E-Paper

দন্তরুচিকৌমুদী

ঝকঝকে সুন্দর দাঁত পেলে হলে, শিশুকে একদম ছোট বয়স থেকেই এটির যত্ন নিতে শেখান। রইল পরামর্শ

অরিতা ধারা ভট্ট

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ০৯:২০

শিশুদের ঝকঝকে হাসি দেখলে কার না মন ভাল হয়। সুন্দর হাসির সঙ্গে সুন্দর দাঁতের গভীর সম্পর্ক। এখনকার বাচ্চারা ছোট থেকেই জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ত। তার ছাপ পড়ে দাঁতেও। বাচ্চার দাঁত তখনই ভাল হবে, যদি তাকে ছোট থেকে যত্ন নিতে শেখানো যায়। রোজকার হাইজিনের সঙ্গে ওদের দাঁতের যত্ন নেওয়ারও পাঠ দিন।

দাঁত উঠতেই নজর দিন

দুধের দাঁত পড়েনি। কিন্তু দাঁতের গোড়া কালো হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে ব্যথায় ভুগছিল প্রথম শ্রেণির ছেলেটি। প্রথমে তেমন আমল দেননি বড়রা। মনে করেছিলেন, দুধের দাঁত তো এমনিই পড়ে যাবে। কিন্তু মায়ের মনে ভয়টা থেকেই গিয়েছিল। চিকিৎসকের কাছে ছেলেকে নিয়ে যান। জানা যায়, ক্যাভিটি হয়েছে। ছোটবেলায় দাঁতের ঠিক মতো যত্ন না হলে সমস্যা হতেই পারে। ১০-১২টা দাঁতে ক্ষয়, মাড়ির সমস্যা কিন্তু একদম ছোট থেকেই দেখা যেতে পারে। চিকিৎসক পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “একদম ছোট বাচ্চারা কুলকুচি করতে পারে না, তাই দুধ বা যে কোনও খাবার খাওয়ার পরে ওদের একটু জল খাওয়াতে হবে। তাতে প্রাথমিক ভাবে দাঁত ধুয়ে যাবে। সন্তান আর একটু বড় হলে ফলের রস বা সিপার গ্লাসে দুধ খাওয়ার পরে কুলকুচি, শক্ত খাবারের পরে দাঁত পরিষ্কার, রাতে ঘুমোনোর আগে আর সকালে উঠে ব্রাশ করতে শেখানোটা খুবই জরুরি। উপর থেকে নীচে আবার নীচ থেকে উপর, এই পদ্ধতিতে ব্রাশ করতে হয়। তাতে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বা আঠালো কিছু থাকলে বেরিয়ে যাবে।” দুধে চিনি থাকলে তা আঠাজাতীয় হয়, এতে দাঁতে প্রভাব ফেলে। তাই দুধ বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার পর কুলকুচি করলে দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।

সুষম খাবারের অভ্যাস

মায়ের গর্ভেই বাচ্চাদের দাঁতের গঠন শুরু হয়। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পুষ্টির ঘাটতি থাকলে, জ্বর বা সংক্রমণ হলে তার প্রভাব পড়ে ভ্রূণের স্বাস্থ্যেও। তাই অন্তঃসত্ত্বা মাকেও তার খাদ্যাভ্যাসে নজর দিতে হবে। আবার সন্তান বড় হওয়ার সময়েও বাবা-মায়ের খাওয়া দেখে শেখে। পরিবারের সকলে সুষম খাবার খেলে, সেটাই অভ্যাস হয়ে যায়। আপেল, পেয়ারার মতো ফল কামড়ে খাওয়া ভাল। একবার খাওয়াদাওয়ার পর মুখ ধোয়া, দাঁত পরিষ্কারের অভ্যেস তৈরি হয়ে গেলে, নিজেই যত্ন নিতে শিখে যাবে ছেলেমেয়েরা।

মিষ্টি থাকুক সাবধানে

বাড়িতে অতিথি এলে ছোটদের জন্য চকলেট নিয়ে আসে। অনেক সময়ে ছোট পরিবারে তা ভাগ করে খাওয়ার সুযোগও থাকে না। সে ক্ষেত্রে সন্তানকে বোঝাতে হবে, চকলেট এক দিনে বেশি খাওয়া নয় আর খেলেও তার পরে মুখটা একবার ধুয়ে নিতে হবে। “অনেক সময়েই ছোটরা কিছু খেতে না চাইলে বিস্কিট দেওয়া হয়। বাচ্চাকে জলখাবারে দুধের সঙ্গে তিন-চারটে বিস্কিট দেওয়া হয় অনেক বাড়িতেই। বিস্কিটে রিফাইনড সুগার থাকে। ফলে শুধু ক্রিম বিস্কিট, কুকিজ় নয়, সাধারণ বিস্কিটেও লুকিয়ে থাকে ক্ষতিকর উপাদান। এ ক্ষেত্রেও মুখ ধোয়াই একমাত্র সমাধান। মধু, গুড় খেলেও তাই করতে হবে,” বললেন ডা. গঙ্গোপাধ্যায়। স্কুলে টিফিন খাওয়ার পর সন্তানকে কুলকুচি করতে বলবেন, নিদেনপেক্ষে যেন জল খেয়ে নেয়।

এখন নানা কারণে শিশুদের শরীরের বাড়বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হচ্ছে। দাঁত পড়া ও ওঠার সময়ও এগিয়ে এসেছে। আর এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার, যাতে সমস্যা হলে গোড়াতেই আটকানো যায়। অনেকের দাঁত পড়তে বা উঠতে সময় নেয়। সন্তানের পাঁচ-ছ’বছর বয়স হলে একবার দন্তচিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করিয়ে নিলে ভাল। তার আগে যদি কোনও সমস্যা দেখা যায়, তা হলে দ্রুত যোগাযোগ করুন চিকিৎসকের সঙ্গে। ছোটদের পেস্টও কিন্তু আলাদা হয়, তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে ওদের জন্য টুথপেস্ট নির্বাচন করুন। ব্রাশের ক্ষেত্রেও নরম ব্রিসল দেওয়া ব্রাশ দেবেন ছোটদের। ছ’-সাত মাস অন্তর ব্রাশ বদলে ফেলতে হবে।

দাঁতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আত্মবিশ্বাস। আর ঝকঝকে হাসি দেখতে কার না ভাল লাগে। তাই সন্তানকে ছোট থেকেই দাঁতের যত্ন নেওয়া শেখান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Teeth

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy