মদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই কি ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে মারা হয়েছে মাণ্ডারের মারাইটোলি গ্রামের পাঁচ মহিলাকে— সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই গ্রামে ‘নেশা মুক্তি আন্দোলন’-এর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বছর পঞ্চান্নর জসিনতা খালকো। গ্রামের কয়েক জন মহিলা তাতে সামিল হন। শুক্রবার গভীর রাতে গ্রামবাসীদের একাংশের মারধরে জসিনতা ও চার মহিলার মৃত্য হয়। রাঁচির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজকুমার লকড়া বলেন, ‘‘নেশা মুক্তি আন্দোলন রুখতেই তাঁদের খুন করা হয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’
ঝাড়খণ্ডের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজি বলেন, ‘‘স্বজনহীন আদিবাসী মহিলার জমি দখল করতে ডাইনি অপবাদে খুনের ঘটনা কয়েক বার ঘটেছে। শুক্রবারের ঘটনায় জমি সংক্রান্ত কোনও সমস্যার কথা সামনে আসেনি। তাই নেশার প্রতিবাদ করার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
মারাইটোলি শুধু নয়, বেশিরভাগ আদিবাসী গ্রামেই মদের কারবার রমরমিয়ে চলে। মারাইটোলা গ্রামের নেশাগ্রস্ত অনেক বাসিন্দা শারিরীক নানা সমস্যায় ভুগছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। গ্রামে পানীয় জলের সমস্যাও রয়েছে। তার জেরে জন্ডিসের মতো জটিল রোগেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জসিনতার মেয়ে অনিনেহা খালকো স্থানীয় হাসপাতালের নার্স। মেয়ের হাত ধরে জসিনতা স্বাস্থ্য সচেতনতার শিবিরে ঘুরতেন। গ্রামে প্রাথমিক স্কুল তৈরির জন্য কিছুটা জমি ও একটি টিউব-কলও গড়ে দেন তিনি। এ দিন অনিনেহা বলেন, ‘‘মাকে আমার সামনে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে লাঠিপেটা করতে শুরু করল। কিছুতেই বাঁচাতে পারলাম না।’’
নিহত মহিলাদের পারলৌকিক অনুষ্ঠান ছিল আজ। গ্রাম ঘুরে এক জন পুরুষেরও দেখা মিলল না। বাসিন্দাদের মুখে কুলুপ। কয়েক জন গ্রামবাসীর টুকটাক মন্তব্যে কিন্তু স্পষ্ট হল— এখনও তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, জসিনতারা ডাইনি ছিল। এখনও নাকি ওই গ্রামে দু’জন ডাইনি রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওঝাদের খোঁজ চলছে।
এ দিন ছিল বিশ্ব আদিবাসী দিবস। ঢাকঢোল পিটিয়ে রাঁচির মোরাবাদি ময়দানে তা পালন করছে সরকার। কিন্তু তার আগেই ডাইনি অপবাদে গণপিটুনিতে পাঁচ আদিবাসী মহিলাকে খুনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy