শনির মহাদশার ফল- ভারতীয় জ্যোতিষ বিচারে শনিকে যোগী বা সন্ন্যাসীর চোখে দেখা হয়। আসলে কি তাই? সোজাসুজি বলতে গেলে শনি কর্মিক গ্রহ। শনি যেভাবেই বসে থাক না কেন, তার লক্ষ্য মানুষকে যে কর্মফলের মধ্যে ফেলা হয়েছে তা যেন সে ভোগ করে, পালাবার চেষ্টা না করে। এতে হিতে বিপরীত হবে-শনি জন্মছকে নিদির্ষ্ট ভাবে বসে সেই কথাটাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চায়। কর্মফল থেকে বাঁচতে আমাদের অনেক কিছু করার ইচ্ছা হয়। কিন্তু শনি বলে, তোমার এই জীবনে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। শনির কর্মফল থেকে বাঁচতে তাবিজ, কবজ, মাদুলি, রত্ন, শেকর-বাকর, ধ্যান, পূজাপাঠ, গ্রহপূজা, কোনও কিছুই কাজ করে না। একটাই রাস্তা, কর্মফলকে মেনে নিয়ে তা ভোগ করা। তাতেই শনি মহারাজ সন্তুষ্ট হবেন। শনি যে ভাবে বসে থাকে বা যে নক্ষত্রে বসে থাকে, সেই নক্ষত্র যে ভাবের দ্যোতক সেই ভাব কেন্দ্রিক কর্মফল দেবেই, সেটা ভাল না খারাপ জাতক/জাতিকা নিজেরাই বলবেন। কর্মফল মানে শুধু খারাপ ফল নয়। অনেক ভাল ফলও আছে। শনি শুভ ভাবে বসে থাকলে যে কর্মফল দশাকালে পাই, তা মনের দিক থেকে ভাল বলে মনে হয়, তাই ভাল। আর শনি যখন জন্মছকে দুর্বল ও অশুভ থাকে, তখন কষ্টভোগ করতে হয়। তখন শনির ফল খারাপ বলে মনে হয়। যার ভাগ্যে জাগতিক ভোগ, সুখ আছে তাকে ভোগ করতেই হবে। ন্যাকামো করে সেই সুখ ভোগ ত্যাগ করার চেষ্টা করলে শনি তাকেও ছাড়বে না। আবার কষ্ট ভোগ থেকে পালাবার চেষ্টা করলে ওই একই ফল বার বার ফিরে আসবে। যাদের বক্রী শনি জন্মছকে থাকে, তাদের একই ফল বার বার ভোগ করতে হয়। এই কথা পাশ্চাত্য জ্যোতিষে বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
শুক্রের মহাদশার ফল- শুক্র জাগতিক সুখভোগের কারক। জন্মছকে শুক্র শুভভাবে অবস্থান করলে বা শনি বা রবির সঙ্গে শুভ সংযোগে অবস্থান করলে আমরণ জাগতিক সুখভোগ হয়ে থাকে। তবে রবির সঙ্গে শুক্র জন্মছকে থাকলে জীবনের এক অংশে ভাল সুখভোগ হয়, কিন্তু একই জীবনে অপর অংশে তাকে কাঁদিয়ে ছাড়ে। যাদের জন্মছকে শুক্র শুভ ভাবে অবস্থান করে, কম্পিউটারে দক্ষ হয়। শুক্রের দশা-অন্তর্দশায় কম্পিউটার নিয়ে পড়ার সুযোগ আসে। অশুভ সংযোগে দুর্বল শুক্র জন্মছকে থাকলে, তার দশা বা অন্তর্দশায় রোগে কষ্ট ভোগে করতে হয়। সংসারকে দুঃখে ভাসিয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়।
আরও পড়ুন: বিংশোত্তরী দশা কী ভাবে বিচার করা হয় এবং এর থেকে কী জানা যায় (প্রথম অংশ)
আরও পড়ুন: বিংশোত্তরী দশা কী ভাবে বিচার করা হয় এবং এর থেকে কী জানা যায় (দ্বিতীয় অংশ)
রাহুর ও কেতুর মহাদশার ফল- জন্মছকে রাহু ও কেতু যে ভাবে বা ঘরে বা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই ভাবের বা ঘরের বা নক্ষত্রের অধিপতির শুভ বা অশুভর উপর রাহু ও কেতুর দশাফল বিচার করতে হয়। রাহু বা কেতু নিজে ভাল বা খারাপ নয়, যে ভাবে অবস্থান করে তার উপর নির্ভর করে রাহু ও কেতু ভাল বা খারাপ ফল দেয়। রাহু ও কেতু শনির মতোই চরম ভাবে কর্মিক গ্রহ। কেতু সায়নমতে যে ভাবে অবস্থান করে, সেই ভাব থেকে অনুমান করা হয় জাতক/জাতিকা কী অসমাপ্ত কর্ম তার অতীত জন্মে রেখে এসেছে। এই জীবনে তাকে সেই অসমাপ্ত ফেলে আসা কর্ম সমাপ্ত করতে হবে। আর রাহু যে ভাবে অবস্থান করছে, তা দেখে বলা হয়ে থাকে, এই জীবনে কী তার আসল কর্ম তাকে করতে হবে যা তার পরবর্তী জীবনে কাজে লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy