Advertisement
E-Paper

তিনিই শেষ কথা, বোঝালেন কেজরীবাল

বিদ্রোহী সুরকে কার্যত তোয়াক্কা না করে দলে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। মূলত তাঁরই ইচ্ছেতে আজ আম আদমি পার্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জাতীয় কর্মসমিতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বিদ্রোহী নেতা প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদবকে। সম্প্রতি একাধিক বার আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক কেজরীবালের স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন দলের ওই দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৯
আপের জাতীয় কর্মসমিতি কমিটির বৈঠকে ঢুকছেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

আপের জাতীয় কর্মসমিতি কমিটির বৈঠকে ঢুকছেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

বিদ্রোহী সুরকে কার্যত তোয়াক্কা না করে দলে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। মূলত তাঁরই ইচ্ছেতে আজ আম আদমি পার্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জাতীয় কর্মসমিতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বিদ্রোহী নেতা প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদবকে।

সম্প্রতি একাধিক বার আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক কেজরীবালের স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন দলের ওই দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। গতকাল ওই একই অভিযোগে প্রকাশ্যে সরব হন ওই দুই নেতা। ফলে আজ দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে যে হেস্তনেস্ত হবে তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না কোনও পক্ষেরই। বাস্তবে হয়েছেও তাই। বৈঠকের শুরুতেই নিজের বক্তব্যে কেজরীবাল জানিয়ে দেন, বিদ্রোহী জুটি জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য থাকলে তিনি দল থেকে ইস্তফা দেবেন। কেজরীবাল এই হুমকি দেওয়ার পরে প্রশান্ত ও যোগেন্দ্রর বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। কেজরীবাল শিবির বুঝিয়ে দেয় বিরোধীদের কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না।

মাস খানেক আগে ওই বিদ্রোহী জুটি বাদ পড়েছিলেন দলের সর্ব্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি থেকে। আর আজ জাতীয় পরিষদের বৈঠকে রীতিমতো ভোটাভুটি করে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হল কর্মসমিতি থেকে। এরপর দুই নেতা কেবল জাতীয় পরিষদের সদস্য রয়ে গেলেন। আজ প্রশান্ত ও যোগেন্দ্র ছাড়াও কর্মসমিতি থেকে বাদ পড়েছেন আনন্দ কুমার ও অজিত ঝা-র মতো শীর্ষ নেতারা। তবে যে ভাবে আজ তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা কেজরীবালের স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিচয় বলে আজ ফের সরব হয়েছেন প্রশান্ত ভূষণ। তিনি বলেন, “কোনও আলোচনা ছাড়াই বিরোধী স্বরকে থামাতে নির্মম পদক্ষেপ করলেন কেজরীবাল। আমরা সেই স্বৈরচারিতা থামাতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম।”

বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে যোগেন্দ্র অনুগামীদের বৈঠকস্থল থেকে সরিয়ে দিতে বলপ্রয়োগ করা হয় বলেও আজ অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উঠেছে বিরোধী নেতাদের মারধর করারও। যদিও সে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেজরী শিবির। তাঁদের যুক্তি, দলে যে ভাবে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে তা অধিকাংশ সদস্যই মেনে নিতে পারছেন না। কোনও সমর্থক অতি উৎসাহে বিরোধী নেতাদের কটুক্তি বা প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে থাকতে পারেন। তার বেশি কিছু হয়নি। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে আপকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি শিবির। প্রাক্তন আপ সদস্য তথা বর্তমান বিজেপি নেত্রী সাজিয়া ইলমি বলেন,“অরবিন্দ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দলবল অসভ্য গুন্ডা ছাড়া আর কিছু নয়।” কংগ্রেসের অজয় মাকেনের দাবি, “কেজরীবাল মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে বিরোধিতা সহ্য করতে পারে না। এর আগেও যারা কেজরীবালের বিপক্ষে মুখ খুলেছে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বারও তাই হল।”

দলের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিরোধী নেতাদের দল থেকে বাদ পড়া কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে কেজরী ঘনিষ্ঠ শিবির। তাঁদের আশা, নিজেদের সম্মানের কথা ভেবে এ বার অন্তত স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেবেন বিদ্রোহী নেতারা। এ দিকে বিদ্রোহী নেতারা কবে ইস্তফা দেবেন তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও জবাব না পাওয়া গেলেও, দল যে পথে এগোচ্ছে তার বিরোধিতা করে আজ আপ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দলেরই আরেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মেধা পাটকর।


কর্মসমিতি থেকে বহিষ্কারের পরে সমর্থকদের সঙ্গে যোগেন্দ্র যাদব।

গত এক বছর ধরে দলের মধ্যে কেজরীবালের সঙ্গে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছিল প্রশান্ত ও যোগেন্দ্রের। বিরোধ চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছয় গতকাল। সাংবাদিক সম্মেলনে কাল কেজরীবালের স্বৈরাচারী মনোভাব সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে দলের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন রাখেন প্রশান্ত-যোগেন্দ্র জুটি। এরপর রাতে একটি অডিও টেপও হাতে আসে সংবাদমাধ্যমের। যাতে দলের নেতা উমেশ সিংহের সঙ্গে কেজরীবালের কথোপকথন রয়েছে। যেখানে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করতে শোনা যায় কেজরীবালকে। বিদ্রোহী শিবিরই কলকাঠি নেড়ে ওই টেপটি সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছে বলে অভিযোগ করে কেজরী ঘনিষ্ঠ শিবির। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেজরীবালের বাড়িতে বৈঠকে বসেন আপ নেতারা। গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে ঠিক হয় বিদ্রোহী নেতাদের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কী ভাবে সরানো হবে সেই রণকৌশলও ঠিক হয়ে যায় কাল রাতেই।

সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে আজ সকালে পরিষদের বৈঠকে দলের আহ্বায়ক হিসেবে প্রথম বক্তব্য রাখতে ওঠেন কেজরীবাল। দিল্লিতে দলের সাফল্য নিয়ে পাঁচ মিনিট বক্তব্য রেখেই বাকি আধ ঘণ্টা তিনি পরিষদ সদস্যদের বোঝান, কী ভাবে পিছন থেকে ছুরি মারছে বিদ্রোহী শিবির। বক্তব্যের শেষে কেজরীবাল স্পষ্ট করে দেন, বিদ্রোহী নেতাদের না সরানো হলে তিনি দলের ও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তাঁকে ওই পদক্ষেপ নিতে বাঁধা দেন সঞ্জয় সিংহ, কুমার বিশ্বাসেরা। পূর্বপরিকল্পনা মাফিক জানানো হয়, জাতীয় কর্মসমিতিতে বিদ্রোহী নেতাদের রাখা উচিত না অনুচিত এ নিয়ে ভোটাভুটি হবে দলে। ভোটাভুটিতে ২৪৭ জন সদস্য বিদ্রোহী নেতাদের বহিষ্কারের পক্ষে রায় দেয়। ৮ জন সদস্য রায় দেন বিপক্ষে। আর ভোটাভুটি নিয়মমাফিক হচ্ছে না এই অভিযোগে যোগেন্দ্র যাদব-সহ ৫৪ জন সদস্য মাঝপথেই বৈঠক ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। বৈঠকস্থলের সামনে বেশ কিছুক্ষণ ধর্নায় বসে থাকতে দেখা যায় যোগেন্দ্র ও তাঁর অনুগামীদের।

পরে যোগেন্দ্র বলেন, “ভোটাভুটিতে কোনও নিয়মই মানা হয়নি। এটা কার্যত গণতন্ত্রের হত্যা।” যোগেন্দ্রর কথায়, “এক সময়ে বিকল্প রাজনীতির কথা বলে আপ ক্ষমতায় এসেছিল, এখন দেখা যাচ্ছে এই দল আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের মতোই খারাপ।” ওই একই যুক্তিতে আজ আপ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মেধা পাটকর। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেস বা বিজেপির মতোই হাল হয়েছে আপের। যে ভাবে প্রশান্ত ও যোগেন্দ্রকে সরানো হয়েছে তা অনুচিত।” যদিও আপ মুখপাত্র সঞ্জয় সিংহ জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত মেধার ইস্তফার চিঠি দল হাতে পায়নি।

ছবি: প্রেম সিংহ।

AAP Delhi Yogendra Yadav Prashant Bhushan Key Panel Arvind Kejriwal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy