গত বছর মার্চ মাসে তৈরি ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুড্লসের প্যাকেটের একটি ব্যাচ দেশের বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিল উত্তরপ্রদেশের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দফতর ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই খবর দিয়ে বলেছে, নেস্লে ইন্ডিয়ার তৈরি ওই ব্যাচের নুড্লসের প্যাকেটে মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকার কারণেই তা বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই প্যাকেটগুলিতে মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি যা আজিনোমোটো নামেই পরিচিত) রাসায়নিকও অনুমোদিত মাত্রার থেকে বেশ রয়েছে বলে অভিযোগ।
সংস্থাটির তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, যথাযথ গুণমান বজায় রেখেই তারা নুড্লস তৈরি করে। তা ছাড়া, তাতে আলাদা ভাবে মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা গ্লুটামেট ব্যবহার হয় না। সংস্থার আরও বক্তব্য, যে সময়ে তৈরি নুড্লসের প্যাকেট তুলে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি হয় ইতিমধ্যেই খাওয়া হয়ে গিয়েছে, না হয় ব্যবহারের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে।
নুড্লসের ওই প্যাকেটগুলিতে অতিরিক্ত সীসা ও আজিনোমোটোর উপস্থিতি জানা গেল কী ভাবে?
উত্তরপ্রদেশ এফডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, সংশ্লিষ্ট ব্যাচের দু’ডজন প্যাকেট রাজ্য সরকার পরিচালিত ল্যাবরেটরিতে রুটিনমাফিক পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, তাতে সীসার পরিমাণ ১০ লক্ষ ইউনিটে ১৭.২ ভাগ। যদিও আদতে তা ০.০১ থেকে ২.৫ ভাগের বেশি থাকার কথা নয়। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে সীসার পরিমাণ ৭ গুণ বেশি। পাশাপাশি, নুড্লসের স্বাদ বাড়াতে যে মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট যোগ করা হয়, তার পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। এফডিএ-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ডি জি শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুড্লসে বিপজ্জনক পরিমাণ সীসা এবং এমএসজি পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একাধিক বার নমুনাগুলি পরীক্ষা করেছেন। প্রতিবারই একই ফল পাওয়া যায়।’’ বিস্তারিত তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে উত্তরপ্রদেশ।
নুড্লসে মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকলে কী ক্ষতি হতে পারে? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘অতিরিক্ত সীসা থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে প্রবল নিউমোনিয়া হতে পারে। ফুসফুসের বায়ুথলির পর্দা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতাও কমে যায়।’’
এ দেশে ইনস্ট্যান্ট নুড্লসের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ দখলে রাখা নেস্লে ইন্ডিয়ার তরফে উত্তরপ্রদেশ এফডিএ-র পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে বলেই জানাচ্ছে রয়টার্স। সংস্থার এক প্রতিনিধি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘আমরা ম্যাগি নুড্লসে এসএসজি মেশাই না। ফলে নমুনায় এমএসজি পাওয়া গেলে তা প্রাকৃতিক কারণে তৈরি হয়ে থাকতে পারে। আর নমুনায় সীসা মেলাতেও আমরা বিস্মিত। কারণ, এই বিষয়টা নিয়মিত ভাবে কড়া নজরে রাখি।’’ শ্রীবাস্তব অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের প্রতিনিধিরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দোকান থেকে নুড্লসের প্যাকেট কিনেছেন। তার পর প্রতিটি প্যাকেট আলাদা ভাবে পরীক্ষা করে সীসা ও এমএসজি-র মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরেই জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy