অস্ট্রেলিয়ান টেডি বেয়ার। দাম দু’লক্ষ টাকা। সঙ্গে দেওয়া রয়েছে একটি কোয়ালার ফটো। অনলাইন কেনাবেচার একটি সাইটে এই বিজ্ঞাপন দেখে চোখ কপালে উঠেছিল বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর কর্তাদের।
শুধু এই বিজ্ঞাপনই নয়, সাইটটি ঘাঁটাঘাটি করতে বেরিয়ে এসেছিল আরও একটি বি়জ্ঞাপন। তাতে বলা হয়েছিল বিক্রি হবে এক জোড়া ঘুঘু। দাম আশি হাজার টাকা।
পুরনো মালপত্র কেনবেচার এই সাইটে আলাদা একটি বিভাগে কুকুর, গরু, ছাগল, খরগোশ, মুরগি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় নিয়মিত। সঙ্গে থাকে বিক্রেতাদের মোবাইল নম্বর। আগ্রহী ক্রেতারা ফোনে সরাসরি যোগাযোগ করে নেন বিক্রেতাদের সঙ্গে। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই সাইটে নজরদারি চালায় বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো। ব্যুরোর এক কর্তা জানান, এই সাইটগুলি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, সাধারণ কেনাবেচার ফাঁকে চোরাকারবারিরাও এখন এর মাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে।
কী ভাবে? ব্যুরো সূত্রের খবর, এই ধরনের অনলাইন সাইটে পোষ্য কেনাবেচার বিজ্ঞাপনের আড়ালে কখনও শুধুমাত্র ছবি আবার কখনও ‘কি-ওয়ার্ড’ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, মাস খানেক আগে ‘ওএলএক্স’-এ অনলাইনে পোষ্য কেনাবেচার আড়ালে কিছু বন্যপ্রাণী কেনাবেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ পায় তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সাইটের পোষ্য বিভাগটি ঘেঁটে তাঁরা দেখতে পান ঘুঘু, টিয়া জাতীয় ভারতীয় পাখি বিক্রি করতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া রয়েছে। ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইনে এই ধরনের পাখি কেনাবেচা নিষিদ্ধ। ওই সাইটেই রয়েছে ‘অস্ট্রেলিয়ান টেডি বেয়ার’ বিক্রির একটি বিজ্ঞাপনও। কোয়ালা ভারতের প্রাণী না হলেও আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে এটির বেচাকেনা নিষিদ্ধ। এমনকী, বাড়িতে এই প্রাণীটি পোষা যায় না। মূলত এই বিজ্ঞাপন নিয়েই শুরু হয়ে যায় তদন্ত। আনন্দবাজারের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয় ওই বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে। প্রথমে তিনি জানান, প্রাণীটি কিনতে চাইলে আসতে হবে বারাণসীতে। পরে জানান, তাঁর কাছে এ রকম কোনও প্রাণী নেই। নিছক মজা করার জন্য তিনি এই বিজ্ঞাপনটি পোস্ট করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। যদিও তাঁর এই দাবির সত্যতা কতটা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ বন্যপ্রাণ অপরাধ ব্যুরোর কর্তারাই।
প্রাথমিক তদন্তের পরে তাঁরা জানিয়েছেন, ধরা পড়ার ভয়ে অনেক সময়ে বিজ্ঞাপনদাতারা অভিযোগ স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বিজ্ঞাপনে কোয়ালা-বিক্রেতার টেলিফোন নম্বর থাকা সত্ত্বেও বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর দাবি, ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে নথিভুক্ত বন্যপ্রাণী বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও কোয়ালার ক্ষেত্রে তাঁরা কোনও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। ওই আধিকারিক জানাচ্ছেন, সারা বিশ্বে কোয়ালা কেনাবেচা এবং পোষা নিষিদ্ধ হলেও ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে তা নথিভুক্ত নয়। ফলে কাস্টমসের নজর এড়িয়ে দেশের ভিতরে ঢোকার পরে এই ধরনের প্রাণীর উপরে তাঁদের কোনও আইনি হাত থাকে না।
কিন্তু ‘ওএসলএক্স’-এর সাইটে যে বেআইনি জিনিস বা পোষ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কেনাবেচা হয় তা স্পষ্ট করেছেন বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর পূর্বাঞ্চল শাখার ডেপুটি অধিকর্তা অভিজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি জানান, ওই অনলাইন সাইটের হাতির দাঁত বিক্রির বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ রাজ্য থেকেই সেই বিজ্ঞাপনদাতাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বিজ্ঞাপনটি ছাড়াও আরও বেশ কিছু বন্যপ্রাণী বিক্রির বিজ্ঞাপন তাঁদের নজরে আসে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতারা অন্য রাজ্যের হওয়ায় তাঁরা সেই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেন। তবে তার পর থেকেই সাইবার বিশেষজ্ঞ দিয়ে ওই সংস্থার পোষ্য কেনাবেচার বিজ্ঞাপনগুলির উপরে নজর রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিজিৎবাবু।
এ বিষয়ে ‘ওএলএক্স’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা বেআইনি কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি দেন না। তা সত্ত্বেও নজর এড়িয়ে এ রকম কোনও বিজ্ঞাপন বেরোলে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তা সরিয়ে দেওয়া হয়। ওএলএক্স কর্তৃপক্ষকে পোষ্য কেনাবেচার বিভাগটির বিজ্ঞাপনের ‘ফিল্টারিং’ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে বলছে বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy