অমরেন্দ্র সিংহ
রাজ্যে ঘোষণা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় শোক। কিন্তু আজ অমৃতসরে রেল দুর্ঘটনায় অমরেন্দ্র সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা ক্ষোভের আঁচ রীতিমতো টের পেল প্রশাসন।
অমৃতসরের দুর্ঘটনার পরে এখন পরিজনের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন অনেকে। তারই মধ্যে আজ অমৃতসরের জোড়া ফটকের কাছে দুর্ঘটনাস্থলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। সেখানে তার আগে থেকেই প্রবল হচ্ছিল সরকার-বিরোধী স্লোগান। ‘অমরেন্দ্র সিংহ মুর্দাবাদ’, ‘পঞ্জাব পুলিশ মুর্দাবাদ’-এর মতো স্লোগানের পাশাপাশি গোলমালের আশঙ্কাও করছিল প্রশাসন। কারণ, জনতা লাইন থেকে পাথর তুলে নিয়ে ছুড়তে শুরু করতে পারে বলে ধারণা হয়েছিল পুলিশের একাংশের। ফলে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পঞ্জাব পুলিশের কম্যান্ডো বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রী আসার জন্য অমৃতসরের একটি পথ বন্ধ করা হয়। তাতে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়ে।
সিভিল হাসপাতাল ঘুরে ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সিভিল হাসপাতালেই কাকা ব্রহ্মপ্রকাশ ডোগরা এসেছিলেন ভাইপো ও তাঁর পরিবারের মৃতদেহ নিতে। ভাইপো অমন (৪০), তাঁর স্ত্রী পুজা এবং দুই সন্তান কশিশ (১০) ও নকুল (১৪) সুন্দরনগর থেকে এসেছিলেন
রাবণ পোড়ানো দেখতে। ভাইপো অমন ও তাঁর দুই ছেলে-মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন ব্রহ্ম। জানেন না ভাইপোর স্ত্রী পুজা কোথায়! ব্রহ্মপ্রকাশের সঙ্গে আসা এক দল যখন সিভিল লাইনে মৃতদেহ শনাক্তকরণের জন্য দাঁড়িয়ে তখনই আর এক দল হন্যে হয়ে পুজাকে খুঁজে যাচ্ছে অন্য হাসপাতালগুলিতে। কিন্তু ব্রহ্মের চিন্তা হল, পুজার সঙ্গে দেখা হলে কী বলবেন তিনি। কী ভাবে জানাবেন স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর খবর।
মৃত্যুর উপস্থিতি খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন পরেশ রাম। উত্তরপ্রদেশের মৌউয়ের বাসিন্দা হলেও, ১৫ বছর ধরে মজুরির কাজে অমৃতসরে। সিভিল লাইন হাসপাতালে ট্রমা ওয়ার্ডে ডান হাত ভেঙে ভর্তি হয়েছেন তিনি। পাশের বন্ধুকে দেখিয়ে বললেন, “ভাগ্যিস ও পিছন থেকে টেনে ধরেছিল। না হলে!” কথা শেষ করতে পারেন না পরেশ। পাশের বেডেই ভর্তি দুই সম্পর্কিত ভাই লবকুশ এবং সন্দীপ। এক জনের মাথায় আর অন্য জনের হাতে চোট লাগলেও এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন পরিবারের বাকি সদস্যেরা। উল্টো দিকের বেডে শুয়ে থাকা সঞ্জীব কুমার স্মৃতিভ্রংশের শিকার। কিছুই মনে নেই তাঁর। চিকিৎসক রাজেশ কুমার জানালেম, মানসিক আঘাতে সাময়িক স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে সন্দীপের।
এ দিন অমৃতসরের হাসপাতালে ঢুকে পড়েছেন স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের হাতে ফল, জলের বোতল তুলে দিতে থাকেন তাঁরা। ফলে হাসপাতালের মধ্যে অব্যবস্থা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অনেকে আবার দুর্ঘটনাস্থলের কাছে গিয়ে ছবি-ভিডিয়োও তুলেছেন। বিরোধীদের দাবি, অমৃতসরের দুর্ঘটনার পরে পঞ্জাবের প্রশাসনিক অব্যবস্থার চিত্রটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy