Advertisement
E-Paper

প্রত্যাঘাতেই থামছে না ভারত, এ বার নতুন ছকে লড়াই

প্রত্যাঘাত হয়ে গিয়েছে। রাতের অন্ধকারে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি বিধ্বস্ত করা হয়েছে। আগ বাড়িয়ে আর কোনও সামরিক পদক্ষেপের কথা এখনই ভাবছে না নয়াদিল্লি। কিন্তু লড়াই তা বলে থামছে না। এক রাতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেই জঙ্গি শিবিরে হাহাকার ফেলে দেওয়া গিয়েছে ঠিকই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:৪২
এবার নতুন ছকে ভারত

এবার নতুন ছকে ভারত

প্রত্যাঘাত হয়ে গিয়েছে। রাতের অন্ধকারে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি বিধ্বস্ত করা হয়েছে। আগ বাড়িয়ে আর কোনও সামরিক পদক্ষেপের কথা এখনই ভাবছে না নয়াদিল্লি। কিন্তু লড়াই তা বলে থামছে না। এক রাতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেই জঙ্গি শিবিরে হাহাকার ফেলে দেওয়া গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এতেই পাকিস্তানে চলতে থাকা সমস্ত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যাবে, তা ভারত মনে করে না। বরং ঘর গুছিয়ে আবার হানা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালাবে জঙ্গিরা। তাই ভারতের নীতি— পাকিস্তানকে ঘর গোছাতে দেওয়া চলবে না। সেই লক্ষ্যেই এখন এগোচ্ছে নয়াদিল্লি।

ঠিক কী পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত? সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, ‘রক্ষণাত্মক নীতি থেকে সরে এ বার রক্ষণাত্মক আক্রমণের নীতি নিয়েছে ভারত।’ পাকিস্তান যাতে ঘর গোছাতে না পারে, তার জন্যই এই রক্ষণাত্মক আক্রমণ নীতি। কী সেই নীতি? দেখে নেওয়া যাক।

১. অর্থনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে বিপাকে ফেলার পরিকল্পনা করেছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের অর্থনীতি এমনিতেই বিপর্যস্ত। দেশের রোজকার পরিকাঠামোগত খরচ চালানোই নওয়াজ শরিফ সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে জঙ্গিদের অর্থ ও অস্ত্র জোগানো পাকিস্তানের পক্ষে খুব সহজ বিষয় আর নয়। ভারতে নাশকতা চালানোর জন্য জঙ্গিদের যে অর্থ ও অস্ত্র ইসলামাবাদ এত দিন জুগিয়ে এসেছে, তার অনেকটাই বিদেশ থেকে পাওয়া টাকা। উন্নয়ন এবং সে দেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য পাকিস্তান বেশ কয়েকটি মিত্র দেশের থেকে যে অনুদান এত দিন পেয়ে এসেছে, সেই অর্থের বড় অংশ জঙ্গিদের পিছনে খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু, পাকিস্তানের যে ভাবমূর্তি এখন গোটা বিশ্বের সামনে ফুটে উঠেছে, তাতে বৈদেশিক অনুদানের উৎসগুলি ক্রমশ শুকিয়ে আসছে। নিজেদের বাণিজ্যই এখন পাক অর্থনীতির অন্যতম বড় ভরসা। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি ২৬০ বাণিজ্য কোটি ডলার। কিন্তু ঘুরপথে অর্থাৎ আরব আমিরশাহির মতো কয়েকটি তৃতীয় দেশকে মাঝখানে রেখে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আরও কিছু আমদানি-রফতানি চলে। ফলে ভারত-পাক বার্ষিক বাণিজ্যের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০ কোটি ডলারের মতো। ভারত এ বার সেই বাণিজ্যে টানা মারার চেষ্টাই শুরু করবে বলে সাউথ ব্লক সূত্রের খবর। সরাসরি বাণিজ্যের সুযোগ তো সঙ্কুচিত হচ্ছেই। আমিরশাহি হয়ে ভারত থেকে পাকিস্তানে যে গয়না, জামাকাপড় এবং যন্ত্রপাতি যায় এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে যে বস্ত্র, শুকনো ফল ও মশলা আসে, সে সবের লেনদেনও এ বার বন্ধ করে দেওয়ার পথে এগোতে পারে নয়াদিল্লি। এতে পাকিস্তানকে সমূহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

২. পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যথেষ্ট দুর্বল। পাকিস্তান ভারতে যে ধরনের নাশকতা চালায়, ভারত সেই পথ নিতে চায় না। কিন্তু পাকিস্তানের দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানে সারা বছর অশান্তি জিইয়ে রাখা ভারতের পক্ষে এখন খুব একটা কঠিন নয়।

৩. কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে আরও একঘরে করে দেওয়ার নীতি নিয়েছে ভারত। ব্যর্থ ও অস্থির রাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি এখন গোটা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত। আন্তর্জাতিক মহলের সামনে এই বিষয়টিই বার বার আরও জোর দিয়ে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে ভারত। তাতে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক নৈকট্য তৈরি করতে কেউ তেমন আগ্রহী হবে না। অস্থির রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে আন্তর্জাতিক মহল।

উরি হামলার পর থেকে বুধবার রাতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পর্যন্ত ভারত কিন্তু ঠিক এই নীতি নিয়েই এগোচ্ছিল। উরি হামলার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখলেই স্পষ্ট হয় তা:

ক. উরিতে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করল ভারত। পাকিস্তানই হামলা করিয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করা হল।

খ. ভারতের মিত্র দেশগুলি তো বটেই, পাকিস্তানের মিত্রদের কাছেও কূটনৈতিক বার্তা পাঠানো হল। পাকিস্তান যে ভাবে সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় নীতি বানিয়ে ফেলেছে, তার তীব্র প্রতিবাদ করা হল। ফলে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে পাকিস্তানের কণ্ঠস্বর কিছুটা চাপা পড়ে গেল।

গ. রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে তথ্যপ্রমাণ সহ তুলে ধরা হল উরি হামলায় পাক যোগের কথা। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি তোলা হল।

ঘ. পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ রাষ্ট্রপুঞ্জে ভাষণ দিতে গিয়ে শুধু কাশ্মীরে অশান্তির কথা বললেন। উরি হামলার কথা বললেন না। সেই সুযোগে আক্রমণের সুর আরও চড়া করল ভারত। ভারতীয় দূত ইনাম গম্ভীর জবাবি ভাষণে পাক প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করলেন। পাকিস্তানকে দু’মুখো, মিথ্যাচারী বলে বর্ণনা করলেন। ফের পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ঘোষণা করার দাবি জানালেন।

ঙ. ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও রাষ্ট্রপুঞ্জে ভাষণ দিলেন। সেখানেও পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ করা হল। আন্তর্জাতিক মহলকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর উপড়ে ফেলা না গেলে গোটা বিশ্বকেই ফল ভুগতে হবে।

চ. আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি তত দিনে ভারতের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিল। ভারত এর পর সার্ক-এও পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা বেশ স্পষ্ট করেই ভারতের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেয়।

ছ. ভারতের এই প্রবল কূটনৈতিক চাপে পাকিস্তান বেশ খানিকটা অগোছালো হয়ে পড়েছিল। আরও বড় ধাক্কা এল সার্ক থেকে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটানও জানিয়ে দিল, তারা পাকিস্তানের মাটিতে সার্ক সম্মেলনে অংশ না নেবে না। পরে একই অবস্থান নিল শ্রীলঙ্কাও।

জ. পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার কাজটা তত দিনে শেষ। ভারত অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। চূড়ান্ত আঘাত হানতে আর বাধা ছিল না। ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ভারতীয় প্যারা-কম্যান্ডোরা ঢুকে পড়লেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। ৭ জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ফিরে এলেন ভারতে।

এই সফল অভিযানের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নয়াদিল্লির রক্ষণাত্মক আক্রমণ নীতি অত্যন্ত সফল। অর্থাৎ ভারত কাউকে আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করবে না। কিন্তু আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ভয়ঙ্কর আঘাত হানতেও দ্বিধা করবে না। সেই আঘাত যে শুধু সামরিক হতে হবে, তা নয়। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক ভাবেও সেই হামলা চলবে।

আরও পড়ুন- আটক জওয়ানকে ফেরাতে সব রকম চেষ্টা হচ্ছে: রাজনাথ

আরও পড়ুন- দুর্গোৎসবের নতুন স্বাদ আনন্দ উৎসবে

আরও পড়ুন- আমি সিঁদুর খেলে ফেরার পর বুম্বার পাঞ্জাবি টকটকে লাল হয়ে যেত

Narendra Modi Nawaz Sharif pakistan India URI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy