Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ছাদ থেকে পরপর ঝুলছে ১০টি দেহ

ঘরের ছাদ থেকে ঝুলছে একের পর এক মৃতদেহ। এক, দুই.....সব মিলিয়ে মোট ১০ জনের দেহ। চোখ আর মুখ বাঁধা। বাঁধা হাতও। বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক মহিলার দেহ পড়ে অন্য একটি ঘরে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। নয়াদিল্লির বুরারি এলাকার এই ঘটনায় আজ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

উদ্ধার: মৃতদেহগুলি বার করে আনছে পুলিশ। রবিবার। ছবি: এএফপি।

উদ্ধার: মৃতদেহগুলি বার করে আনছে পুলিশ। রবিবার। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

ঘরের ছাদ থেকে ঝুলছে একের পর এক মৃতদেহ। এক, দুই.....সব মিলিয়ে মোট ১০ জনের দেহ। চোখ আর মুখ বাঁধা। বাঁধা হাতও। বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক মহিলার দেহ পড়ে অন্য একটি ঘরে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। নয়াদিল্লির বুরারি এলাকার এই ঘটনায় আজ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। একই পরিবারের ১১ জনের মৃত্যুর এই ঘটনায় খুনের মামলা করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার সব দিক এখনও তদন্তকারীদের কাছেও স্পষ্ট নয়। ওই পরিবারের সদস্যেরা অতিপ্রাকৃতে (অকাল্ট) বিশ্বাস করতেন বলে মনে করছেন তাঁরা।

বুরারি এলাকার সন্ত নগরের ২৪ নম্বর সড়কের দোতলা বাড়িটিতে গত ২০ বছর ধরে বাস ভাটিয়া পরিবারের। দুই ছেলে ভবনেশ (৫০) ও ললিত (৪৫), দুই পুত্রবধূ সবিতা (৪৮) ও টিনা (৪২) এবং পাঁচ নাতি-নাতনিকে নিয়ে থাকতেন বছর সাতাত্তরের গৃহকর্ত্রী নারায়ণ দেবী। নাতি নাতনিরা হলেন প্রিয়ঙ্কা (৩৩), নীতু (২৫), মোনু (২৩), ধ্রুব (১৫) এবং শিবম (১৫)। বাড়ির নীচেই একটি মুদির দোকান ছিল ভবনেশের। ললিতও বাড়ি থেকেই কাঠের ব্যবসা করতেন।

শনিবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ মুদির দোকানটি বন্ধ হয় বলে জানান স্থানীয়েরা। এমনিতে রোজ সকাল ছ’টার মধ্যে দোকানটি খুলে যায়। তবে আজ সাড়ে সাতটা বেজে গেলেও দোকান খোলেনি। দুধের ভ্যান এসে বার বার হর্ন দেওয়ায় ভাটিয়াদের বাড়িতে ঢুকতে যান গুরচরণ সিংহ নামে এক প্রতিবেশী। দরজা খোলাই ছিল বলে জানান তিনি। ভিতরে ঢুকতেই ঝুলম্ত দেহগুলি চোখে পড়ে তাঁর। তখনই খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।

ঘটনাস্থল: নয়াদিল্লির বুরারি এলাকার একই পরিবারের ১১ জনের মৃত্যুর তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ছবি: পিটিআই।

৭৭ বছরের নারায়ণ দেবীর দেহ একটি ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। তাঁর শ্বাসরোধ করা হয়েছিল প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। ৯ জনের দেহ ছাদ থেকে ঝুলছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এক জনের দেহ ঝুলছিল জানালা থেকে। নিহতদের চোখ বাঁধা ছিল। সকলের হাতও বাঁধা ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তদন্তকারীদের ধারণা, নিহতদের মধ্যেই কেউ বাকিদের খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বাড়ি একদম পরিপাটি রয়েছে।

কোনও জিনিস খোয়া গিয়েছে বলেও জানা যায়নি। মহিলাদের গায়ের সোনার গয়না তাঁদের গায়েই রয়েছে।

বাড়িতে বেশ কিছু হাতে লেখা নথি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, ওই নথি দেখে মনে হয় ভাটিয়া পরিবার অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস করত। কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটে দিদি ও পোষা কুকুরের কঙ্কালের সঙ্গে দিন কাটাতে দেখা গিয়েছিল পার্থ দে-কে। সেখানেও অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসের অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনাচক্রে ভাটিয়া পরিবারেরও পোষা কুকুর রয়েছে। কেবল সেই কুকুরটিই জীবন্ত ছিল। তদন্তকারীদের মতে, রাতে কুকুরটি চেঁচামেচি করেনি। ফলে বাড়িতে বাইরের কোনও হত্যাকারী আসার বদলে পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যের বাকিদের খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

আজ দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। যান দিল্লির বিজেপি প্রধান মনোজ তিওয়ারিও। বুরারি থানার হাত থেকে তদন্তের ভার নিয়েছে অপরাধ দমন শাখা।

এক পড়শি বলেন, ‘‘ভাইয়ে-ভাইয়ে বেশ সদ্ভাব ছিল। এরা আত্মহত্যা করতেই পারে না!’’ রাজেন্দ্র ত্যাগী নামে আর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘বেশ সুখী পরিবার ছিল। আর্থিক সঙ্কটও ছিল না ভাটিয়াদের।’’

এই পরিবারের আদি বাড়ি রাজস্থানে বলে জেনেছে পুলিশ। ভবনেশ এবং ললিতের আরও এক ভাই রয়েছেন। তিনি পেশায় ঠিকাদার। থাকেন রাজস্থানের চিতোরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE