার বছর আগে। লোকে তো দারুণ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে সিরিয়ালটার জন্য...
আমি নিজেও কম এক্সাইটেড নই। দেখুন, সিনেমার মেকিং আর টিভির মেকিং তো সম্পূর্ণ আলাদা। সেটা মাথায় আছেই। সিনেমায় ফার্স্ট হাফে একটা ‘হুক’ রাখলেই হয়ে যায়, যাতে দর্শক সেকেন্ড হাফে আবার সিনেমা হলে ঢোকে। কিন্তু টিভির ক্ষেত্রে সেই হুকটা প্রতি এপিসোডেই দরকার। না হলেই চ্যানেল পাল্টে দেবে।
অনেক সময়ই লোকে আপনার সিনেমার দৈর্ঘ্য নিয়ে কথা বলেছে। টিভিতে আর সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না...
হা হা হা। আমার সিনেমার লেন্থ নিয়ে যে অনেকেরই আপত্তি আছে, তা আমি জানি। কিন্তু অনেক সময় বিষয়বস্তুটা এত বিস্তৃত থাকে যে, ওটা কোনও মতেই কমাতে পারতাম না। ‘লগান’ বলুন, কী ‘স্বদেশ’ বা ‘জোধা আকবর’ কোনওটাতেই মনে হয় না আমি আর কাঁচি চালাতে পারতাম।
আশুতোষের আগের ছবি ‘জোধা আকবর’য়ে হৃতিক।
আচ্ছা, ‘লগান’য়ের কথাই যখন উঠল তখন একটা প্রশ্ন করি। ওই রকম একটা হিটের পর আর আমির খানের সঙ্গে কাজ করলেন না কেন? কোনও ঝামেলা হয়েছিল?
একেবারেই না। এক একটা সিনেমায় এক এক জনকে মানায়। ‘লগান’য়ে আমিরকে মানাত। ‘স্বদেশ’য়ে শাহরুখকে। তেমনই ‘জোধা আকবর’য়ে হৃতিককে। ‘মহেঞ্জো দাড়ো’তে আবার হৃতিককে ছাড়া ভাবতে পারছি না। তাই ওকেই নিয়েছি। সেই ভাবেই কাস্ট করা হয়। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনও ব্যাপারই নেই।
সে না হয় না থাকল। কিন্তু অনেক ইন্টারভিউতে আপনাকে স্ত্রী আর বোনের কথা বলতে শুনেছি। ‘এভারেস্ট’য়ের গল্পে কি সেই ব্যক্তিগত ছাপ রয়েছে? এটাও তো এক স্ট্রং মহিলার গল্প...
সেটা তো ভেবে দেখিনি। ভাল বলেছেন, হয়তো সাবকনশাসে কোথাও থেকে গিয়েছে। হ্যাঁ, সত্যিই আমার স্ত্রী আর বোন, জীবনের অনেক সিদ্ধান্ত নিতেই সাহায্য করেছে। ইনফ্যাক্ট এখন তো অনেক ডিসিশন ওদেরকে না জানিয়ে নিইও না। ‘এভারেস্ট’য়ের গল্পটা একটা মেয়েকে নিয়ে যে বাবার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এভারেস্ট জয়ে রওনা হয়। আসলে সবার জীবনেই অনেক বাধা বিপত্তি আসে। বেশি বড় বাঁধাকে আমরা ‘হিমালয়ান টাস্ক’ বলি না। সেই সব বাধাবিপত্তি কাটিয়ে ওঠার গল্পই হল ‘এভারেস্ট’।
তা আপনার নিজের জীবনে ‘এভারেস্ট’টা কী?
(হেসে) এখন তো মনে হয় শোয়ের সাকসেস। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে সবাই। এভারেস্টের বেস ক্যাম্পেও শ্যুটিং করেছি আমরা। তিরিশ দিন ধরে বারো হাজার ফুট উঁচুতে মাইনাস সিক্স ডিগ্রিতে শ্যুট করেছি। সবাই নিজের একশো পার্সেন্ট দিয়েছে। যদি দর্শকের মনে ধরে, তা হলেই আমার ‘এভারেস্ট’ বিজয় হবে (হাসি)।
এর আগে কখনও এভারেস্টে গিয়েছেন? বা মাউন্টেনিয়ারিং করেছেন?
স্পোর্টসে আগ্রহটা ছিলই। কিন্তু মাউন্টেনিয়ারিং কখনও করিনি। পাঁচ হাজার ফুটের উপরে ওঠা এই প্রথম। আর শুধু তো পাহাড়ে চড়া নয়। একেবারে খোদ এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছনো। টেন্টে থাকা। খাওয়া বলতে শুধু নুডলস্। কাস্ট আর ক্রু-ও অসম্ভব পরিশ্রম করেছে। রোজকার প্রোডাকশনের কাজ ছেড়ে একেবারে এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। হাত ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে, তাও সেই হাত দিয়েই মেক আপ করাতে হচ্ছে! ভাবুন একবার।
‘মহেঞ্জো দাড়ো’র শ্যুটও তো একই রকম কঠিন হতে চলেছে...
একদম। ভুজ-এ শ্যুটিং করব। জানুয়ারিতে গরম নিয়ে অসুবিধা না হলেও সিন্ধু সভ্যতার সময়কে বোঝাতে অনেক খাটতে হবে। তবে আমার মনে হয় সেটা নিয়ে সমস্যা হবে না। ‘মহেঞ্জো দাড়ো’র স্টান্ট ডিরেক্টর হিসেবে গ্লেন বসওয়েলকে পাচ্ছি। ‘ম্যাট্রিক্স’, ‘হবিট’, উলভারিন’য়ের মতো হলিউড ছবির স্টান্ট কো-অর্ডিনেটর ছিল গ্লেন। ভিএফএক্স সুপারভাইজ করছে ক্যারেন গৌলিখাস। তাই টিম নিয়ে ভাবছি না।
কিন্তু আবহাওয়া আপনাকে সেই ‘লগান’ থেকেই বিপদে ফেলছে...
হা হা হা। তা যা বলেছেন। সেটা নিয়েই একটু চিন্তায় আছি। তবে ‘এভারেস্ট’য়ের শ্যুট যেভাবে উতরে গেল, তারপর মনে হয় না ‘মহেঞ্জো দাড়ো’ নিয়ে সমস্যা হবে (হাসি)।
আচ্ছা শেষ প্রশ্ন করি, আপনার শেষ দু’টো ছবি বক্স অফিসে একেবারেই দাগ কাটেনি। প্রায় চার বছর পর আবার কিছু প্রোডিউস করছেন। একটু ভয় ভয় লাগছে?
দেখুন, টিভি হোক কী সিনেমা, অ্যাংজাইটি একটা থাকেই। সেটা আছে। আর আমার মনে হয়, সেটা স্বাভাবিকও। সিনেমায় ভয় থাকে ইন্টারমিশনেই না দর্শক বেরিয়ে যায়। আর টিভিতে তো দর্শকের ভাল না লাগলে দশ মিনিটে চ্যানেল পাল্টে দেবে। মানসিকভাবে স্ট্রং থাকলেও রিজেকশনের ভয়টা আছেই। কিন্তু সেই ভয়টা কাটিয়ে ওঠাটাই তো একটা চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জটা নিলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy