এনআরসি-কে ঘিরে আইন অমান্য করিমগঞ্জে। জেলাশাসকের দফতরের সামনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি। বৃহস্পতিবার শীর্ষেন্দু শী-র তোলা ছবি।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) সংশোধনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হল করিমগঞ্জের অফিস পাড়া। এনআরসি সংশোধনের মাপকাঠি নিয়ে আজ আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল নাগরিকত্ব সংগ্রাম সুরক্ষা কমিটি। নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বার দুয়েক হাতাহাতির পর ধরা হল শতাধিক আন্দোলনকারীকে। পরে ধৃতদের ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়ে পুলিশ।
এনআরসি সংশোধনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগে রয়েছে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বরাকের বাঙালিদের একটা বড় অংশ। কারণ অসমের বিভিন্ন উগ্র অসমবাদী সংগঠন চাইছে ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বছর ধরে এনআরসি সংশোধনের কাজ করতে। কিন্তু অসম চুক্তি কিংবা অন্য যে সব সরকারি নথিপত্র রয়েছে সেখানে ১৯৭১ -এর ২৪ মার্চকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অসমের থাকা উগ্র সংগঠনগুলির চাপে পড়ে অসম সরকার কিংবা কেন্দ্র যদি ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বছর হিসেবে বিবেচিত করে, তা হলে বরাক শুধু নয়, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকারও লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হবেন।
অসমেরই বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা ভারতের নাগরিক। কারণ কোনও দেশের নাগরিকত্ব লাভ না করলে সেই মানুষটি ভোটাধিকার পেতে পারে না। সেই কারণেই ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদেরকে দিয়েই এনআরসি সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বরাক উপত্যকা নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটির দাবি, এনআরসি সংশোধনের ক্ষেত্রে ১৬টি প্রামাণ্য নথির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা ওই ১৬টিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে কেন? কমিটির যুক্তি, অসমে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ হয়েছে। বন্যায় ভেসে গিয়েছে বহু মানুষের বাস্তু ভিটে-সহ নথিপত্র। তাই এ সব ক্ষেত্রে সরকারকে নিয়ম শিথিল করতে হবে।
এনআরসি সংশোধন নিয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান দাবি করে আজ কমিটির তরফ থেকে বরাকে নিরবিচ্ছিন্ন আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করা হয়। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সংগঠনের সদস্যরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে করিমগঞ্জের জেলাশাসকের দফতরের সামনে আইন অমান্য শুরু করেন। তাঁরা দফতরের মূল প্রবেশপথ অবরোধ করে রাখেন। স্লোগান দিতে থাকেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বি সি নাথ, সার্কল অফিসার ধ্রুবজ্যোতি দেব এসে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা মূল প্রবেশপথ থেকে সরে দাঁড়াননি। আসেন করিমগঞ্জ পুলিশের এএসপি নবীন সিংহ। তিনিও অবরোধ প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় থাকায় ডাকা হয় সিআরপিএফ বাহিনীকে। এরপরই পুলিশ ও সিআরপিএফ টেনে হিঁচড়ে আন্দোলনকারীদের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতাহাতিও হয়। প্রায় শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে করিমগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিকেলেই আন্দোলনকারীদের ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy