Advertisement
E-Paper

হিমন্তের নাম উঠতেই মেজাজ হারালেন অমিত

যে প্রধান সেনাপতিকে ভরসা করে অসমে পরিবর্তনের লড়াই এবং মিশন-৮৪ সফল করার যুদ্ধে নেমেছে বিজেপি, সেই হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে নিয়ে শেষ দিনের প্রচারে বেজায় বেকায়দায় পড়লেন দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৫

যে প্রধান সেনাপতিকে ভরসা করে অসমে পরিবর্তনের লড়াই এবং মিশন-৮৪ সফল করার যুদ্ধে নেমেছে বিজেপি, সেই হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে নিয়ে শেষ দিনের প্রচারে বেজায় বেকায়দায় পড়লেন দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

আজ নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে অমিত শাহ সাংবাদিক সম্মেলন করে অসমকে বাংলাদেশি-মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণ গগৈ সরকারের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি ও দুর্নীতির কড়া সমালোচনা করছিলেন। তিনি ঘোষণা করেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে গগৈয়ের আমলে হওয়া ১৫ বছরের দুর্নীতির তদন্ত করাবেন। আর তখনই সাংবাদিকরা চেপে ধরেন অমিতকে। কংগ্রেস আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তত্কালীন মন্ত্রী হিমন্তের হাতে থাকা দফতরগুলি নিয়েই। এমনকী, হিমন্ত বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আগে সর্বানন্দ সোনোয়ালরা বার বার হিমন্তের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। অমিতের বক্তব্য ছিল, ‘‘হিমন্ত আমাদের গগৈ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে খোলাখুলি সব জানিয়েছেন। বলেছেন, সরকারের ‘মাথা’র আদেশেই তিনি যা করার করেছেন?’’ সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি অমিত মেনে নিচ্ছেন, হিমন্তও দুর্নীতির শরিক ছিলেন? অমিত বার বার বলার চেষ্টা করে যান, দুর্নীতির সব দায় তরুণ গগৈয়ের। শেষ পর্যন্ত যুক্তি ধোপে টিঁকছে না বুঝে মেজাজই হারিয়ে ফেললেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ অমিত শাহ। দুর্নীতিতে হিমন্তেরও ভূমিকা যে ছিল তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়ে ‘ক্ষিপ্ত’ অমিত সাংবাদিকদেরই পাল্টা আক্রমণ করেন, ‘‘আপনাদের উদ্দেশ্য সংবাদ পরিবেশন করা না অন্য কিছু? আমার মুখ দিয়ে এ সব বলাতে পারবেন না। আমি এ নিয়ে কোনও জবাবই দেব না।’’ মাঝ পথেই শেষ হয়ে যায় সাংবাদিক বৈঠক।

গত কাল হিমন্তের কেন্দ্র জালুকবাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সারদা প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। অমিত শাহের কাছে জানতে চাওয়া হয়, অসমে হওয়া চিটফান্ড কেলেঙ্কারিগুলির সিবিআই তদন্ত হবে কি? অমিত জানান, সব তদন্ত হবে। তবে কী সারদা কাণ্ডে হিমন্তের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হবে, না কি হিমন্তকে ‘ক্লিনচিট’ দিচ্ছে বিজেপি? ক্ষুব্ধ অমিত শাহ জানান, তাঁরা কাউকেই ‘ক্লিনচিট’ দিচ্ছেন না। হিমন্তের হয়ে সাফাই দেন, অভিযোগ উঠলেই দোষ প্রমাণ হয় না।

অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে গগৈয়ের সমালোচনা করে শাহ বলেন, ‘‘কংগ্রেস ইচ্ছে করে অনুপ্রবেশে মদত দিয়ে গিয়েছে। গগৈ নিজে ২০১৩ সালে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে রাজ্যে থাকা বাংলাদেশিদের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। অথচ এখন বলছেন, অসমে কোনও বাংলাদেশি নেই। আমরা ক্ষমতায় এসেই সেই সমস্যা মেটাব।’’ কিন্তু অগপ দু’দফায় ক্ষমতায় থেকেও কেন সমস্যা মেটায়নি? অমিতের তাত্ক্ষণিক উত্তর, ‘‘কেন্দ্রে বিজেপি থাকলে এই সমস্যা হত না।’’ কিন্ত তখন তো কেন্দ্রেও বিজেপি ক্ষমতায় ছিল। সে কথা মনে করানোয় অপ্রস্তুত অমিত। আবার সাফাই দেন, ‘‘আসলে তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। সীমান্ত সমঝোতা হয়নি। এবার আমরা ক্ষমতায় আসার দেড় বছরের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছি। তাই সীমান্ত পুরো বন্ধ করতে আর অসুবিধে হবে না। ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মধ্যে রাজ্য বাংলাদেশি মুক্ত করতে বিশেষ কমিটি গড়ে কাজ শুরু করা হবে।’’

অর্থাত আবার বঙালি-খেদাওয়ের আশঙ্কা উস্কে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথম পর্যায়ের ভোটে উজানি অসমে গিয়ে হিমন্ত বলেছেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৫১ সালের পরে রাজ্যে আসা সকলকে বের করে দেওয়া হবে। কিন্তু এই বিজেপি নেতারাই আবার বরাক উপত্যকায় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলাভাষী ও সংখ্যালঘু এলাকায় অন্য সুরে কথা বলছে। এক দিকে, তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত অসমে আসা হিন্দু বাঙালিদের শরণার্থীর মর্যাদা দেবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। আবার বলছে, নাগরিক পঞ্জির ভিত্তিবর্ষ হবে ১৯৭১ সাল।

হিমন্ত ও বিজেপির এই দ্বিচারিতার কড়া সমালোচনা করে তরুণ গগৈ বলেন, ‘‘অসম চুক্তি না মেনে হিমন্ত ১৯৫১ সালের পরে রাজ্যে আসা সকলকে বহিরাগত সাজানোর পরিকল্পনা করছে। তাঁদের ভোটাধিকার কাড়তে চাইছে।’’ দ্বিতীয় পর্যায়ে ধুবুরি, বরপেটা, বড়োভূমির বাংলাভাষী, সংখ্যালঘু, শিবিরবাসী ও চরের বাসিন্দারা এমনিতেই ‘বাংলাদেশি’ তকমার জ্বালায় অতিষ্ঠ। হিমন্তের ওই মন্তব্যকে তুলে ধরে তাঁদের ভোট টানতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে কংগ্রেস।

এ বিষয়ে অমিত শাহের জবাব, ‘‘আমরা অসম চুক্তির কাছে দায়বদ্ধ। তা মেনেই কাজ করা হবে। রাজ্যে থাকা বাংলাদেশিদের বের করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, নতুন করে বাংলাদেশি ঢুকতে না দেওয়া।’’

Amit shah himanta biswa sarma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy