নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন। জামশেদপুরে। নিজস্ব চিত্র
সারদা কেলেঙ্কারির ছায়া এ বার প্রবাসীদের সাহিত্য সম্মেলনে!
মদন মিত্রের পর এ বার কে? সারদার টাকা লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ উঠল যাঁদের বিরুদ্ধে, তাঁদের পাশেই কেন দাঁড়ালেন বাংলার দিদি? তদন্তের আগেই অভিযুক্তদের নির্দোষ দাবি করে, তাঁদের সমর্থনে রাস্তায় নামতেও দ্বিধা করলেন না। এর পর তৃণমূলের কোনও তাবড় নেতা কিংবা মন্ত্রী গ্রেফতার হলে কি মমতা বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে জনগণের রায় নেবেন? সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় বঙ্গ। আর তার রেশ ছড়াল জামশেদপুরে আয়োজিত ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে’।
কয়েক হাজার প্রবাসী বাঙালির সমাবেশে উঠে এল সারদা প্রসঙ্গ। যদিও সম্মেলনের মঞ্চে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি আয়োজকেরা। তবে হাজার খানেক বাংলাছাড়া বাঙালির আলোচনা আর আড্ডায় বার বার উঠে এল সারদা অনুষঙ্গ। এটি নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি বছরই এই সম্মেলনের আয়োজন হয়। প্রবাসী বাঙালিদের ‘কুম্ভমেলা’ নামেই পরিচিত তিন দিনের এই সম্মেলন গত বছর হয়েছিল ইলাহাবাদে। সে বার উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ বারের সম্মেলনে জামশেদপুরেও আসার কথা ছিল তাঁর। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি।
এমনিতেই, বছরে এক বার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী বাঙালিরা একত্রিত হলে তাঁদের আলোচনায় বার বার ফিরে আসে পশ্চিমবঙ্গের হাল হকিকত। সমস্যা, রাজনীতির মতো নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনাও হয়। তবে কয়েক হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রবাসী সম্মেলনে আলোচনার নজির মোটেও খুব একটা নেই। সাহিত্য চর্চার সম্মেলনে সারদা-চর্চাই যে বাঙালিদের আড্ডার বেশিরভাগটা দখল করে রইল। সারদা-চর্চার আড্ডায় দিল্লির এক চিকিৎসক দাবি করলেন, বিভিন্ন রাজ্যে যে ভাবে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে, তার ঠিকমতো তদন্ত হলে অনেক রাজনৈতিক দলকেই খেসারত দিতে হতে পারে। বাংলার পরিবহণ মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে শাসক দলের মিছিলে ভোগান্তির কথা বললেন অনেকে। যানজটের জেরে অনেকেই যে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে পারেননি সে কথাও উঠে এল সমাবেশের বাইরের ধলভূম স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠের আড্ডায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অসমের পরিতোষ সিংহ, ওড়িশার নীতীশ কর্মকার, ঝাড়গ্রামের সনৎ রায়েরা জানালেন, সঞ্চয় করা টাকার অনেকটাই লগ্নি করেছিলেন সারদায়। এখন তাঁদের দাবি একটাই আরও বড় আন্দোলন চাই।
প্রবাসী বাঙালিদের সমাবেশে সারদার ছায়া যে পড়তে পারে তা খানিকটা আন্দাজ করেছিলেন সম্মেলনের সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ। রবিবার, অনুষ্ঠান শুরুর দিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে শোভাযাত্রায় জয়ন্তবাবু সাফ জানিয়েছিলেন, “নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে অন্য কোনও প্রসঙ্গ এই মঞ্চে আলোচিত হবে না।” তবে গোটা অনুষ্ঠানে কান পাতলে যে সারদা-চর্চা শোনা যাবে, তা বিলক্ষণ জানেন আয়োজকেরা। জয়ন্তবাবুর কথায়, “আমি নিরুপায়। এই প্রসঙ্গ উত্থাপনের কোনও সুযোগ দিলে উত্তেজনা ও ক্রোধ অন্য জায়গায় পৌঁছত। রাজনীতি ঢুকে পড়ত।” এই নিয়ে বাংলার কংগ্রেস নেতা তথা ওই সম্মেলনের আয়োজকদের অন্যতম প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “শুধু বাংলা কেন, সারদা নিয়ে তো সারা দেশই তোলপাড়। মানুষের মনে যে ক্ষোভ আছে এখানে তারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। তবে সংগঠক হিসাবে মনে করি, মঞ্চে নয়, এই আলোচনা ব্যক্তিগত স্তরেই থাকুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy