Advertisement
E-Paper

ব্যর্থতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে সাফল্য ফিরি জেটলির

কর সংক্রান্ত বিবাদ মিটিয়ে লগ্নিকারীদের ইতিবাচক বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করলেন অরুণ জেটলি। কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতি নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই গেল। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছরে বিনিয়োগে তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। বিদেশি লগ্নির জন্য অনেক দরজা খুলে দেওয়া হলেও সেই ছবিটাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:৩৫

কর সংক্রান্ত বিবাদ মিটিয়ে লগ্নিকারীদের ইতিবাচক বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করলেন অরুণ জেটলি। কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতি নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই গেল।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছরে বিনিয়োগে তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। বিদেশি লগ্নির জন্য অনেক দরজা খুলে দেওয়া হলেও সেই ছবিটাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়। তার মধ্যেই শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধনী আয়ের উপর কর চাপিয়ে ভুল বার্তা পাঠায় জেটলির অর্থ মন্ত্রক। সরকারি নথিতে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়া থাকলেও বিজেপি এর বিরোধী বলে জানিয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রীই। আজ অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, কর সংক্রান্ত বিতর্কের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি লগ্নি নিয়ে সরকারের অবস্থানে ধোঁয়াশাই থেকে গিয়েছে। লগ্নিকারীরা সরকারি নথি দেখবেন, না বিজেপির অবস্থান— এই প্রশ্নের জবাবে জেটলি বলেন, ‘‘লগ্নিকারীরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তাঁরা সব দিক দেখেই বিনিয়োগ করেন।’’

আজ নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তিতে সাফল্যের ঢাক পেটাতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন অরুণ জেটলি। আমজনতার কাছে মোদী সরকারের সাফল্য গাথা পৌঁছে দেওয়ার যে-পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, আজকের সাংবাদিক বৈঠক ছিল তার প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু কর থেকে শুরু করে বিদেশি লগ্নির মতো সব বিষয়েই জেটলিকে সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতা আড়াল করে যাওয়ার চেষ্টা করতে হয়েছে। যেখানে সরকার আটকে গিয়েছে, সেই জিএসটি থেকে জমি বিলের মতো বিষয়ে তাঁকে বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে হয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতির ১০ শতাংশ বৃদ্ধির হার ছোঁয়ার আশা থাকলেও, বিরোধী দল সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জেটলির অভিযোগ। অর্থমন্ত্রীর দাবি, রাজনৈতিক বিরোধিতার নামে বিল পাশে বাধা দিচ্ছে তারা। কংগ্রেস বাধা দিলেও মোদী সরকার সাম্প্রতিক কালে বিমা, কয়লা, খনি বিলে তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলের সমর্থন পেয়েছে। জেটলির যুক্তি, মোদী সরকার রাজ্যগুলির হাতে বেশি আর্থিক ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে। সেই কারণেই বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক দলগুলি কেন্দ্রের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

মোদী সরকার যখন প্রথম বর্ষপূর্তিতে সাফল্যের কাহিনি শোনাতে মাঠে নেমেছে, তখন কংগ্রেসও প্রথম বছরের ব্যর্থতা তুলে ধরতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীদের বিভিন্ন শহরে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন। কংগ্রেসের নেতারাও একই ভাবে সব শহরে গিয়ে সরকার বিরোধী প্রচার শুরু করেছেন। আজ যেমন জেটলির সাংবাদিক বৈঠকের পরেই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ কৃষি ক্ষেত্রে দুরবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। কংগ্রেস যখন মোদী সরকারকে কর্পোরেট-বন্ধু ও আমজনতার স্বার্থবিরোধী সরকার হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, তখন জেটলির পাল্টা যুক্তি, তাঁর সরকারের নীতি স্পষ্ট। সরকার আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়ন চায়। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট না-করলেও জেটলির দাবি, সরকারের প্রথম বছরেই আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের হারও কমতে শুরু করেছে বলে জেটলির যুক্তি। কৃষি ক্ষেত্রেও ঋণ নেওয়ার হার বেড়েছে।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে হারে বেসরকারিকরণ বা বিলগ্নিকরণ হবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। আজ জেটলি যুক্তি দিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে ৬৯ হাজার কোটি টাকার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে-সব কাজের সঙ্গে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক নেই, সে সব ক্ষেত্রে সম্পত্তির বেসরকারিকরণের জন্য প্রস্তাব রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জেটলির যুক্তি, সরকারি পর্যটন উন্নয়ন নিগম যে-সব হোটেল চালায়, খুব শীঘ্রই সেগুলি বেচে দেওয়া হবে।

ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফারাক হিসেবে জেটলি তুলে ধরছেন তাঁর সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশ এখন আর ধীরগতিতে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি নয়।’’ প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রূপায়ণের মধ্যে ফারাক মেটানোর জন্য কী চেষ্টা হবে? রাজ্যসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিল আটকে যাচ্ছে। সেই বিল পাশ করাতে অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির কীভাবে মেলবন্ধন ঘটাবে মোদী সরকার? জেটলিও মানছেন, এ জন্য কৌশলী রাজনীতির প্রয়োজন।

সমস্যা হল, রাজ্যসভায় জিএসটি বিল আটকে যাওয়ায় আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে নতুন কর ব্যবস্থা চালু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জেটলি আজ জানিয়েছেন, সংসদের বাদল অধিবেশনেই এই বিল পাশ হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে নয়া কর ব্যবস্থা চালু হওয়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী শোনায়নি তাঁর গলা।

Arun Jaitley BJP Narendra Modi new delhi trinamool tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy