ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যেমনই হোক, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের দরজা বন্ধ হয়নি। বরং অর্থমূল্যের নিরিখে বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বেড়েছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে এমনই দাবি করল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। অবশ্য পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারত থেকে পাকিস্তানে রফতানির পরিমাণই বেশি। পাকিস্তান থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণ যৎসামান্য। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে (মে মাস পর্যন্ত) ভারতে পাকিস্তানের আমদানি করা পণ্যের অর্থমূল্য মাত্র ৫ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪ কোটি ২৭ লক্ষ ডলারের একটু বেশি)।
পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান (এসবিপি)-র পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই, ২৪ থেকে মে, ২৫) ভারত থেকে পাকিস্তানের আমদানি করা দ্রব্যের অর্থমূল্য ২১.১৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৮০৮ কোটি টাকারও বেশি)। পাকিস্তানের ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারত থেকে আমদানি করা দ্রব্যের অর্থমূল্য ছিল ২০.৭ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৭৬৯ কোটি টাকারও বেশি)। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এর পরিমাণ ছিল আরও একটু কম। মাত্র ১৯ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৬২৪ কোটি টাকার বেশি)। পরিসংখ্যানেই ইঙ্গিত যে, বিগত কয়েক বছরে নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নেমে এলেও ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ক্রমশ বাড়িয়েছে পাকিস্তান।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করতে গত ৭ মে মধ্যরাতে সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারত। পাল্টা ভারতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের পরিসংখ্যান বলছে, সংঘাতের সময়েও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য (বিশেষ ভাবে ভারত থেকে পাকিস্তানের পণ্য আমদানি) অব্যাহত থেকেছে। মে মাসে ভারত থেকে পাকিস্তানে ১.৭ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৪৫ কোটি টাকারও বেশি)-এর পণ্য আমদানি হয়েছে। তার আগের অর্থবর্ষে মে মাসে এই পরিমাণ ছিল ১.৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ, সংঘাতের সময়েও সে অর্থে ভারত থেকে পাকিস্তানের আমদানির পরিমাণ কমেনি। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের অর্থবর্ষ শুরু হয় ১ জুলাই। শেষ হয় ৩০ জুন।
অবশ্য ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান নিয়েও মুখ খোলেনি নয়াদিল্লি। তবে ভারতের বণিকমহল সূত্রে খবর, পাকিস্তানে ভারতের রফতানির পরিমাণ আরও বেশি। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই ভারতের পণ্য দুবাই, কলম্বো কিংবা সিঙ্গাপুর হয়ে ঘুরপথে পাকিস্তানে পৌঁছোয়। সে ক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যানে বিষয়টির উল্লেখ থাকে না। ঘুরপথে আমদানির বিষয়টি মেনেছেন পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরাও। ‘ডন’ এক পাক সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই তৃতীয় কোনও দেশের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করেছে পাকিস্তান। যুদ্ধের সময় বাণিজ্য নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ব্যাখ্যা, আগেই ওই পণ্যগুলির জন্য টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে যুদ্ধের পর (জুন-জুলাই মাসে) পাকিস্তানে আমদানির পরিমাণ কত, পরিসংখ্যানে তার উল্লেখ নেই।