১১ মে ২০২৪
Health

Obesity: স্থূলতা রুখতে অবিলম্বে সচেতনতা বাড়াতে হবে, নইলে বিপদ

যখন শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমানে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয়, তখন শরীরের সেই বিশেষ অবস্থাকেই স্থুলতা বা ওবেসিটি বলে চিহ্নিত করা হয়।

স্থূলতা কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারে অচিরেই

স্থূলতা কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারে অচিরেই

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:২৮
Share: Save:

ঘরে বসে কাজ করা থেকে বদলে যাওয়া জীবনযাপন, খাওয়া-দাওয়ায় বদল থেকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ — কারণ যাই হোক না কেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ওবেসিটি। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে স্থূলতার সমস্যা প্রতি ঘরে ঘরে। এর কারণ কী? কোন কোন শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে এই স্থূলতা? কী ভাবেই বা এর হাত থেকে মুক্তি পাবেন? আলোচনায় আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক বিজয়া অগ্রবাল।

ওবেসিটি অর্থাৎ স্থূলতা কী? কী কারণে এই স্থূলতা হয়?

যখন শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমানে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয়, তখন শরীরের সেই বিশেষ অবস্থাকেই স্থূলতা বা ওবেসিটি বলে চিহ্নিত করা হয়। স্থূলতা আসলে পুষ্টির অভাব। প্রত্যেক মানুষের শরীরেই তাঁর ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন হয়। শরীর যখন সেই পরিমাণ পুষ্টি না পায়, তখনই এই স্থূলতার সমস্যা দেখা যায়। স্থূলতা — চলতি ভাষায় মোটা হয়ে যাওয়া।

এই মোটা হয়ে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। ফাস্ট ফুড, ঠাণ্ডা পানীয় বা অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে, শারীরিক পরিশ্রম না করা কিংবা কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মানসিক অশান্তি ইত্যাদি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বংশ পরম্পরায় জিনগত কারণে বা হরমোন গ্রন্থির গণ্ডগোলের কারণে মানুষ মোটা হতে থাকে।

পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্থূলতার হার প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বিগত ২০ বছরে যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই স্থূলতা বৃদ্ধির হার তুলনামুলকভাবে কম। ২০২০-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের স্থূলতার হার প্রায় ১০ শতাংশ।

স্থূলতার লক্ষণগুলি কী কী?

প্রাথমিকভাবে স্থূলতার লক্ষন হল ক্রমাগত ওজন বেড়ে যাওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক স্তরে এগুলিকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে পরবর্তী সময়ে এটিই ভয়াবহ আকার নিতে পারে। মনে রাখতে হবে, এই রোগ আক্রান্ত হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। ৫ বছরের শিশু থেকে সত্তোরোর্ধ্ব বৃদ্ধ, প্রত্যেকের শরীরে যে কোনও সময়ে বাসা বাঁধতে পারে এই রোগ। ওজন বেড়ে যাওয়া বা শারীরিক প্রস্থ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় এই রোগের ক্ষেত্রে। যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য গাঁটে ব্যথা, কিছুক্ষণ হাঁটলে বা কাজ করলেই নিঃশ্বাসে সমস্যা, হঠাৎ করে শরীরে কোলেস্টরল বেড়ে যাওয়া, বার বার খিদে পাওয়া ইত্যাদি।

কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা পরামর্শ নিতে হবে?

মনে রাখতে হবে, স্থূলতা কিন্তু জরুরি অবস্থা নয়। ঘরের চার দেওয়াল ভেতরে থেকেই এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্ভব। তবে হ্যাঁ, স্থূলতার ফলে বেড়ে চলা বিভিন্ন উপসর্গগুলিকে সামাল দেওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি। তবে সব কিছুর আগে যে বিষয়টিতে মূলত নজর দেওয়া প্রয়োজন, সেটি হল শরীর ঠিকমতো পুষ্টি পাচ্ছে কিনা, তা দেখা।

স্থূলতার ফলে কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে?

প্রথমেই বলেছি, স্থূলতা কিন্তু শারীরিক সমস্যার উৎস মাত্র। এর থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। একটু সহজ ভাবে বললে শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় পুষ্টি না পেলে যে যে সমস্যা দেখা দেয়, স্থূলতার ক্ষেত্রে সেই সমস্যাই দেখা দেয়। বরং বলা যায়, স্থূলতার কারণে বেশ কয়েকটি রোগ মারাত্বক আকার নেয়। যেমন - হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা মধুমেহ, শ্বাসকষ্ট, আর্থারাইটিস বা বাতের ব্যথা ইত্যাদি এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

স্থূলতা থেকে মুক্তির পথ কী?

এর প্রথম ও দ্বিতীয় উত্তর হল সচেতনতা। আমাদেরকে সচেতন হতেই হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে সরকারকেও। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া, সঠিক খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা, হাঁটাহাটি, খেলাধুলা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এবং এই সমস্ত কিছু শুরু করতে হবে ছোট বয়স থেকেই। এগুলি যেন অভ্যেস হয়ে দাঁড়ায়। লকডাউনের কারণে এমনিতেই ঘরে বসে কাজ করার ফলে অনেকগুলি শারীরিক অসুস্থতা বেড়েছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ঘরে বসেই হালকা ব্যয়াম বা শরীরচর্চা করা যেতে পারে। খাবার খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা আবশ্যিক। ফাস্ট ফুড বা ভাজা বা মশলাদার খাবার যত কম খাওয়া যায়, তত ভাল। সেই সঙ্গে সরকারকেও দায়িত্ব নিয়ে খেলাধুলা বা শরীরচর্চার মতো জায়গাগুলি তৈরি করে দিতে হবে। আমি মনে করি, সুস্থ রাখতে ফাস্ট ফুডের দোকানগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত। সর্বোপরি সচেতনা বাড়াতে হবে। তবেই রেহাই মিলতে পারে এই রোগ থেকে।

এই প্রতিবেদনটি আমরি হসপিটালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Obesity AMRI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE