ছবি: সংগৃহীত
শাসকের কুর্সিতে আলো করে থাকা কোনও নেতার মূর্তি বসানো হচ্ছে শুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উৎসাহিত হবেন কিনা— তা নিয়ে মুখরোচক আলোচনা হতেই পারে।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মেরঠে সেচ দফতরের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার যে কাণ্ডটি করতে চলেছেন তা নিয়ে গুরুতর রাজনৈতিক বির্তক তৈরি হতে চলেছে। তিনি একটি মন্দির গড়ার কথা বলেছেন। না, কোনও দেবতার মন্দির নয়! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামেই মন্দির গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন কট্টর মোদী-ভক্ত জে পি সিংহ নামের ওই অফিসার। তাঁর প্রস্তাব, ‘ভব্য নরেন্দ্র মোদী’ নামের এই মন্দিরের ভিতরে থাকবে ১০০ ফুটের মোদী-মূর্তি! জে পি সিংহের কথায়, ‘‘দেশ ৬০ বছর ধরে কুশাসন সহ্য করেছে। মোদীজি রামের মতো দেশকে উদ্ধার করেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই মোদী ম্যাজিক আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে মন্দির বানাতে। যা মোদীর উন্নয়ন প্রকল্পের স্মারকও বটে।’’
আরও পড়ুন: আগেই দিওয়ালি এনে দিলাম, জিএসটি হ্রাস নিয়ে বলছেন মোদী
জীবদ্দশায় এক রাজনৈতিক নেতার মূর্তি এবং মন্দির কী ভাবে উন্নয়নের স্মারক হতে পারে, সে কথা অবশ্য স্পষ্ট করেননি জে পি সিংহ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে মেরঠ-করনাল হাইওয়ের পাশে তাঁর কেনা ৫ একর জমির দাম নিয়ে। এক জন সরকারি চাকুরে ৫ কোটি টাকা দিয়ে অবলীলায় কী ভাবে সেই জমি কিনতে পারেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। গোটা প্রকল্পটির আনুমানিক খরচ হবে ১০ কোটি টাকা। মোদী ভক্তরাই নাকি এই টাকা তুলে দেবেন বলে দাবি করছেন ওই প্রাক্তন সেচ-কর্তা।
গোটা বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্বও। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারও বিষয়টিকে না পারছে গিলতে, না উগরোতে। প্রস্তাবিত মন্দির নিয়ে খোদ মোদীর কী মতামত, আদৌ তাঁর এতে অনুমতি রয়েছে কি না— তা জানার চেষ্টা চলছে। দলীয় ভাবে বিজেপি এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। শুধু বলা হয়েছে, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত নই।’ আয়কর বিভাগের দুর্নীতি অভিযান থেকে বাঁচতে আগ বাড়িয়ে এই মন্দির-পরিকল্পনা কিনা, সেটিও স্পষ্ট করে বোঝার চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবিত নেতার মূর্তি বানানোর রেওয়াজ এ দেশে বিরলই বলা চলে। একমাত্র মায়াবতীর মূর্তি রয়েছে লখনউ-সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে, পরে ক্ষমতায় এসে যেগুলিকে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিংহ। সেগুলিকে ভেঙে ফেলাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বানিয়ে মেরঠকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে আনার কথা বলেছেন ওই অফিসার। তুলনা করা হচ্ছে গুজরাতের সর্দার সরোবর বাঁধের উপর নির্মীয়মাণ ৫৯৭ ফুট সর্দার বল্লভভাই পটেলের মূর্তির সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘এটি যাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত হোক, এতে আসলে মোদীর মর্যাদাহানিই করা হচ্ছে! মাত্র ১০০ ফুটেই তাঁকে বেঁধে ফেলা হচ্ছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সর্দার পটেলের মূর্তি যাকে টেক্কা দিতে করা হচ্ছে, সেই চিনা বৌদ্ধমূর্তির উচ্চতা ৫০২ ফুট। আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টির উচ্চতা ৩০০ ফুট।
‘৫৬ ইঞ্চি’ ছাতিবিশিষ্ট মোদী এই তুলনামূলক উচ্চতাবিচার করে গোটা প্রকল্পটি অঙ্কুরেই বিনাশ করবেন কি না— এ বার সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy