Advertisement
E-Paper

ফ্রিজ করালেন দলের তহবিল, রফা বৈঠকে অনড়ই অখিলেশ

আপসের পথ খুঁজতে ভাইপোর বাড়িতে গেলেন কাকা। কথা বললেন দু’জনে। তার পরে দু’জনে মিলে গেলেন নেতাজির কাছে। ভাই শিবপাল যাদব ও ছেলে অখিলেশের সঙ্গে কথা বলে মিটমাট একটা কিছু করে ফেলা যাবে, আশায় ছিলেন নেতাজি মুলায়ম সিংহ যাদবও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৩

আপসের পথ খুঁজতে ভাইপোর বাড়িতে গেলেন কাকা। কথা বললেন দু’জনে। তার পরে দু’জনে মিলে গেলেন নেতাজির কাছে। ভাই শিবপাল যাদব ও ছেলে অখিলেশের সঙ্গে কথা বলে মিটমাট একটা কিছু করে ফেলা যাবে, আশায় ছিলেন নেতাজি মুলায়ম সিংহ যাদবও। সেই অনুযায়ী সাংবাদিক বৈঠকও ডেকে দেন বিকেলে। কিন্তু সেই সাংবাদিক বৈঠক আর করা হল না নেতাজির। কারণ, অখিলেশ আছেন অখিলেশেই। কাকা-বাবার সঙ্গে আপস আলোচনায় বসে একটি বিষয় তিনি আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দল বা পরিবারে ভাঙন তিনিও চান না। সে কারণেই অমর সিংহ সম্পর্কে তাঁর এত আপত্তি। আবার একই সঙ্গে এটাও অখিলেশ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সংগঠন ও ভোটের নিয়ন্ত্রণ— দু’‌টোই পুরোপুরি নিজের হাতেই রাখছেন তিনি।

সূত্রের খবর, সমাজবাদী পার্টির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে। অখিলেশ সেই অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে শিবপাল বা অন্য কেউ তাতে হাত পর্যন্ত না দিতে পারেন।

মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হল কি না, তা নিয়ে ভাবিত নন অখিলেশ। এমনকী, ভোট মিটলে দলের ‘হাইজ্যাক’ করা সর্বভারতীয় সভাপতির পদটি বাবাকে ফিরিয়ে দিতেও তিনি নীতিগত ভাবে রাজি। কিন্তু আপাতত সেই পথে হাঁটতে নারাজ। অখিলেশের আশঙ্কা, নেতাজির হাতে ফের ক্ষমতা গেলেই অমর সিংহ, শিবপাল ও সৎমা সাধনা ফের অখিলেশ-হটাও অভিযানে নেমে পড়বেন।

প্রশ্ন হল, এই মুহূর্তে সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতিটি তবে কে? মুলায়ম না অখিলেশ? কাগজে কলমে কী আছে, সে পরের কথা ময়দান কিন্তু অখিলেশের। তাঁর শিবিরের দাবি, গত কাল দু’শোর বেশি বিধায়ক অখিলেশের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন। বিধান পারিষদ, সাংসদদের সিংহভাগও তাঁরই দিকে। মুলায়ম-শিবির চায়, সর্বভারতীয় সভাপতির পদের দাবি থেকে অখিলেশ সরে দাঁড়ান। যদিও সে দাবিতে হাওয়া তোলার লোক মেলা ভার! এর আগে মুলায়ম যখন অখিলেশকে দলের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে, পরে দল থেকেই বহিষ্কার করার ঘোষণা করেছিলেন, তখন দলের দফতরের সামনের রাস্তা ছয়লাপ ছিল অখিলেশ-অনুগামীতে। কার্যত দলের দফতরেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নেতাজি ও তাঁর অনুগামীরা। ছবিটা পাল্টে গিয়েছে পুরো। দলের সদর দফতরে এখন শুধুই অখিলেশ অনুগামীদের ভিড়। রক্ত দিয়ে পোস্টার লিখছেন তাঁর অনুগামীরা। এক অনুরাগী তরুণী তো অখিলেশের জন্য সাইকেল প্রতীক চেয়ে রক্তে লেখা আর্জি পাঠিয়েছেন খাস নির্বাচন কমিশনের কাছে! ফলে দলে সদর বা আর কোনও দফতরের আশপাশে মুখ দেখাতেও আসছেন

না মুলায়মের কোনও অনুরাগী। দফতরের ধারেকাছে ঘেঁষলে অমর সিংহের কী হাল হতে পারে, সেটাই জল্পনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমাজবাদী পার্টি সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটে কার অনুগতদের প্রার্থী করা হবে, মূলত তা নিয়েই বিবাদ চলছিল কাকা-ভাইপোর। এখনও প্রত্যেকটি আসন ধরে ধরে আলোচনা চলছে। উত্তরপ্রদেশে টিকিট বণ্টন ঘিরে ফি ভোটেই কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই শিবপাল এই লাভের গুড় ছাড়তে রাজি নন। আজও অখিলেশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কাকার অনুরোধে কিছু আসনের দায়িত্ব ছাড়তে রাজি থাকলেও টিকিট বিলির মূল দায়িত্ব তিনি নিজের হাতেই রাখছেন।

অমর সম্পর্কে আরও কঠোর অখিলেশ। গোড়া থেকে বলে যাচ্ছেন, অমরকে দলেই রাখতে চান না। পারলে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকেও সরিয়ে দিতে চান। অখিলেশের দাবি, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের নির্দেশেই সমাজবাদী পার্টির ঘর ভাঙতে সক্রিয় হয়েছেন অমর। বিজেপির এই ‘দালাল’ যেন ভোট-পর্বে উত্তরপ্রদেশে পা না রাখেন, সেটাই নিশ্চিত করতে চান তিনি। অখিলেশ শিবিরের নেতা, সাংসদ নরেশ অগ্রবাল এ দিন বলেন, ‘‘সব কিছু সমাধানের পথেই এগোচ্ছিল। গত কাল রাতে অমর লখনউয়ে পৌঁছনোর পরেই ছবি পাল্টাতে শুরু করে।’’

অখিলেশের অনড় মনোভাবের ফলে দলে তাঁর অবস্থান যে নড়বড়ে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন অমর। তিনি শুধু মুলায়মের পাশে থাকার মন্ত্র আউড়ে চলেছেন। আজ অমর বলেন, ‘‘কারও পাশে থাকা অপরাধ হলে, শিবপালের মতো আমিও অপরাধী।’’ অখিলেশকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অখিলেশের রাস্তায় আমি আদৌ কাঁটা নই। কার সঙ্গে কত জন রয়েছে, তা দিয়ে শক্তি বিচার করা উচিত নয়। কাল পর্যন্ত শিবপালের সঙ্গে যাঁরা ছিল, তাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে পরিচিত ছিল। আজ তাঁরা অখিলেশের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন বলে, সকলে এখন সত্যম-শিবম-সুন্দরম!’’

কিরণময় নন্দ ও নরেশ অগ্রবালকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি অমর। বলেন, ‘‘নন্দ, ভাল করে যিনি হিন্দিই বলতে পারেন না, তিনি আমার বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া, সরকারি কর্মীদের বদলি ও নিয়োগে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলছেন! আর নরেশ সম্পর্কে অমরের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি আমলে উত্তরপ্রদেশে মন্ত্রী ছিলেন। তার পর কংগ্রেস, বিএসপি হয়ে এখন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ। তিনি আমার বিরুদ্ধে বিজেপির এজেন্ট বলে অভিযোগ তুলেছেন! এটা হাস্যকর।’’

Akhilesh Yadav SP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy