Advertisement
০৭ মে ২০২৪

সাজপুরুষ

মেয়েদের মন ভোলাতে তো বটেই। নিজের জন্যও। লিখছেন অদিতি ভাদুড়ি।২০১৩-য় মুক্তি পাওয়া জাস্টিন টিম্বারলেকের ‘টোয়েন্টি টোয়েন্টি এক্সপেরিয়েন্স’ অ্যালবামে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল ‘স্যুট অ্যান্ড টাই’ গানটা। গানের শব্দগুলোর মতোই নানা রকমের অ্যাকসেসরিজের প্রতি জাস্টিনের ভালবাসা বিশ্বজোড়া জাস্টিন ফ্যানেদের জানা।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

২০১৩-য় মুক্তি পাওয়া জাস্টিন টিম্বারলেকের ‘টোয়েন্টি টোয়েন্টি এক্সপেরিয়েন্স’ অ্যালবামে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল ‘স্যুট অ্যান্ড টাই’ গানটা। গানের শব্দগুলোর মতোই নানা রকমের অ্যাকসেসরিজের প্রতি জাস্টিনের ভালবাসা বিশ্বজোড়া জাস্টিন ফ্যানেদের জানা। ৩৩ বছরের এই সিঙ্গিং সেনসেশনের গানের মতোই জনপ্রিয় তাঁর কানের স্টাডস, আঙুলে নানান ধরনের আংটি, রিস্টব্যান্ড বা কাফলিঙ্কস। এগুলো না থাকলে জাস্টিনের প্রতি জাস্টিস করা যায় না।

সোনা নহি চাঁদি নহি...

সিলভার রিস্টব্যান্ড আর কানের স্টাড ছাড়া বলিউডের সলমন খানকেও কেমন যেন অচেনা লাগে। গায়ক, সদ্য রাজনীতিবিদ বাপ্পি লাহিড়িকে তো পুরুষদের অ্যাকসেসরাইজিংয়ের স্টাইল-আইকন বলা যায়। তবে অ্যাকসেসরি, তা সে হাতের হোক বা কানের, রিং হোক বা গলার চেন তা কিন্তু আর শুধু সোনা আর রুপোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

ডিজাইনার শর্বরী দত্ত, পুরুষদের পোশাক এবং গয়নার এক্সক্লুসিভ ডিজাইনার হিসেবেই যাঁর স্বীকৃতি, জানালেন সে কথা। “ছেলেদের অ্যাকসেসরির ভাবনাটা সেই ২০০০ সালে আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। ছেলেরা সব সময়ই গয়না পরে এসেছে। তাতে নতুনত্ব কিছু নেই। কী ভাবে পরছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।” তাঁর মতে ছেলেদের অ্যাকসেসরির ক্ষেত্রে প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ রয়েছে শার্ট বা শেরওয়ানির বোতাম নিয়ে। ধরুন সকালে অফিসে গিয়ে বোর্ড মিটিং করতে হবে আপনাকে। আবার ঠিক সন্ধেবেলাই একটা পার্টির নেমন্তন্নেও যেতে হবে। এক্সট্রা ড্রেস ক্যারি করবেন তা হলে? শর্বরী কিন্তু বললেন তার কোনও প্রয়োজনই নেই। শার্টের বোতামগুলোই এত স্টাইলিস্ট হবে, যে সান্ধ্য পার্টিতে তা সহজেই নজর কাড়বে অতিথিদের।

শুধু নয় বেল্ট-জুতো

শুধু বোতাম নয়, সাহসী হওয়া যায় টাই-পিন, ল্যাপেল-পিন নিয়েও। তবে শর্বরী দত্তর কথামতো অ্যাকসেসরাইজিং হওয়া উচিত অবশ্যই কোনও ডিজাইনারের মাধ্যমে। আপনার পছন্দ, চাহিদা অনুযায়ী একজন ডিজাইনারই কিন্তু সাজেস্ট করতে পারবেন কী ধরনের অ্যাকসেসরি ভাল মানাবে আপনাকে।

২০১৪-র জেন ওয়াই ছেলেরা নিজেদের সাজিয়েগুছিয়ে রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। সাহসী হয়ে নিজেদের অ্যাকসেসরাইজ করতেও পিছপা নন তাঁরা। যাদবপুর ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার আটর্স-এর অভিদীপ, রোহন, কিংশুকরা যেমন নিজেদের লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে দারুণ ভালবাসে। “আমরা পপ বা নিয়ন কালারের ব্যাগ ব্যবহার করি। জুতোরও যে কোনও শকিং রং খুব পছন্দ আমাদের। মেট্রো শপিং প্লাজা, নিউ মার্কেট বা সিমপার্ক মল-য়ে তো দারুণ সব বেল্ট, জুতোর কালেকশন আছে। সস্তার পুষ্টি। দামী তো কেনাই যায় চাইলে। কিন্তু পকেট মানিটাও তো ফ্যাক্টর,” বক্তব্য কিংশুকের।

ডিজাইনার অভিষেক দত্তের মতে, “কে কোথায় যাচ্ছে বা ইভেন্টটা কী সেই অনুযায়ী অ্যাকসেসরি চুজ করতে হবে। কলেজপড়ুয়া ছেলেরা ইদানীং যেমন খুব ব্যবহার করছেন স্লিং ব্যাগপ্যাক, মেসেঞ্জার ব্যাগ। ছেলেরা এখন দারুণ সব স্কার্ফও ব্যবহার করছে। ঠিক ভাবে ব্যবহার করলে হ্যাট বা ক্যাপ-ও কিন্তু দারুণ অ্যাকসেসরি হতে পারে।”

মেয়েরাই বা কেমন ভাবে দেখতে চায় ছেলেদের? কলেজপড়ুয়া রিমিতা বলে, “আমার তো দারুণ লাগে সাদা শার্ট আর ব্লু ডেনিমে ছেলেদের দেখতে। আর জুতোটা অবশ্যই খুব ভাল হতে হবে। জুতো দেখেও অনেক কিছু বোঝা যায় তো!”

শরীর যখন ক্যানভাস

শরীরী আলপনাতেও পিছিয়ে নেই জেন-ওয়াই ছেলেরা। তবে ট্যাটুর আলপনা নয়। এই আলপনা সূঁচ ফোড়ানো সৌন্দর্যের। গান শটে বা নিডলে মুহূর্তের মধ্যে শরীরের কিছু অংশ সেজে উঠছে অ্যাকসেসরির সাজে। সেই অ্যাকসেসরি হতে পারে ইয়াররিং বা বিডসের বডি জুয়েলারি, যা ছেলেদের চিরাচরিত সাজগোজকে সত্যিই এক অন্য মাত্রা দিচ্ছে। শ্রীরাম আর্কেডের বেসমেন্টে কিছু বডি পিয়ার্সিং পার্লারে ছেলেদের শরীর ফোঁড়ার হুজুগ সত্যিই বেশ বেশি। হ্যাপি এমনই এক পার্লারে বডি পিয়ার্সিং করছেন বেশ অনেক দিন হল। “ছেলেরা চিবুক, থুতনিতে, কানে পিয়ার্সিংটা বেশি করে। কেউ কেউ তো শরীরের প্রাইভেট পার্ট-এও পিয়ার্সিং করাতে চায়,” বলেন হ্যাপি। কিন্তু কোনও সমস্যা হয় না এতে? হ্যাপির দাবি, এখনও অবধি বিপজ্জনক কিছুই নাকি ঘটেনি। পিয়ার্সিংয়ের খরচ ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সেটা নিভর্র করে কোথায় আপনি পিয়াসির্ং করতে চাইছেন, তার ওপর।

বিপদের কথা মাথায় রেখে তথাকথিত অভিজাত কিছু পার্লার পিয়ার্সিং আপাতত পিয়ার্সিং বন্ধ রেখেছেন। এমনই এক এক্সপার্ট বিউটি সালোঁ-র তরফে মনোজ বললেন, “আমাদের এখানে বডি পিয়ার্সিং এক্সপার্টস নেই। আগে করাতাম। আপাতত বন্ধ রেখেছি। এক্সপার্ট না হলে আমরা করাই না। কোনও বিপদ হলে তো আমাদের দুর্নাম হয়ে যাবে।”

আর যাঁরা বডি পিয়ার্সিং করছেন, তাঁদের কী বক্তব্য? সেকেন্ড ইয়ার ইকনমিক্সের ছাত্র অভ্র বলে, “আমি যখন করালাম, তখন বাবা-মার মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্টে বেশ ধাক্কা লেগেছিল। আমি তো ওদের বোঝালাম, বিদেশে এটাই ট্রেন্ড। আর শুধু বিদেশই বা কেন! আমাদের স্টারেদের দেখুন না। আমার তো বেশ লেগেছে। ইচ্ছে আছে আরও পিয়ার্সিং করানোর।”

ইশ্‌টাইল

• চশমার ফ্রেম নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। রকমারি রঙের দু’তিনটে চশমা বানিয়ে রাখুন। ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচ করে পরলে এগুলোই আপনার সাধের অ্যাকসেসরি হয়ে উঠতে পারে।

• লুজ কিছু বেল্ট কিনে রাখুন ঘড়ির সঙ্গে পরার জন্য। এ ভাবে ঘড়িকে কাস্টমাইজ করেও পরা যায়।

• শুধু লোফার্স নয়, কিনে রাখুন কয়েক জোড়া বোট শুজও।

• বেশ রংচঙে হতে চাইলে কিনে রাখতে পারেন পপ কালারের কিছু গ্রাফিক সিলিকন স্ট্র্যাপ ওয়াচ। বদলে বদলে পরতে পারেন।

• নিউ মার্কেট, সিমপার্ক মল ঘুরে পেয়ে যাবেন রেনবো কালার রিং। আপনি যদি একটু অন্য রকম স্টাইল স্টেটমেন্ট করতে চান, অনায়াসে আঙুলে গলিয়ে নিতে পারেন এই আংটিগুলো। এই নন-মেটালিক আংটিগুলো দেখতেও বেশ সুন্দর।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

শুধু এতেই শেষ নয়। অভিষেক আরও জানালেন ইভনিং পার্টিতে হ্যাটস, পাঙ্ক ইন্সপায়ার্ড লেদার রিচ প্যান্টস, রিস্ট ব্যান্ড বা মেটাল ইয়ার স্টাড নিয়ে এখন হামেশাই এক্সপেরিমেন্ট করছেন ছেলেরা। চিরাচরিত ব্ল্যাক-ব্রাউন প্যান্টস ছাড়াও প্যাস্টেল শেডের বিভিন্ন কনট্রাস্ট রঙের প্যান্টস-এর ফ্যাশনেও বেশ সাহসী হয়ে উঠছেন ছেলেরা। বেল্টের বাকল নিয়েও যেমন প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। এনগ্রেভড বাকলের তো ইদানীং দারুণ কদর! আর এই সব পোশাকের সঙ্গে ঠিকঠাক একটা ঘড়ি যদি টিম আপ করা যায়, তা হলে কিন্তু তার থেকে ভাল অ্যাকসেসরি আর কিছুই হতে পারে না। অভিষেকের মতে ক্লাসি রিস্ট ওয়াচ এখনকার ইয়াং ছেলেরা দারুণ ভাবে পরছে। স্টাইলের দিক থেকে সেরামিক, টাইটেনিয়াম ঘড়ির এখন কদরই আলাদা। পরতে পারেন ডাল ম্যাট ফিনিশ সিলভার ঘড়িও বা ব্রাশ মেটালের তৈরি ঘড়িও। ট্র্যাডিশনাল সিলভার-গোল্ড ঘড়ি কিন্তু স্টাইলিশ ছেলেদের পছন্দের তালিকায় খুব একটা জায়গা পাচ্ছে না।

কেতাবাজ রে...

শুধু ঘড়ি বা পোশাকই নয়, পছন্দসই স্টাইলিশ জুতো ছাড়া কিন্তু ছেলেদের অ্যাকসেসরি একেবারেই অসম্পূর্ণ। অভিষেক বললেনও সে-কথা। “এখন যে কনকোয়েস্ট বা হাই হিলড অ্যাঙ্কল শুজ পাওয়া যায় সেগুলো ইয়াং ছেলেরা আউটিংয়ে যেতে বা পার্টিতেও খুবই পরছে। দে কাম উইথ লিটল বিট অব গ্রাফিক্স। এ ছাড়াও অনেক জুতো যেগুলো ফেব্রিকের তৈরি, লেদারের নয়, সেগুলোও পরতে খুবই আরামদায়ক হয়। আর লোফার্স তো আছেই।”

শহরের যে কোনও শপিং মল হোক বা ভাল কোনও জুতোর দোকান, বোট শুজ পেয়ে যাবেনই। বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটগুলোতেও নানা ডিজাইনে, রঙে এই বোট শ্যু এখন স্টাইলিস্ট ছেলেদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে। এমনই এক দোকানের সেলসম্যান সাব্বির জানালেন, “বোট শু্য বিশেষত অল্পবয়সী ছেলেরা প্রচুর পরছেন। পছন্দমতো দামে পেয়ে যাবেন। আর খুব স্টাইলিশ।” বোল্ড হোক বা সফ্ট নানান রঙা এই জুতোগুলোর জনপ্রিয়তা বিশ্বজোড়া। ছেলেদের স্টাইল স্টেটমেন্ট সুন্দর এক জোড়া বোট শ্যু ছাড়া তাই অসম্পূর্ণ।

শেষ পাতে ব্যাগের কথা না বললেই নয়। অফিস যাওয়ার চিরকালীন সেই অ্যাটাচি বা ব্রিফকেস নয়, ছেলেদের ব্যাগেরও এখন রকমারি বাহার! তেমন কিছু সাজগোজ না করেও একটা চটকদার ব্যাগ ক্যারি করলে কিন্তু আপনার গেট-আপটাই পাল্টে যাবে এক লহমায়। ব্র্যান্ডেড ব্যাগ তো আছেই। নন-ব্র্যান্ডেড ব্যাগের বাহারও তো কম কিছু নয়। গ্রিন, ব্রাউন, ব্লু রঙের স্লিং, স্লিম ল্যাপটপ ব্যাগ অনায়াসে ক্যারি করতে পারেন। পপ কালারের ট্রেন্ডি ব্যাকপ্যাকও ইদানীং অনেকেই ক্যারি করছেন। বেশ একটা ফাঙ্কি স্টাইল তৈরি করা যায় এতে।

তুমুল এই গরমে যদি একটা সামারকুল রঙের টি-শার্টের সঙ্গে একটা পপ রঙের ছাতা নিয়ে রাস্তায় চলা যায়, তা হলে কিন্তু স্টাইলের ছোঁয়ায় গরমও পালাই পালাই করতে বাধ্য। কাজেই হেড-গিয়ার হোক বা আই-গিয়ার, টি-শার্ট হোক বা ফ্লোরাল প্রিন্টের হাওয়াইয়ান শার্ট নিজেদের অ্যাকসেসরাইজ করতে কতক্ষণ!

কী? জেন ওয়াইরা শুনছেন তো? চয়েজ ইজ অল ইয়োর্স।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

male outfits style statement aditi bhaduri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE