প্রতিবাদী পোস্টার। — ফেসবুক
সাদা পোশাকে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকল। পড়ুয়াদের নামের তালিকা হাতে নিয়ে কে কোন হস্টেলে থাকে, খোঁজ করল। এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ছাত্র সংসদের সভাপতিকে গ্রেফতার করে নিয়েও গেল।
দু’দিন আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আফজল গুরুর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে তার ফাঁসির বিরোধিতা করে আয়োজিত অনুষ্ঠানের জেরেই এই ধরপাকড়। শুক্রবার পুলিশ যখন ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করছে, শহরে তখন প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
কিছু দিন আগে আফজলের ফাঁসির বিরুদ্ধে একই ধরনের কর্মসূচি ঘিরে উত্তাল হয়েছিল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যায় যা চরমে পৌঁছয়। এ বার জেএনইউ-এর ধরপাকড়কে ঘিরে ফের শিক্ষাজগতে আলোড়ন। জেএনইউ-এর শিক্ষকদের বড় অংশ প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। জেএনইউ-এর প্রাক্তনী, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করেন, ‘‘কী হচ্ছে কী?... এ সব তো জরুরি অবস্থায় সময়ে হতো!’’
ধৃত কানহাইয়া কুমার সিপিআই-এর ছাত্র সংগঠন এআইএসএফের নেতা। তাঁকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। খোঁজ চলছে বিভিন্ন বাম সংগঠনের আরও কুড়ি জন ছাত্রছাত্রীর। জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে আজ দিল্লির রাজপথে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে বি়জেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি।
৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউ-এর অনুষ্ঠানে দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে বলে সর্বপ্রথম সরব হয় এবিভিপি-ই। আগের দিন আফজলকে নিয়ে প্রেস ক্লাবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এস এ আর গিলানির অনুষ্ঠানও তাদের প্রতিবাদে ভেস্তে যায়। এর পরে বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরি এবং এবিভিপি-র অভিযোগের ভিত্তিতেই কানহাইয়া কুমার-সহ একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। গিলানির বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে, জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সংসদ হামলা সংক্রান্ত যে মামলায় আফজলের ফাঁসি হয়, ওই একই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন গিলানি। পরে প্রমাণাভাবে ছাড়া পান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দুজনেই এ দিন সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, দেশবিরোধী কাজকর্ম, মাদার ইন্ডিয়ার প্রতি অসম্মান বরদাস্ত করা হবে না। যদিও এআইএসএফের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী কণ্ঠস্বরকে রুখতেই বাম ছাত্র সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে বেছে বেছে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। এও এক ধরনের অসহিষ্ণুতা বলেই দাবি করছেন ইয়েচুরিরা। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীও বলছেন, মোদী সরকারের সুরে সুর মেলাচ্ছে না বলেই জেএনইউ-এর মতো প্রতিষ্ঠানকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এটা মানা যায় না। যদিও প্রতিবাদের নামে জাতীয়তাবাদ-বিরোধী আবেগও সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করিয়েছেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে এ দিনই প্রতিবাদের অধিকার সংক্রান্ত একটি আলোচনায় অমর্ত্য সেন বলেন, অসহিষ্ণুতা ভারতের ঐতিহ্য নয়। ঋক বেদে নানা মতের আদানপ্রদানে জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গো-মাংস খাওয়ার কারণে কাউকে বাড়িতে ঢুকে খুন করার মতো ঘটনায় ভারত সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে গোটা বিশ্বে। বিরোধী মত প্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখার লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উপরে এ দিন জোর দিয়েছেন অমর্ত্য। তাঁর মতে, ‘‘অসহিষ্ণুতার প্রতি আমরা বড্ড বেশি সহিষ্ণু!’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, প্রতিবাদের ভাষাও যাতে উগ্র না হয়, সেটা নজর রাখা দরকার। সাধারণত পরাজয়ের মানসিকতা থেকেই প্রতিবাদ আন্দোলন বিপথগামী হয় বলে অমর্ত্যের পর্যবেক্ষণ।
কেন্দ্রীয় সরকার আপাতত জেএনইউ-এর ঘটনায় বিপথগামিতাই প্রকট বলে দাবি করছে। আদালতে ৯ তারিখের যে ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়েছে পুলিশ, সেখানে কাশ্মীরের স্বাধীনতা চেয়ে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে বলে দেখা গিয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ছাত্রনেতা অবশ্য আদালতে বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়নি। তিনি ওই অনুষ্ঠানে ছিলেনও না। বিক্ষোভ মিছিল শুরু হওয়ায় এবিভিপি সমর্থকদের সঙ্গে আয়োজকদের বচসা বাধে। তিনি তখন ঝামেলা থামাতে ঘটনাস্থলে যান। এই দাবির সপক্ষেও ভিডিও ফুটেজ দেখান তিনি।
তবে সামগ্রিক ভাবে পুলিশ যে ভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকে নজরদারি চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহলই। বছর দুয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকে ছাত্র পেটানোর ঘটনাতেই ‘হোক কলরব’ আন্দোলনে মুখর হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আজ সন্ধ্যায় সিপিআই সাংসদ ডি রাজা ও পল্লব সেনগুপ্ত দেখা করেন জেএনইউ-এর উপাচার্য জগদীশ কুমারের সঙ্গে। উপাচার্য তাঁদের জানান, পুলিশ এসে কুড়ি জন ছাত্র-ছাত্রীর একটি তালিকা দিয়ে কে কোন হস্টেলে থাকে তা জানতে চেয়েছে। কুড়ি জনই বামপন্থী বলে পরিচিত। তালিকায় রয়েছেন ডি রাজার মেয়ে অপরাজিতা রাজাও। সন্ধ্যায় জেএনইউ-র শিক্ষকরা একটি প্রতিবাদ মিছিল বার করেন। প্রশ্ন তোলা হয়, কেন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার পুলিশকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতে দিলেন। জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়টা সংবিধান লঙ্ঘনের জায়গা নয়। তেমন হলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ করতেই পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy