Advertisement
E-Paper

কুচিন্তার গুরু দলের দাপটে উদ্বিগ্ন অমর্ত্য

সম্প্রতি নানা উপলক্ষেই বিরোধী ঐক্যের গুরুত্বের কথা বলেছেন অমর্ত্য সেন। শনিবার সন্ধ্যায় শিশির মঞ্চে প্রতীচী ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তা আরও খুঁটিয়ে ব্যাখ্যা করলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৭
সরব: শিশির মঞ্চে প্রতীচী ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সরব: শিশির মঞ্চে প্রতীচী ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আজকের ভারতে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতির গায়ে আঘাতকে ‘সংখ্যাগুরুর দাপট’ বলে দেখতে রাজি নন তিনি। অমর্ত্য সেনের মতে, ‘‘সংখ্যাগুরু নয়, রাজনৈতিক কুচিন্তার গুরু একটি দল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে।’’ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের মোকাবিলার প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই ২০১৯-এ বিরোধী দলগুলির এককাট্টা হওয়ার দিকে ফের সওয়াল করলেন তিনি।

সম্প্রতি নানা উপলক্ষেই বিরোধী ঐক্যের গুরুত্বের কথা বলেছেন অমর্ত্য সেন। শনিবার সন্ধ্যায় শিশির মঞ্চে প্রতীচী ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তা আরও খুঁটিয়ে ব্যাখ্যা করলেন তিনি। মাত্র ৩১ শতাংশ ভোটের জোরেই ৫৫ শতাংশ আসন পেয়ে ২০১৪-য় একটি দল রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসীন হয়েছে, এ কথা মনে করিয়েছেন অমর্ত্য। অতএব তাঁর কথায়, ‘‘তাঁদের গুরুত্ব সংখ্যায় নয়, তবে রাজনৈতিক রাস্তায় যা আয়ত্ত করা সম্ভব তাঁরা তা পেরেছেন।’’ এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই পরবর্তী ভোটযুদ্ধে কী প্রশ্নগুলো আসছে, তা বোঝার তাগিদের কথা বলেছেন অমর্ত্য। এবং কে বাম, কে অ-বাম না-দেখে অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে হাত মেলানোর গুরুত্বের কথা বলেছেন।

এ দেশে সহিষ্ণুতার খামতি নিয়ে ‘বিপন্ন ভারত’ নামে একটি প্রবন্ধ সঙ্কলন প্রকাশিত হয় এই সন্ধ্যায়। এর পরে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বামপন্থার লড়াই নিয়ে সমাজের নানা ক্ষেত্রের মানুষজনের প্রশ্নের সূত্রে কথা বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। এবং মনে করিয়ে দেন, আবহমান ভারতে সংখ্যালঘু মানেই কিন্তু দুর্বল নয়। তাঁর কথায়, ‘‘বুদ্ধের পিছনেও সংখ্যা ছিল না। তথাকথিত সংখ্যালঘু মানে দেশের অনেকে আপনার বিরুদ্ধে, এটা ভাবা ঠিক নয়।’’ সুতরাং রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করলেই তাদের সংখ্যাগুরু বলে মেনে নিলে সেটা ‘নিজের পায়ে কুড়ুল মারা’র মতো হবে বলে ওই ধরনের ভাবনা বর্জন করতে বলেছেন অমর্ত্য।

আরও পড়ুন: পাঁচ শহরে রাফাল নিয়ে তির কংগ্রেসের

উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের কথাও। স্বৈরাচারের মোকাবিলায় কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক দলের দিকে ঝুঁকলেও এই মুহূর্তে সাম্প্রদায়িকতার অনাচারের থেকে বড় বিপদ নেই বলেই তাঁর মনোভাবে স্থিত থেকেছেন অমর্ত্য। নিজেকে রাজনৈতিক মতাদর্শে ‘বামপন্থী’ বলেই মনে করেন, কিন্তু অমর্ত্যের কথায়, ‘‘বামপন্থা ছাড়ব না, আবার কে বামপন্থী, শুধু সেটা দেখব না। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে হাত মেলাব নানা মতের লোকেদের সঙ্গে।’’ কিন্তু আজকের বামপন্থীদের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করার সেই তেজটা দেখতে না-পারার আক্ষেপও উঠে এসেছে। অসমে নাগরিক পঞ্জি প্রকাশের পরে বামেদের আগেই অ-বামপন্থী তৃণমূল কী ভাবে প্রতিবাদ করে এল, সে-প্রসঙ্গ তুলেছেন অমর্ত্য। তাঁর সরস টিপ্পনী, ‘‘ছোটবেলায় শুনতাম, ঈশ্বর আছে কি নেই। এখন অনেকেই বুঝতে পারেন না, সিপিএম আছে কি নেই!’’ দেশের সঙ্কট ও কর্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়ার ফাঁকে এই কৌতুকটুকুও ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহে মিশে গেল।

Amartaya Sen Economist অমর্ত্য সেন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy