Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জিরো উপত্যকা, অসমের শুয়ালকুচি বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র

বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের চূড়ান্ত তালিকায় অরুণাচলের জিরো উপত্যকা, বমডিলার থেম্বাং গ্রাম, অসমের শুয়ালকুচি বস্ত্র শিল্প এবং শিবসাগরের মৈদামের নাম জুড়ল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের চূড়ান্ত তালিকায় অরুণাচলের জিরো উপত্যকা, বমডিলার থেম্বাং গ্রাম, অসমের শুয়ালকুচি বস্ত্র শিল্প এবং শিবসাগরের মৈদামের নাম জুড়ল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ।

বাটির আকৃতির জিরো উপত্যকা শিক্ষা ও কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ি উপজাতিরা প্রধানত ঝুম চাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পাহাড়ে জল জমিয়ে ধান চাষ করেন জিরো উপত্যকার আপাতনিরা। চাষের জন্য কোনও প্রাণী বা যন্ত্রের ব্যবহার করা হয় না। জমানো জলে শুধু ধান চাষই নয়, তাতে মাছ চাষও করা হয়। খেতের আলে করা হয় মিলেট চাষ। ‘টাপিও’ নামে ভেষজ নুনও তৈরি করে আপাতনিরা। গ্রামের নিজস্ব পরিষদ ‘বুলিয়ান’ আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে। শাস্তি দিয়ে নয়, চেতনা জাগ্রত করে অপরাধ প্রবৃত্তি দমনের প্রথা চালু রয়েছে।

অন্য দিকে, বমডিলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাঁচিল ঘেরা বৌদ্ধ থেম্বাং গ্রাম বহু বছর ধরে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। সেখানে মূলত তিব্বতি মনপা উপজাতির দিরখিপা গোষ্ঠীর বসবাস। পাঁচিল ঘেরা গ্রামের মাঝখানে রয়েছে জং বা দুর্গ। এই গ্রামে কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই। সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা রয়েছে, তা-ই পুলিশের প্রয়োজন পড়ে না।

এ দিকে, অসমে আহোম রাজাদের ‘পিরামিড’ মৈদাম ও বিশ্বখ্যাত রেশম শাড়ি বয়নক্ষেত্র শুয়ালকুচিকেও ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় রেখেছে কেন্দ্র। শিবসাগরের চড়াইদেও মহকুমায় কয়েকটি মৈদাম পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ও রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণ করছে। সংরক্ষিত মৈদামের পাশাপাশি, অসংরক্ষিত মৈদাম ও কারেংঘর, তলাতলঘর, রংঘর, শিবদোল ও জয়সাগর, গৌরীসাগরের মন্দিরও ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় রাখার প্রস্তাব রয়েছে। দক্ষিণ চিনের মোং মাও লিং থেকে আসা প্রথম আহোম রাজা স্যুকাফার (১২২৮-৫৬ খ্রীষ্টাব্দ) রাজধানী ছিল শিবসাগর (তৎকালীন রংপুর)। আহোম রাজাদের সমাধিস্থল ছিল শিবসাগর শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে চড়াইদেও এলাকায়। মিশরের পিরামিডের মতোই রাজার সমাধির উপরে মৈদাম তৈরি করা হত। মাটির নীচে থাকত সুড়ঙ্গ, একাধিক প্রকোষ্ঠ। অর্ধগোলাকার সমাধির মাথায় থাকত ‘চৌ-চালি’। আটকোণা বেঁটে দেওয়ালে ঘেরা থাকত প্রতিটি মৈদাম। মিশরের মতোই রাজার দেহের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, সহচর, পোষ্য ও প্রচুর ধনরত্নও মৈদামে রাখার রীতি ছিল।

ইতিমধ্যে বৃহত্তম ২ নম্বর মৈদামটি খনন করে, হাতির দাঁত ও কাঠের বাক্স, তামার বাসন, ঝিনুক, সোনার অলঙ্কার, কামানের গোলা, আটকোনা ইঁটের কুঠুরি-সহ অন্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে পাঁচটি মাথার খুলি, হাড়। ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছড়ানো চড়াইদেওতে প্রায় দেড়শ মৈদাম আছে।

অসমের শুয়ালকুচি গ্রামকে কেন্দ্র করে মুগা, মালবারি, এনডি রেশমের বস্ত্রের যে বয়নশিল্প গড়ে উঠেছে তার খ্যাতি দেশের পাশাপাশি বিদেশের বিভিন্ন জায়গাতেও ছড়িয়েছে।

সেই বয়নশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা করতেই বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের এ বারের তালিকায় মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি, মহারাষ্ট্রের পৈঠানি, তেলেঙ্গানার পচমপল্লির সঙ্গে শুয়ালকুচির রেশমশিল্পকেও চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত করেছে ভারত সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE