এক জন মুখ্যমন্ত্রী তিহাড় জেলে বসে সরকার পরিচালনা করছেন, এমনটা স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মধ্যে ঘটেনি! সংবিধান সংশোধনী বিলের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আবগারি মামলায় দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের প্রসঙ্গ টেনে শাহ জানান, করাবন্দি মন্ত্রীদের পদচ্যুত করতে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল অতি প্রয়োজনীয়।
২০২৪ সালের মার্চে আবগারি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল। গ্রেফতারির পরেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি তিনি। বস্তুত, কেজরীই এ দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি গ্রেফতার হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন এবং পুননির্বাচিত হওয়ার আগে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসবেন না। কেজরীর গ্রেফতারির প্রসঙ্গ তুলে বুধবার শাহ বলেন, ‘‘সাংবিধানিক নৈতিকতার স্বার্থে বিরোধীদের উচিত এই বিলকে সমর্থন করা।’’
লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যের মন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনও মন্ত্রী যদি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে টানা ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিন তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। পাঁচ বছর বা তার বেশি জেল হতে পারে, এমন অপরাধগুলিকে গুরুতর হিসাবে ধরা হবে। কিন্তু গত বুধবার ওই বিল পেশের সময় বিরোধীরা হট্টগোল করেন। তাঁদের দাবি, এই বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে আরও সহজে ব্যবহার করবে মোদী সরকার তথা বিজেপি।
সম্প্রতি কেরলে একটি সংবাদমাধ্যম আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওই বিল প্রসঙ্গে শাহ বলেন, ‘‘দেশের জনতা কি চান যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী জেল থেকে সরকার পরিচালনা করুন? এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। এখন ওঁরা (বিরোধীরা) প্রশ্ন করছেন যে এই আইন কেন আগে সংবিধানে ছিল না? আরে সংবিধানের খসড়া তৈরির সময় কে ভেবেছিলেন যে জেলে থেকেই কেউ সরকার চালাবেন?’’ এর পর কেজরীওয়ালের প্রসঙ্গ টেনে শাহ বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেকার ঘটনা। গ্রেফতারির পরে জেল থেকে এক মুখ্যমন্ত্রী সরকার চালিয়েছেন। তার পরেও সংবিধান সংশোধনী জরুরি নয়?’’ তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘ওই ঘটনা না-ঘটলে সংশোধনী বিল আনারও প্রয়োজন ছিল না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেজরীওয়াল পদত্যাগ না-করলে উনি আজও বদলাতেন না।’’
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেও সংশোধনী বিল নিয়ে একই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি কেজরীওয়ালের প্রসঙ্গ টানার সঙ্গে সঙ্গে নাম না করে শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রেশন দুর্নীতি মামলার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিয়েছেন।