Advertisement
০৩ মে ২০২৪

হাইওয়ে ম্যান

সুস্মিতা সেনের বয়ফ্রেন্ড থেকে ‘হাইওয়ে’র নায়ক। একদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন রণদীপ হুডা। গরমের দুপুরে সুইমিং পুলের পাশে তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল অরিজিৎ চক্রবর্তী-রসুস্মিতা সেনের বয়ফ্রেন্ড থেকে ‘হাইওয়ে’র নায়ক। একদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন রণদীপ হুডা। গরমের দুপুরে সুইমিং পুলের পাশে তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল অরিজিৎ চক্রবর্তী-র

ছবি: কৌশিক সরকার

ছবি: কৌশিক সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

“একবার বলছ চশমা পরো। একবার বলছ চশমা খোলো। প্যান্টের সঙ্গেও এমনটাই করবে নাকি?” স্বভাবসিদ্ধ মজার ছলে এক চিত্রসাংবাদিককে বললেও, গলার স্বরে জাঠ মেজাজটা ফুটে ওঠে।

মিনিট পনেরো আগে অবশ্য এ কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না রণদীপ হুডা। থাকবেন কী করে! ওয়েফেয়ারার সানগ্লাস ছেড়ে দিন, জামা-কাপড় যে ঠিকঠাক অবস্থায় আছে এটাই বড় ব্যাপার। উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট নিয়ে একটা মিটে কলকাতায় এসেছিলেন। মিট শেষ করে গ্যালাক্সি হল থেকে পুল সাইডে আসতেই যে লাগল ঝাড়া ৪৫ মিনিট।

কোন মেয়েই বা আইএমডিবি-র ‘সেক্সিয়েস্ট মেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ তালিকার অন্যতম সদস্যের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ ছেড়ে দেয়!

কেরিয়ারের ‘হাইওয়ে’তে

“উফ্...,” এই শব্দটাই বের হল রণদীপ হুডার মুখ থেকে। সে কী! মহিলা ফ্যানদের এই অত্যাচার উপভোগ করেন না? “বয়েসটাও তো বাড়ছে,” হাসতে হাসতে বললেন তিনি। তবে কি পর পর সাফল্য বোহেমিয়ান জীবনযাত্রার পোস্টার বয়কে থিতু হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে? “না না না... এখনও না। আমি সব সময়ই ভোলাটাইল। তবে একটা সময়ে সবাইকেই সেটল ডাউন করতে হয়,” বললেন তিনি। সিগারেটের শেষটা অ্যাশট্রেতে ফেলে যোগ করলেন, “আই ডু ওয়ান্ট টু গিভ আ ফ্যামিলি টু মাই পেরেন্টস।”

শেষ কয়েক বছর তাঁর কেরিয়ারের গ্রাফ যে ভাবে বেড়েছে, তার তুলনা একমাত্র গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের সঙ্গে করা যেতে পারে। ‘মার্ডার ৩’, ‘বোম্বে টকিজ’, ‘হাইওয়ে’ পরপর তিনটে হিট। হাতে থাকা ছবিগুলোও চমকে দেওয়ার মতো। কর্ণ জোহরের ‘উংলি’, সলমন খানের সঙ্গে ‘কিক’ আর চার্লস শোভরাজের উপর আধারিত ‘ম্যয় অউর চার্লস’। বছর চারেক আগেও তাঁকে বলতে শোনা যেত, সিরিয়াস অভিনয়ে তাঁর কোনও উৎসাহ নেই। কিন্তু ‘বোম্বে টকিজ’য়ের দেব বা ‘হাইওয়ে’র মহাবীর ভাটি তো সিরিয়াস রোল? বেশ কিছুক্ষণ হেসে বললেন, “পরিবর্তনটাই তার মানে একমাত্র কন্সট্যান্ট। জোকস্ অ্যাপার্ট। আমি এখনও কিন্তু লাইটার রোলই করতে চাই। ‘হাইওয়ে’র রোলটা কী ডিপ্রেসিং! এই তো একটা কমেডির স্ক্রিপ্ট শুনলাম। এক কথায় হ্যাঁ বলে দিলাম। দেখুন সিনেমা কখনওই তো অভিনেতাদের মাধ্যম নয়। অভিনেতাদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ সিনেমায় বেশ শক্ত।”

শক্ত যে, সেটা রণদীপের থেকে আর কে-ই বা ভাল জানবে! ২০০১-এ মীরা নায়ারের ‘মনসুন ওয়েডিং’র পর চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে দ্বিতীয় ছবির জন্য। “অপেক্ষা করাটা কিন্তু ইচ্ছাকৃত। চাইনি, একজন আনট্রেনড্ অ্যাক্টর হিসেবে নিজেকে দুনিয়ার সামনে মেলে ধরতে। নাসিরুদ্দিন শাহের কাছে অ্যাক্টিংয়ের ক্লাস করলাম, থিয়েটার করলাম। তারপর এল ‘ডি’। ওটা একটা বড় ব্রেক ছিল। যদিও আমি তেমন ভাবে ক্যাপিটালাইজ করতে পারলাম না। ঠিক আছে, কোনও কিছু সহজে পাওয়া গেলে তো তার কোনও মূল্যই থাকে না। এখন ঠিক করেছি, না অনেক হয়েছে। মুভি স্টারদের যেমনটা করা উচিত, এ বার তেমনটাই করব। আবার মনে হয়, সেটা করতে গিয়ে অ্যাক্টিংয়ের থেকে আমি সরে আসছি না তো...”

সব সময় ইনসিকিওর্ড

কোনও দোটানার স্বর কি শোনা গেল তাঁর গলায়? “অভিনেতা হিসেবে আমি সব সময় ইনসিকিওর্ড। সব সময় ভাবি রোলটা আমি ঠিকঠাক ভাবে করতে পারব তো? এটা কিন্তু ভাল দিক। ইনসিকিওরিটি আরও বেশি করে এফোর্ট দেওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। ইনসিকিওরিটি হেল্পস্ অবসেশন।”

সেই অনুপ্রেরণা থেকেই রণদীপ ‘হাইওয়ে’র শু্যটের আগে ফরিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। গুজ্জরদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কারণ তাঁর চরিত্রটা এক গুজ্জর। “প্রত্যেক কমিউনিটির কিছু কিছু স্পেশালিটি থাকে। (হেসে) আপনাদের যেমন মিষ্টি। আমি জাঠ। জাঠ আর গুজ্জর ডায়ালেক্টে বেশ মিল থাকলেও, তফাতও থাকে। আমাকে তাই সব সময় মনে রাখতে হত, জাঠু না বেরিয়ে যায়,” বললেন রণদীপ।

‘ম্যয় অউর চার্লস’য়ের জন্যও প্রস্তুতির ত্রুটি রাখেননি। চার্লস শোভরাজের শরীরী ভাষা, কথা বলার ভঙ্গি, এমনকী সেই বিখ্যাত হাসিটাও রপ্ত করেছেন ইন্টারভিউ দেখে দেখে। “সিনেমায় কখনওই সব কিছু খাপে খাপে বসে যায় না। ‘হাইওয়ে’র ক্ষেত্রে সেটা হয়েছে। চরিত্র, প্লট, বক্স অফিস... সব কিছু ঠিকঠাক বসে গিয়েছে। আমার মতে তাই, যেটা ভাল লাগে তাই করতে হবে,” বললেন তিনি।

এটাই আমার মেডিটেশন

রণদীপ নিজে ইক্যুয়েস্ট্রিয়ানে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ছ’টা ঘোড়ার মালিক। প্রায়ই দেখা যায় মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মী রেস কোর্সে। ঘোড়ারাই কি তবে সেই ভাল লাগার জায়গা? ব্লেজার খুলে পাশে রাখতে ১৫ সেকেন্ড সময় নিলেন। এই পজও সাক্ষাৎকারের টাইট শিডিউলে বেশ অস্বস্তিকর। প্রশ্নটা অন্য ভাবে সাজিয়ে করব কি না ভাবতে ভাবতেই উত্তরটা এল, “অবশ্যই ঘোড়ারা আমার মনের কাছাকাছি। সিনেমার থেকেও।”

ছোটবেলায় ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ দেখে ক্লিন্ট ইস্টউডের ফ্যান হওয়ার পাশাপাশি ঘোড়ারও ফ্যান হয়ে গিয়েছিলেন রণদীপ। কিন্তু সিনেমার ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে রেস, পোলো ম্যাচ-এর জন্য সময় বের করতে পারেন? “কেউ যে কাজ করতে ভালবাসে, তার জন্য ঠিকই সময় বের করে নেয়। কারণ, সেটা করলে যে রিওয়ার্ডটা পাওয়া যায়, তার জন্য সব কিছুই ভুলে যেতে পারি। আমার কাছে ঘোড়ারাই আমার মেডিটেশন। সেটা অভিনয়ের সময়ও কাজে লাগে।”

এক্সপেরিমেন্ট মনের পুষ্টি

কাজে তো লাগেই। না হলে সমালোচকদের পছন্দের পাত্র কেন হয়ে উঠবেন। বা পর পর এমন বড় মাপের ছবির অফারই বা আসবে কেন? সলমনের সঙ্গে ‘কিক’য়ে অভিনয় করা যদিও তাঁর মতে ‘হঠাৎ পড়ে পাওয়া’। “আমি সব সময় সলমনের থেকে ইন্সপায়ার্ড হই। ও সত্যিকারের একজন সুপারস্টার। কোনও কিছুকে তেমন পাত্তা দেয় না। ও যা সেটাই দেখায়,” বলছিলেন রণদীপ।

অনেক দিন থেকেই ‘লেডিজ ম্যান’ হিসেবে পরিচিত রণদীপ হুডা। ‘বোম্বে টকিজ’য়ে সমকামী চরিত্রে অভিনয় তাতে ভাঁটা ফেলেনি। সহ-অভিনেতার ঠোঁটে চুমু খাওয়া নিয়ে কোনও ট্যাবু তাঁর নেই। বললেন, “সাকিব (‘বোম্বে টকিজ’য়ের সহ-অভিনেতা) প্রথমে একটু নার্ভাস ছিল। আমার নিজের কখনও আনকমফর্টেবল লাগেনি।” অনেকেই তাঁকে এই চরিত্রটা করতে মানা করেছিলেন। কিন্তু কর্ণ জোহরের কথায় রাজি হয়ে যান। “কর্ণ যেটা চায়, সেটাই বের করে আনতে পারে। আর ব্যাপারটা তো কোনও সস্তার বাজিমাত ছিল না। চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট তো করতেই হবে। ওটাই তো মনের পুষ্টি। নতুন রকমের চরিত্র করব না কেন?” প্রশ্ন রণদীপের।

হ্যাংওভারটা এড়িয়ে

এক্সপেরিমেন্ট তিনি অনেক করেছেন। একসময় বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়েছেন পুরোদমে। মদ্যপ অবস্থায় হাউজ পার্টি থেকেও বের করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু এখন? “হ্যাংওভার এড়ানোর ট্রিকটা শিখে গিয়েছি,” বললেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি এ রকম। বহু বার স্কুল কেটেছেন। বন্ধুদের নেশা করার সরঞ্জাম জোগাড় করে করেছেন। যদিও তাঁর অভিনয় প্রতিভা নিয়ে কোনও দিনই অভিযোগের আঙুল ওঠেনি।

“কোনও ঘটনার জন্য অন্যকে দায়ী করা যায় না। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তার জন্য তো আমিই সব সময় দায়ী। আমার খারাপ সময়ের জন্য আমি নিজেকেই দায়ী করি। কিন্তু এখন লোকে আমাকে চেনে। অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছি সব সময়। বলিউডি সিনেমাও তো অন্য ভাবে বেড়ে উঠছে। আমিও অভিনেতা হিসেবে বেড়ে উঠছি। সব কিছু যদি সহজেই হয়ে যেত, তা হলে তো তার মূল্যই দিতাম না,” বললেন রণদীপ।

কলকাতা কিন্তু রণদীপকে আর এক ভাবেও চেনে। সুস্মিতা সেনের সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছরের সম্পর্ক দিয়ে। সে কথা তুলতেই আর একবার মহাবীর ভাটি-কে দেখা গেল, “কীসের সম্পর্ক! এখন তো কোনও সম্পর্ক নেই। এমন একটা সম্পর্কের কথা বলছেন যেটা সাত বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন ওটা রেলিভ্যান্ট নয়।” সেই ‘পুরনো’ সম্পর্ক প্রাসঙ্গিক না হোক, সম্পর্কটা কত বছরের পুরনো, সেটা বলতে কিন্তু দু’সেকেন্ডও লাগল না রণদীপের।

কলকাতা মানে তাঁর কাছে শুধু মিষ্টির কথাই নয়...বোঝা গেল...!

• বয়স: ৩৭

• উচ্চতা: ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি

• জন্ম: রোহটাক, হরিয়ানা

• অভিনয়ের আগে: রেস্তোরাঁর ওয়েটার, ট্যাক্সি ড্রাইভার

• পরিচিতি: ‘ডি’, ‘মার্ডার ৩’, ‘বোম্বে টকিজ’, ‘হাইওয়ে’

• সময় পেলেই: মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মী রেস কোর্স, পোলো ম্যাচে যোগদান

• রিলিজ করবে: ‘উংলি’, চার্লস শোভরাজের ভূমিকায় ‘ম্যয় অউর চার্লস’, সলমন খানের সঙ্গে ‘কিক’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arijit chakraborty ranadip huda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE