Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অমিতকে পাল্টা মায়ার, ভোটের প্রচারে মেরুকরণ উস্কে ‘কসাব’ বর্ণমালা

বিজেপি হারলে বাজি ফাটবে পাকিস্তানে। বিহার নির্বাচনের শেষ দিকে মরিয়া অমিত শাহের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল এমনই কথা। পাকিস্তানে বাজি হয়তো ফাটেনি, কিন্তু বিজেপি বিলক্ষণ হেরেছিল বিহারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

বিজেপি হারলে বাজি ফাটবে পাকিস্তানে। বিহার নির্বাচনের শেষ দিকে মরিয়া অমিত শাহের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল এমনই কথা। পাকিস্তানে বাজি হয়তো ফাটেনি, কিন্তু বিজেপি বিলক্ষণ হেরেছিল বিহারে।

দু’বছরের মাথায় উত্তরপ্রদেশের ভোটের অর্ধেক যখন কেটে গিয়েছে, তখন সেই বিজেপি সভাপতির মুখ থেকে বেরিয়ে এল কসাবের কথা—মুম্বই হামলায় ধরা পড়া সেই পাক-সন্ত্রাসবাদী, যাকে সাড়ে চার বছর আগে ফাঁসি দেওয়া হয়। পাকিস্তানের এই সন্ত্রাসবাদীর নামের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের তিন বিরোধী দলকে জুড়লেন অমিত শাহ। বললেন, ‘ক’ মানে কংগ্রেস, ‘স’ মানে সমাজবাদী পার্টি আর ‘ব’ হল বহুজন সমাজ পার্টি। জনসভায় বললেন, এই কসাবের থেকে উত্তরপ্রদেশের মুক্তি চাই।

ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বেরিয়েছে ‘কবরস্থান’ আর ‘শ্মশানঘাট’-এর কথা। আর এ বার তাঁর অতি-বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহের মুখে কসাব। উত্তরপ্রদেশের ভোটের শেষ লগ্ন আসতেই বিহারের ধাঁচেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তরোত্তর মেরুকরণের রাজনীতির মাত্রা চড়াচ্ছেন। যা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী দলগুলি রে-রে করে উঠেছে। মোদী-শাহ জুটি কী ভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছেন, তাই নিয়ে পাল্টা সোচ্চার হচ্ছে তারা। এ দিন ভোটের প্রচারে গিয়ে মায়াবতী মন্তব্য করেছেন, ‘‘গোটা দেশ জানে অমিত শাহের থেকে বড় জঙ্গি বা কসাব আর কেউ নেই।’’ মায়াবতীকে এ দিন সমর্থন করেন সীতারাম ইয়েচুরিও। কলকাতায় তিনি বলেন,‘‘বহেনজি ঠিকই বলেছেন। সব থেকে বড় কসাব তো অমিত শাহ নিজেই।’’ আর কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মন্তব্য, ‘‘কসাব সন্ত্রাসবাদী, এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু কংগ্রেস, সপা, বিএসপিকে এর মধ্যে টেনে এসে অমিত শাহ যে কথা বলেছেন, তা বিজেপির সাম্প্রদায়িক মনোভাবকেই তুলে ধরছে।’’ রাজনীতির এই চাপানউতোরের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের মধ্যলগ্ন থেকে কেন উগ্র মেরুকরণের রাজনীতিতে সওয়ার হচ্ছেন মোদী-অমিতরা?

আরও পড়ুন: গ্রামীণ ওড়িশায় পদ্ম-কাঁটায় বিদ্ধ বিজেডি

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য মুখে মেরুকরণের কথা অস্বীকার করছেন। এমনকী খোদ অমিত শাহ যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘অন্য দলগুলি যে রাজনীতি করছে, বিজেপি সে সব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে একে মেরুকরণের চেষ্টা বলা হয় না, বিজেপির বেলায় সে ভাবেই দেখা হয়।’’ এ তো গেল মুখের কথা! কিন্তু ঘরোয়া স্তরে বিজেপির নেতারা কবুল করছেন, মেরুকরণের তাস খেলা দলের সুচিন্তিত কৌশল। তাঁদের দাবি, বিহারে এর ফল না পেলেও উত্তরপ্রদেশে এই রাজনীতিতে সওয়ার হয়েই বিজেপি বাজিমাত করবে।

বিজেপির ব্যাখ্যা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু আধিক্য রয়েছে। সেখানে ভোট হয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের যে এলাকায় এখনও ভোট বাকি, সেখানে ধর্মের থেকেও জাত-পাতের প্রাধান্য বেশি। রাজ্যের পূর্ব প্রান্তে সংখ্যালঘুরা নির্ণায়ক শক্তি নয়। কিছু কিছু এলাকায় সংখ্যালঘু প্রাধান্য থাকলেও, সেই ভোট মায়াবতী বা অখিলেশের কাছে যাবে। কিন্তু বিজেপির মেরুকরণের লক্ষ্য হল, হিন্দু ভোটকে যতটা সম্ভব একজোট করা। যাতে জাত-পাতের অঙ্ক মুছে ফেলে ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দুদের সমর্থন বিজেপির ঝুলিতে নেওয়া যায়।

মেরুকরণের তাস এখন চরমে নিয়ে গিয়ে খেলতে হচ্ছে, কারণ বিজেপির তোলা অন্য সব শ্লোগান ভোটে সে ভাবে কাজ করেনি। নোট বাতিল নিয়ে প্রচারে রাজি হননি বিজেপিরই স্থানীয় নেতারা। উল্টে নোট বাতিলের ‘কুফল’ নিয়ে রাহুল-অখিলেশের প্রচার মোদীর পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথাও ধোপে টিঁকছে না। বিধানসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে মোদী এমন কিছু করে দেখাতে পারেননি, যাতে অখিলেশের উন্নয়নের স্লোগানকে ছাপিয়ে যাওয়া যায়। অখিলেশ নিজেও দুর্নীতির কালি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সফল হয়েছেন। আর বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ না থাকায় ভোটের প্রচারে সব কিছু মোদীকে ঘিরেই। সেই মোদী যতই নিজেকে ‘ইউপিওয়ালা’ বলে প্রচার করুন, অখিলেশরা তাঁকে বিহারের ধাঁচে ‘বাহারি’ বলেই দূরে সরিয়ে দিতে চাইছেন। গুজরাতের ‘গাধা’ বলে কটাক্ষ করে মোদীকে উত্তরপ্রদেশের বাইরের লোক বলেই তুলে ধরছেন। এ সবের মধ্যেই মহারাষ্ট্র ও ওড়িশার ভোটের সাফল্য দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপিকে চাঙ্গা করে তুলছে। বিশেষ করে নোট বাতিলের পরে মানুষের অমন রায়কে নিয়ে প্রচারও করতে চাইছে মোদী শিবির। কিন্তু কিন্তু অন্য রাজ্যে সাফল্য যে উত্তরপ্রদেশেও কাজ করবে, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তাই উত্তরপ্রদেশে এখন মেরুকরণের তাসকেই জোরালো করে তুলতে চাইছেন মোদী-অমিত শাহরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah Mayawati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE