অপেক্ষার দিন শেষের পথে। খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ পেশ করতে চলেছে সপ্তম বেতন কমিশন। সূত্রের খবর, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মোট বেতন প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হবে।
সরকারি কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে ‘আসি, যাই, মাইনে পাই’ মানসিকতা নিয়ে চলার অভিযোগ অনেক পুরনো। সেই মানসিকতা ভাঙতে এ বার সরকারি কর্মীদের মূল বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি সপ্তম বেতন কমিশন কাজের ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করতে পারে বলে সূত্রের খবর।
একই সঙ্গে ‘অকর্মণ্য’ কর্মীদের সময়ের আগেই অবসরের ব্যবস্থাও চালু করতে পারে সরকার।
এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সব থেকে নিচু পদে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় মূল বেতন হল ৫২০০ টাকা। যার সঙ্গে ‘গ্রেড পে’ মেলে ১৮০০ টাকা। দুইয়ে মিলিয়ে হয় ৭০০০ টাকা। এর ভিত্তিতেই মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-র হিসেব হয়। যার হার এখন ১১৯ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হয় বাড়ি ভাড়া ভাতা বা এইচআরএ (হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স), পরিবহণ ভাতা বা ট্রান্সপোর্ট অ্যালাউন্স (টিএ)। সূত্রের খবর, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ওই পদে মূল বেতন ও গ্রেড পে মিলিয়ে মোট প্রাপ্য দাঁড়াবে ২১ হাজার টাকার সামান্য বেশি। এর উপর ভিত্তি করে মিলবে এইচআরএ এবং টিএ। সেই হারও বাড়তে পারে বলে একটি সূত্রের দাবি।
কেন্দ্রীয় সরকারি আমলাদের বক্তব্য, এই হিসেব থেকে এক ধাক্কায় তিন গুণ বেতন বেড়ে গেল এমনটা ভাবলে ভুল হবে। কারণ সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সময় ডিএ-র হার হবে শূন্য। সে দিক থেকে সূত্রের খবর সত্যি হলে মোট বেতন ৩০ শতাংশের মতো বাড়তে পারে। সূত্রের খবর, যে সব সরকারি কর্মীদের সন্তান স্কুলে পড়াশোনা করছেন, তাদের জন্য শিক্ষা ভাতা চালু হতে পারে।
অতীতে বেতন কমিশনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মূল বেতন গড়ে তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কখনও অবশ্য তার বেশিও হয়েছে। সবটাই নির্ভর করে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজকোষের উপর। এখন সরকারি কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে দেশের জিডিপি-র প্রায় ১ শতাংশ ব্যয় হয়। নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রাজকোষের উপর চাপ পড়বে।
এমনিতেই নরেন্দ্র মোদী সরকার অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের জন্য ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজকোষে চাপ পড়তে চলেছে।
সূত্রের খবর, নতুন বেতন কমিশন কাজের মূল্যায়ণের ভিত্তিতে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ব্যবস্থা চালু করতে পারে। উল্টো দিকে কাউকে অকর্মণ্য বলে মনে করা হলে ৫৫ বছর বয়সের পরেই অবসর কিংবা ৩০ বছর চাকরির পরেই অবসরের ব্যবস্থা চালু হতে পারে। কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতর এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারি করেছে। সপ্তম বেতন কমিশনও তাতেই সিলমোহর বসাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রতি দশ বছর অন্তর বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে বেতন কাঠামো বদল হয়। বর্তমানে চালু ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়েছে ২০০৬-র ১ জানুয়ারি থেকে। নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে প্রায় ৪৮ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও ৫৫ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হবেন। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়লে রাজ্য সরকারের উপরেও বেতন বাড়ানোর জন্য চাপ তৈরি হবে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে এমনিতেই ডিএ-র ফারাকের জন্য একই স্তরে কর্মরত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে বেতনের ফারাক বিপুল।
বিচারপতি এ কে মাথুরের নেতৃত্বে সপ্তম বেতন কমিশন তৈরি হয় ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে। চলতি বছরের অগস্টের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ডিসেম্বর করে দেওয়া হয়। কমিশনের রিপোর্ট এখন তৈরি এবং খুব শীঘ্রই তা সরকারের কাছে জমা পড়তে চলেছে বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy