Advertisement
E-Paper

জেল-মুক্তির সঙ্গে চাকরির নিয়োগপত্রও

অধিকাংশই খুনের আসামী। যাবজ্জীবন সাজা ভুগছিলেন। কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে তাঁদের মধ্যে অনেকে শিখেছেন হাতের কাজ, কেউ কেউ পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জনও করেছেন। সেই শেখা কোনও দিন কাজে লাগবে ভাবতেই পারেননি রাঁচির বিরসা মুণ্ডা সংশোধানাগেরর ৪৯ জন আসামী।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০১:৪৭

অধিকাংশই খুনের আসামী। যাবজ্জীবন সাজা ভুগছিলেন। কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে তাঁদের মধ্যে অনেকে শিখেছেন হাতের কাজ, কেউ কেউ পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জনও করেছেন। সেই শেখা কোনও দিন কাজে লাগবে ভাবতেই পারেননি রাঁচির বিরসা মুণ্ডা সংশোধানাগেরর ৪৯ জন আসামী।

কারাবাস থেকে শুধু মুক্ত হয়েই ফেরা হল না, পেলেন চাকরির নিয়োগপত্রও। শনিবার দুপুরে সংশোধানাগেরর ওই ৪৯ জন আসামীর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিলেন আই জি (কারা) সুমন গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আজ একটা ঐতিহাসিক দিন। ঝাড়খণ্ডের ইতিহাসে এ রকম উদ্যোগ এই প্রথম। জেল থেকে মুক্তি পেয়েই যাঁরা চাকরি পেলেন তাঁরা জেলের ভেতর সাজা কাটানোর সময় কেউ পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। কেউ মন দিয়ে হাতের কাজ শিখেছেন। তিনটি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এঁদের চাকরি দিচ্ছে। এঁদের ভবিষ্যৎ জীবন এখন অনেকটাই সুরক্ষিত।”

ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে আজ একসঙ্গে ১০৫ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্ত করা হয়। বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজার অর্থ আমাসীকে আজীবন কারাবাসে করতে হবে। তা হলে এঁদের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতিক্রম হল কেন? এ আই জি (কারা) দীপক বিদ্যার্থী বলেন, “স্টেট রেমিশন বোর্ড অনুমোদন দিলে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে যাবজ্জীবনের ন্যূনতম সাজার মেয়াদ পূর্ণ করার পরে তাঁদের মুক্ত করা যায়। গত মাসে স্টেট রেমিশন বোর্ডের সঙ্গে এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ১০৫ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এঁরা সকলেই যাবজ্জীবনের ন্যূনতম সাজার মেয়াদ পূর্ণ করেছেন।’’

রাঁচি, দুমকা, হাজারিবাগ, পালামু সংশোধানাগার থেকে মুক্ত হওয়া ১০৫ জন যাবজ্জীবন আসামীর চোখে মুখে এ দিন সকাল থেকেই মুক্তির আনন্দ। ওই ১০৫ জনের মধ্যে ৪৯ জন পেলেন চাকরির নিয়োগপত্রও। বেলা বারোটা নাগাদ রাঁচির বিরসা মুণ্ডা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মাঠে ছিল ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট। সেই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে সুমন গুপ্ত বলেন, “হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনায় ক্ষণিকের ভুলেই ওঁরা হয়তো চরম এক অপরাধ করে ফেলেছেন। এর ফলেই তাঁদের জীবনের গতিপ্রকৃতি পাল্টে যায়। তবে এই মুক্ত আসামীরা এখন বুঝবেন জীবনের গতিপ্রকৃতি পাল্টে যাওয়া মানে কিন্তু জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়।”

১৬ বছর আগে দুমকার বাসিন্দা সহদেব বেসরা একটা খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা পান। তিনি দুমকা জেলে বন্দী ছিলেন। এ দিন তিনিও নিয়োগপত্র হাতে পান। প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাড়ির পরিজনদের সঙ্গে সে ভাবে যোগযোগ নেই। আমাকে মিথ্যা খুনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। কিন্তু সমাজের চোখে তো আমি খুনিই। খুনের আসামীকে কে কাজ দেয় বলুন? কিন্তু জেল থেকেই চাকরির ব্যবস্থা হওয়ায় অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করছি।” সহদেববাবু জানালেন একটি বেসরকরি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ মিলেছে। ফুলেন্দর মাহাতো নামে এক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাঁচির বিরসা মুণ্ডা সংশোধনাগারে বসেই স্নাতক হয়েছেন। এ দিন নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে তিনি বলেন, “চাকরি পাওয়ায় বাইরে বেরিয়েই আমি সন্মানের সঙ্গে জীবন কাটাতে পারব। পরিবার আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ আমি সব থেকে সুখী মানুষ।’’

jail placement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy