দিল্লি থেকে বিহার বিধানসভা, মায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতের পুর এবং পঞ্চায়েত ভোট— একের পর এক নির্বাচনের ফলাফলে এমনিতেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে অমিত শাহের নেতৃত্ব নিয়ে। তার মধ্যেই মোদী-ঘনিষ্ঠ এই নেতা আরও একবার বিজেপি সভাপতি পদে বসার জন্য সক্রিয় হতেই দলের অন্দরে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রবীণদের একটা অংশের ক্ষোভ। প্রকাশ্যে কেউ এখনও সরাসরি মুখ না খুললেও তাঁদের ক্ষোভের আঁচ মিলছে নানা ভাবে।
যেমন আজ। লালকৃষ্ণ আডবাণী ও শান্তাকুমার। বিহারের ভরাডুবির পরেই দলের যে প্রবীণ নেতারা পত্রবোমা ফাটিয়েছিলেন, সেই তালিকায় আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীর সঙ্গেই ছিলেন শান্তাকুমারও। এক সময় আডবাণীর সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট দূরত্ব থাকলেও অমিত শাহের দৌলতে দুই প্রবীণ নেতা এখন একই বৃত্তে! আডবাণীদের ওই পত্রবোমার মর্মার্থই ছিল সভাপতি পদে অমিতের ব্যর্থতা। যা নিয়ে হইচইয়ের জেরে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় সঙ্ঘকে। সেই পত্রবোমার পর আজ এক সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আডবাণী ও শান্তাকুমার। সেখানে সরাসরি মন্তব্য না করলেও তাঁদের প্রতিক্রিয়া দেখে অনেকেরই ধারণা, অমিতের দ্বিতীয় দফা সভাপতি হওয়ার পথে কাঁটা বিছোতে সক্রিয় হবেন তাঁরা।
আডবাণী ও শান্তা কুমার এ দিন কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি খতিয়ে দেখার জন্য যে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান শান্তাকুমার, সেখানকারই সদস্য আডবাণী। এই কমিটি আজ সংসদে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, সেখানে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কর্পোরেট সংস্থাগুলি সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করতে লাভের ২ শতাংশ যাতে ঠিক মতো খরচ করে, সে ব্যাপারে নজরদারি করুক সরকার।
এই অনুষ্ঠানেই শান্তাকুমারকে প্রশ্ন করা হয়, ক’দিন আগে আপনি ও আডবাণী বিহার ফলের পর দলের সভাপতিকে চিঠি লিখেছিলেন। যে ভাবে সরকারকে আপনারা পরামর্শ দিচ্ছেন, সে ভাবে দলকেও দিয়েছিলেন। দল কি আপনাদের পরামর্শ মানছে? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে শান্তাকুমার বলেন, ‘‘আমরা যা সুপারিশ দিয়েছি, তার ভিত্তিতে সরকার তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে জানাবে, তারা কী কাজ করেছে। তাতে যদি আমরা সন্তুষ্ট না হই, তা হলে আবার সচিবদের ডেকে সরকারকে কঠোর বার্তা দিতে পারি।’’ কিন্তু দলকে যে চিঠি দিয়েছেন, তারাও কি এ ভাবে আপনাদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেবে? এ বারেও সরাসরি উত্তর না দিয়ে শান্তাকুমারের জবাব, ‘‘আমি ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম! আডবাণী ও আমাকে দেখে আপনারা এই প্রশ্নই করবেন। কিন্তু বলে রাখি, সরকারিতন্ত্র আর দল তো এক নয়।’’
এই প্রশ্নোত্তর পর্বে আগাগোড়াই নীরব থেকেছেন আডবাণী। পরেও কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। শান্তাকুমারের জবাব এবং আডবাণীর নীরবতাকে ঘিরেই আলোচনা শুরু হয় নানা মহলে। অনেকেই বলছেন, শান্তাকুমারের বক্তব্যে স্পষ্ট, সংসদীয় ব্যবস্থায় তাঁরা সরকারের থেকে যা প্রত্যাশা করেন, বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের থেকে তা করেন না! এই নেতাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, যতই অমিত ফের সভাপতি হওয়ার জন্য সক্রিয় হোন, খেলা এখনও শেষ হয়নি। উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন বিক্ষুব্ধ প্রবীণরা। এখনও নতুন সভাপতি স্থির হতে গোটা মাস বাকি। অতীতে শেষ মুহূর্তে সভাপতি পদ থেকে বিদায় হয়েছিল নিতিন গডকড়ীর। বিদায়ের কয়েক ঘণ্টা আগেও গডকড়ী বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, তিনি থাকছেন। কিন্তু সন্ধ্যাতেই তাঁকে সরে যেতে হয়!
যদিও বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের বক্তব্য, গডকড়ীর সময় দলে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ছিল আলাদা। তা ছাড়া তখন বিজেপি বিরোধী আসনে। এখন তারা ক্ষমতায়। আর সেখানে রাশ মোদীর হাতে। মোদীকে চটিয়ে সঙ্ঘও এখনই কোনও পদক্ষেপ করবে না। তা ছাড়া আডবাণীর সময়েও দল হেরেছে। তাই এ সব বিক্ষোভে খুব লাভ হবে না। মোদী না চাইলে অমিত শাহকে সরানো কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy