Advertisement
E-Paper

Adhir Ranjan Chowdhury: ‘১৫ কোটির গাড়ি কেনেন, গরিবের কষ্ট বোঝেন না’, মোদীর সামনেই মোদীকে আক্রমণ অধীরের

অধীর প্রথমেই ইন্ডিয়া গেটে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৮
নরেন্দ্র মোদী এবং অধীররঞ্জন চৌধুরী

নরেন্দ্র মোদী এবং অধীররঞ্জন চৌধুরী ফাইল চিত্র।

মুখে মাস্ক। কাঁধের উপর থেকে ফেলা রয়েছে শাল। লোকসভায় বসে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী সরাসরি নিশানা করছেন সেই নরেন্দ্র মোদীকেই।

শুক্রবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে মোদীকে আক্রমণের সময়ে বারাণসীতে গিয়ে ‘মুসলিমদের সঙ্গে অওরঙ্গজ়েবের তুলনা’র নিন্দা করেছেন অধীর। আবার কখনও চিনের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে ‘মৌন’ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মোদী লোকসভা বা রাজ্যসভায় বিশেষ আসেন না বলে অভিযোগ তুলে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আজ এসে ধন্য করেছেন!’’

শুধু তা-ই নয়। নরেন্দ্র মোদীর সামনেই বিজেপিতে তাঁর অনুগামীদের সর্বক্ষণ ‘মোদী, মোদী’ আওড়ানোর জন্য ‘সাইকোপ্যাথ’ আখ্যা দিয়েছেন। প্রশ্ন করেছেন, এই মোদী নাম জপে কি মোদীজি খুশি হন! মোদীর দিকে তাকিয়েই বলেছেন, ‘‘আপনি নিজের জন্য ১৫ কোটি টাকার গাড়ি কেনেন, সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বিমান কেনেন। তাই গরিব, বেকার মানুষের যন্ত্রণা বুঝতে পারেন না।’’

মোদী এক দৃষ্টিতে অধীরের দিকে তাকিয়ে সব শুনছেন। কিন্তু কিছুই বলেননি। বিজেপির মন্ত্রী, সাংসদেরাও মোটের উপরে চুপ। কারণ, স্পিকার ওম বিড়লা প্রথমেই বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদ-জ্ঞাপন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার গরিমা বজায় রেখে, কোনও হট্টগোল না করে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতার বক্তৃতা শুনতে হবে। অনেকের অবশ্য ধারণা, অধীরের কটাক্ষের উত্তর সংসদে নিজের জবাবি-বক্তৃতার জন্য তুলে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী।

অধীর প্রথমেই ইন্ডিয়া গেটে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছিলেন। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বিজেপি যাঁর পুজো করে, সেই ভি ডি সাভরকর হিন্দু মহাসভার হয়ে সুভাষের আজাদ হিন্দ ফৌজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের সাহায্য করার ডাক দিয়েছিলেন। তার পরেই তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর ‘দেশপ্রেমী’ বলায় মোদী বলেছিলেন, তিনি প্রজ্ঞাকে কখনও ক্ষমা করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে কিছুই করেননি।

চিনের অনুপ্রবেশের বিষয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধীর পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান, মোদীর তুলনায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, মনমোহন সিংহরা বহু গুণ বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী মনমোহনকে মৌনমোহন বলেছিলেন। তা হলে মৌন আসলে কে?’’ অধীর অভিযোগ তোলেন, গলওয়ানে চিনের সেনার সঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের সংঘর্ষে ২০ জন সেনার মৃত্যুর পরেও মোদী বলেছিলেন, কেউ ভারতের জমিতে ঢোকেনি। এতে চিনের সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। মোদী কি বলতে চাইছেন, ভারতের সেনা চিনের জমিতে ঢুকে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল? নয়া নাগরিকত্ব আইনের ফলে বাংলাদেশে মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে ভারতের বিরোধিতা হচ্ছে বলেও অধীর অভিযোগ তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছু দিন আগে বলেছিলেন, মৌলিক কর্তব্যের থেকে মৌলিক অধিকারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভারত দুর্বল হয়ে পড়েছে। অধীর আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর ব্যাখ্যা চান। অনুরোধ করেন, জবাবি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী যেন এর উত্তর দেন। সেই সঙ্গে বলেন, মোদীর এই কথা শুনে ১৯৩৬ সালের রাশিয়ার সংবিধানের কথা মনে পড়ে যায়।

সেখানে নাগরিক অধিকার নাকচ করে কর্তব্যের কথা বলা হয়েছিল। এটি যে আসলে আরএসএসের ভাবনা, তা মনে করিয়ে দিয়ে অধীর বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীও সংবিধানের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখতে উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে অধীর প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কখনও কংগ্রেসমুক্ত ভারতের কথা বলেন। কখনও মুসলিমমুক্ত ভারতের কথা বলেন। এখন কি তবে মৌলিক অধিকারমুক্ত ভারত চাইছেন?’’

অনেকের অবশ্য ধারণা, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে এ ভাবে আক্রমণের মুখে পড়ে আসলে জমাটি জবাব দেওয়ার ‘সোনার সুযোগ’ পেয়ে গেলেন মোদী।

Narendra Modi Adhir Ranjan Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy