গরমের সময়েই কেবল ডেঙ্গি হয়, তা নয়। এই ভাইরাস এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, তাপমাত্রার সামান্য হেরফেরেই তাদের সক্রিয়তা আরও বাড়ছে। হালকা ঠান্ডার আমেজ পড়তেই এর বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যত ক্ষণ পর্যন্ত না জাঁকিয়ে শীত পড়ছে, তত ক্ষণ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ অব্যাহতই থাকবে।
ডেঙ্গি মশার বাহক এডিস ইজিপ্টাই দু’ভাবে রোগ ছড়ায়। প্রথমত, ডেঙ্গি রোগীর রক্ত খাওয়ার পর মশার শরীরে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি ঘটে। এর আট থেকে দশ দিন পরে সেই মশা যদি কোনও সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তা হলে তাঁর শরীরেও ভাইরাস ঢুকে যায়। দ্বিতীয়ত, ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানোর পর পরই যদি মশা কোনও সুস্থ ব্যক্তির রক্ত খায়, তা হলে তিনিও পাঁচ থেকে ছ’দিনের মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
শুধু জ্বর নয়, লক্ষণ দেখা দেয় আরও
ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হলেই পেটে ব্যথা, বার বার বমি হওয়া, অস্থিরতা দেখা দেয়। চোখে ব্যথা, গায়ে র্যাশ বেরোতে পারে। রক্তে প্লেটলেট কমতে শুরু করে। ছোটদের পেট ব্যথা, ডায়েরিয়া, ঘন ঘন বমি হয়। ডেঙ্গিতে গাঁটে গাঁটে ব্যথা খুব ভোগাবে। পেশির খিঁচুনি হতে পারে।
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা ডেঙ্গি জ্বরের একটি লক্ষণ। সেই সঙ্গেই মাড়ি ও নাক থেকে রক্ত বার হচ্ছে কি না, তা খেয়াল করতে হবে। বমির সঙ্গে যদি রক্ত বেরোয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। মলের সঙ্গেও রক্ত বার হতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হবে। ডেঙ্গি হেমারেজিক জ্বরে রক্তক্ষরণ বেশি হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে বিপদ ঘটতে পারে।
প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা
ডেঙ্গি হয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে মূলত তিনটি পরীক্ষা করা হয়। ডেঙ্গি নির্দিষ্ট এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন, আইজিএম অ্যান্টিবডি এবং আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। জ্বর হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করালে পজিটিভ পাওয়া যায়। আইজিজি অ্যান্টিবডি আসে ডেঙ্গি সংক্রমণের অন্তত একমাস পর। এলাইজা পদ্ধতিতে এই পরীক্ষাগুলি করা হয় এবং এই সব কটি পরীক্ষাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) স্বীকৃত।
সতর্কতা
ডেঙ্গি সন্দেহ হলে যত শীঘ্র সম্ভব পরীক্ষাগুলি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
মশারির ব্যবহার আবশ্যিক। প্রচুর জল খেতে হবে। বারে বারে অল্প করে খাবার খেতে হবে। তেলমশলা দেওয়া খাবার, বাইরের খাবার খাওয়া চলবে না।
তরল খাবার, গরম স্যুপ, ডিটক্স পানীয় বেশি করে খেতে হবে। কারণ ডেঙ্গি হলে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দেয়। তাই তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতেই হবে।
বাড়ির আশপাশ এবং ভিতরে জল জমতে দেবেন না। বাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ডেঙ্গিতে বুকে বা পেটে জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জ্বর হলে কোনও অবস্থাতেই নিজে চিকিৎসা করা বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত হবে না।