E-Paper

ভঙ্গুর হাড়ের সমস্যা

জন্মের পরেই বা খুব কম বয়সে হতে পারে এই সমস্যা। কী কী কারণে হতে পারে ভঙ্গুর হাড়ের সমস্যা? চিকিৎসাই বা কোন পথে? রইল বিশদে।

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৮:০৪

রিমা তাঁর সদ্যোজাত বোনকে কোলে তুলতে গেলেই সে কেঁদে ওঠে। তবে দেখা গেল, শুধু রিমা নয়, যখনই কেউ শিশুটিকে কোলে তুলতে যাচ্ছে, তখনই সে ডুকরে কেঁদে উঠছে! চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে জানা গেল, শিশুটির ‘ব্রিটল বোনস’-এর সমস্যা রয়েছে।

ব্রিটল বোনস হল এমন এক সমস্যা, যেখানে হাড় অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সাধারণ কাজ করতে গেলে বা কোনও ভাবে হালকা চাপ লাগলে কিংবা কিছু ক্ষেত্রে কোনও চোট ছাড়াই যখন-তখন হাড় ভেঙে যেতে পারে। অস্থিবিশেষজ্ঞ সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই সমস্যা মূলত দু’টি কারণে হয়—

  • জিনগত রোগ (অস্টিয়োজেনেসিস ইমপার্ফেক্টা)
  • অস্টিয়োপোরোসিস কিংবা জীবনধারা, খাদ্যাভাসের কারণে

জিন যখন দায়ী

অস্টিয়োজেনেসিস ইমপার্ফেক্টা বেশ বিরল রোগ। অস্থিবিশেষজ্ঞ অনিন্দ্য বসু বলছেন, “জিনগত খুঁতের জন্য কিছু ক্ষেত্রে হাড়ে কোলাজেনের মাত্রা কম থাকে। তার জেরে হতে পারে এই রোগ। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, জন্মের পর থেকেই চোখের সাদা অংশের রং নীলচে হয়। অল্প বয়স থেকে কিছু খেতে গেলেই দাঁত ভেঙে যাচ্ছে। জিনগত কারণের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ‘টাইপ টু অস্টিয়োজেনেসিস ইমপার্ফেক্টা’। এ ক্ষেত্রে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মৃত্যুও হতে পারে শিশুটির। যদি কোনও ভাবে শিশুটির জন্মও হয়, অসুস্থতার কারণে এক মাসের মধ্যে তার শরীরের হাড়গুলি ভেঙে যেতে থাকে। ফলে তাঁকে বাঁচানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।”

চিকিৎসকের মতে, সন্তানের জন্মের আগেই এই সমস্যা হতে পারে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা জরুরি। জন্মের পরে যদি দেখা যায় সদ্যোজাতের চোখের মণির সাদা অংশের রং নীলচে, হাড় ভঙ্গুর, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে— তা হলে সতর্ক থাকতে হবে। যদি বয়ঃসন্ধির সময়ে দেখা যায় হালকা কিছু খেতে গেলেও দাঁত ভেঙে যাচ্ছে বা কোনও চোট ছাড়াই হাড় ভেঙে যাচ্ছে, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এ রোগের নিরাময় সম্ভব না হলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে ব্যথা-কষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হল অল্প হাঁটাচলা এবং নিয়মিত শারীরচর্চা।

অন্য কারণেও

জিনগত সমস্যা ছাড়াও বেশ কিছু কারণে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। অস্টিয়োপোরোসিস এর মধ্যে অন্যতম কারণ। সাধারণত মহিলাদের মেনোপজ়ের পরে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫০-৫৫ বছর বয়সের পর থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও, স্টেরয়েড, অ্যান্টি এপিলেপ্টিক ড্রাগ, অ্যান্টাসিড, পেনকিলার দীর্ঘদিন ধরে খেলে হাড়ের উপরে তার প্রভাব পড়তে পারে। কিছু রোগ যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা বা স্থূলতা থাকলেও তার প্রভাব পড়ে হাড়ের উপরে। তাই এ ধরনের অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকেরা সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। এ ছাড়াও প্রভাব ফেলে অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস।

বুঝব যে ভাবে

  • এই রোগে বয়সের সঙ্গে কিছুটা কুঁজো হয়ে যান অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে আবার গায়ে-হাতে-পিঠে ক্রমাগত ব্যথা হতে থাকে। কাজ করলেই কব্জির কাছে ব্যথা, হাঁটাচলা করলেই পায়ে-গায়ে-গাঁটে ব্যথা লেগে থাকে।
  • দরকার হলে বোন ডেনসিটি স্ক্যান ও ফ্র্যাক্স (ফ্র্যাকচার রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুল) স্কোরও করতে হতে পারে।
  • অ্যালক্যালাইন, ফসফেটস, ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম লেভেল মাপার মতো রক্তপরীক্ষা নিয়মিত করালে কিছু ক্ষেত্রে ধরা পড়ে এই সমস্যা। অনেক সময়ে সাধারণ এক্স-রে করে বোঝা সম্ভব হয় না ব্রিটল বোনস রয়েছে কি না। সে ক্ষেত্রে এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করাতে হতে পারে।

চিকিৎসা সম্ভব?

কিছু বিশেষ ধরনের স্ক্রু, রডের সাহায্যে হাড়ের ভেঙে যাওয়া আটকানো সম্ভব। তবে এই রোগে সব সময়ে যে অস্ত্রোপচার করতে হবে, এমনটাও নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন রোগ নির্ণয়ের পরে অন্তত কিছুটা সময় সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললেও উপকার হয়। চিকিৎসক সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় এ-ও জানাচ্ছেন, কিছু ক্ষেত্রে জীবনধারায় বদল আনাও খুব জরুরি।

বয়স কম থাকতে ব্যায়াম করা, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি-৩ সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত নেওয়া, খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চললে ভঙ্গুর হাড়ের সমস্যা না-ও হতে পারে। ক্রমাগত গায়ে ব্যথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা যাবে না, মত চিকিৎসকদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bone Illness

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy