Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
পূর্ণিয়া

রাস্তায় বন্ধুর সঙ্গে কথা, খাপের কোপে কিশোরী

ফের ‘খাপ পঞ্চায়েত’-এর তৎপরতায় পূর্ণিয়া সদর এলাকায় দলিত পরিবারের একটি ১৩ বছরের মেয়ের উপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালাল গ্রামের মানুষ। তার অপরাধ, স্কুলের এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির লাগোয়া জায়গায় কথা বলছিল। পূর্ণিয়ার বাইপাস সংলগ্ন রাস্তার জিরো মাইল এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরীর বাবা-মা ১০ বছর আগে মারা যায়।

স্বপন সরকার
পটনা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

ফের ‘খাপ পঞ্চায়েত’-এর তৎপরতায় পূর্ণিয়া সদর এলাকায় দলিত পরিবারের একটি ১৩ বছরের মেয়ের উপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালাল গ্রামের মানুষ। তার অপরাধ, স্কুলের এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির লাগোয়া জায়গায় কথা বলছিল।

পূর্ণিয়ার বাইপাস সংলগ্ন রাস্তার জিরো মাইল এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরীর বাবা-মা ১০ বছর আগে মারা যায়। দাদু এবং ঠাকুমার কাছেই সে বড় হচ্ছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় স্কুলের এক বন্ধুর সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেখে ফেলেন গ্রামের কয়েকজন। এরপরেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে গ্রামবাসীরা। তাদের দু’জনকে একটি গাছের সঙ্গে বেধে রাখা হয়। তাদের বেল্ট দিয়ে মারাও হয়। ছেলেটিকে অল্প মারা হলেও মেয়েটির উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় বেশি। তার সারা গায়ে বেল্টের মারের দাগ বসে যায়। সারা রাত বেঁধে রাখার পর সকালে সালিশি সভা করে তাদের দু’জনকে ১২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ছেলেটির বাবা-মা ১০ দিনের মধ্যে জরিমানা মিটিয়ে দেবে বলার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মেয়েটি নিস্তার পায়নি এই অত্যাচারের হাত থেকে। কারণ মেয়েটির পরিবার জানায় এত চাকা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

এরপরেই শুরু হয় নির্যাতনের আরও এক অধ্যায়। মেয়েটির মাথা মুড়িয়ে মুখে কালি এবং চুন মাখিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। তাতেও আশ মেটেনি গ্রামবাসীদের। এরপর মেয়েটিকে নির্বাসন দিতে গ্রামের বাইরে পাঠানোর জন্য একটি অটোতে বসিয়ে দেওয়া হয়।

১৩ বছরের মেয়ে জানে না তখন সে কী করবে। কোথায় যাবে।

বাড়িতে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা। দাদুর হাটা-চলা প্রায় বন্ধ। এমন সময় তাঁর সামনে হাজির হন শিশু কল্যান সমিতির এক সদস্য। তিনিও ছিলেন সেই অটোর যাত্রী।

ঘটনা আঁচ করতে পেরে অটো কিছুটা যাওয়ার পরে তিনি মেয়েটিকে অটো থেকে নামিয়ে এনে সদর মহিলা থানায় ফোন করেন। পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রাম প্রধান-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে গ্রামের পরিস্থিতি এমনই যে মেয়েটির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ তাকে বাড়িতে পাঠাতেও সাহস পাচ্ছে না। তাকে সরকারি হোমে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।

থানার মহিলা ওসি শ্বেতা কুমারী বলেন, “মেয়েটিকে দিয়ে আমি একটি অভিযোগ দায়ের করাই। কাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত অভিযুক্ত সাত জনের মধ্যে ছ’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত এক মহিলা পলাতক।” ওসি জানান, মেয়েটির দাদুর সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এর আগেও গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর অভিযুক্তরা পুলিশকে জানিয়েছে, বাবা-মা মরা মেয়েটি বিপথে চলে যাচ্ছিল। তাই তাকে শাসন করা হয়েছে। মহিলা থানার ওসি বলেন, “গ্রামের এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণে তাকে বাড়িতে পাঠানো যায়নি।” কিন্তু গ্রেফতারের জের বৃদ্ধ-বৃদ্ধার উপর বর্তাবে না তো?

পুলিশ কিন্তু এই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারেনি। তাই নজরদারি চালানো হচ্ছে গ্রামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purnia swapan sarkar patna molestation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE