E-Paper

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি বরাবরই সতর্ক, দাবি অর্থমন্ত্রীর

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি করার অভিযোগ ওঠার পরে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের সাড়ে নয় লক্ষ কোটি টাকার বেশি শেয়ার সম্পদ লোকসান হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৭
Picture of Nirmala Sitharaman.

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগের পরে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি চোখ বুজে রয়েছে! শেয়ার বাজার, ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও মজবুত করার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা নিয়ে এ বার সুপ্রিম কোর্টও প্রশ্ন তোলায় আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির পাশে দাঁড়ালেন। দাবি করলেন, ‘‘এ দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি গোটা বিষয়ে অবহিত। শুধু এখন নয়, তারা বরাবরই সতর্ক।’’

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি করার অভিযোগ ওঠার পরে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের সাড়ে নয় লক্ষ কোটি টাকার বেশি শেয়ার সম্পদ লোকসান হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র কাছে জানতে চেয়েছে, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও মজবুত করার প্রয়োজন রয়েছে কি না! এ বিষয়ে একটি কমিটি তৈরির প্রস্তাব দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এখন সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষও শেয়ার বাজারে অর্থ লগ্নি করেন। ফলে লগ্নিকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মজবুত করার প্রয়োজন হতে পারে।

শনিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের সঙ্গে বাজেট-পরবর্তী বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসকে দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি খুবই অভিজ্ঞ। নিজস্ব ক্ষেত্রে তারা দক্ষ।’’ সুপ্রিম কোর্টের সামনে অর্থ মন্ত্রক এই অবস্থানই নেবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তিনি।

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে শুধু শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের অর্থ নিয়ে নয়, এলআইসি-তে সঞ্চয়কারী ও স্টেট ব্যাঙ্কের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আমানতকারীদের অর্থের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ, এলআইসি আদানিদের শেয়ারে লগ্নি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি আদানি গোষ্ঠীকে বিপুল পরিমাণে ঋণ দিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দাবি করেছে, চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি শেয়ার বাজারের পতন নিয়ে মুখ খোলেনি।

তবে আদানি গোষ্ঠী সম্প্রতি যে ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বেচেও পরে তা বন্ধ করে দেয়, সেখানে মরিশাসের দু’টি সংস্থার লগ্নি নিয়ে সেবি তদন্ত শুরু করেছে। আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মরিশাসের ওই দুই সংস্থা—গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল টাস্কার ফান্ড ও আয়ুষ্মত লিমিটেডের সম্পর্ক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, শিল্পপতি গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে তাঁর দাদা বিনোদ আদানির বিভিন্ন সংস্থা লগ্নি করে শেয়ারের দর কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সংস্থাগুলি মূলত বিদেশে বিভিন্ন করফাঁকির স্বর্গরাজ্যে তৈরি করা বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থা। আদানিদেরই টাকা ঘুরপথে ফের আদানিদের শেয়ারে লগ্নি করে শেয়ার দর বাড়ানো হচ্ছে বলে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ ছিল। তা প্রকাশ্যে আসতেই শেয়ার দর পড়তে শুরু করে।

কংগ্রেস আজ প্রশ্ন তুলেছে, যে সংস্থার বিরুদ্ধে এ হেন আর্থিক নয়ছয় এবং দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে গিয়ে ফের ঘুরপথে দেশে ফিরিয়ে আনার অভিযোগ, সেই আদানি গোষ্ঠী দেশের ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে। জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনা করে এটা চলতে দেওয়া যায়? কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া ১৩টি বন্দরে পণ্য পরিবহণের ৪০ শতাংশ কাজ হয়। আদানি গোষ্ঠীর হাতে নিলাম ছাড়া বন্দর তুলে দেওয়া হয়েছে। যেখানে নিলাম হয়েছে, সেখানে অন্য প্রতিযোগী সংস্থাগুলি উধাও হয়ে গিয়েছে। কৃষ্ণপটনম বন্দরের আগের পরিচালন সংস্থাকে আয়কর দফতর ভয় দেখিয়ে আদানিদের বন্দর বেচে দিতে বাধ্য করেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nirmala Sitharaman Gautam Adani

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy