Advertisement
E-Paper

কেজরীর বল কংগ্রেসের পায়ে

দফতরে সিবিআই তল্লাশির পরে কালই সুরটা ভেঁজেছিলেন দিল্লির আম আদমি-র মুখ্যমন্ত্রী। সেই সুর আজ একেবারে সপ্তমে তুলে নিয়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে বসল কংগ্রেস!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩২
দিল্লিতে কেজরীবালের সচিবালয়ে সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযানের বিরোধিতায় আপ-সমর্থকেরা। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

দিল্লিতে কেজরীবালের সচিবালয়ে সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযানের বিরোধিতায় আপ-সমর্থকেরা। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

দফতরে সিবিআই তল্লাশির পরে কালই সুরটা ভেঁজেছিলেন দিল্লির আম আদমি-র মুখ্যমন্ত্রী। সেই সুর আজ একেবারে সপ্তমে তুলে নিয়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে বসল কংগ্রেস!

অরবিন্দ কেজরীবাল কালই বলেছিলেন, হতে পারে দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ডিডিসিএ) দুর্নীতির ফাইল খুঁজতেই তাঁর দফতরে হানা দিয়েছিল সিবিআই। কারণ এই দুর্নীতিতে ডিডিসিএ-র প্রাক্তন প্রধান অরুণ জেটলির নাম জড়িয়েছে। আর আজ ক্রিকেট দুর্নীতির তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি তুলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেটলিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানালেন গুলাম নবি আজাদ-মল্লিকার্জুন খাড়্গের মতো কংগ্রেস নেতারা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তাঁরা। পিছিয়ে নেই কেজরীবালের দল আম আদমি পার্টিও। আজ দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া ফের দাবি করেন, ডিডিসিএ সংক্রান্ত ফাইল খুঁজতেই গত কাল কেজরীবালের দফতরে হানা দিয়েছিল সিবিআই। যদিও কংগ্রেস ও আপ-দু’পক্ষের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘এ সব কল্পিত অভিযোগ। আমার
বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে তবেই অভিযোগের
জবাব দেব।’’

ঘটনাক্রমে আপাতত কংগ্রেস ও আপ— দু’পক্ষের নিশানাতেই এখন জেটলি। গত কাল কেজরীবালের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি রাজেন্দ্র কুমারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দিল্লি সচিবালয়ে সিবিআই তল্লাশির পরেই আপের শীর্ষ নেতারা ঠিক করেন, ডিডিসিএ-র দুর্নীতি ও তাতে অরুণ জেটলির ভূমিকা নিয়ে তাঁরা আক্রমণে নামবেন। সেই মতো গত কাল সন্ধ্যায় একপ্রস্ত অভিযোগ তোলেন কেজরীবাল। ঠিক হয় আজ দফায় দফায় জেটলিকে আক্রমণ করা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ টুইটে কেজরীবাল অভিযোগ করেন, ‘‘সিবিআই অফিসারেরা গত কাল আমার দফতরে রাখা ডিডিসিএ-র ফাইল পড়ছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরব হওয়ার পরে তারা ফাইলটি রেখে দেয়। তবে ওই অফিসারেরা রিপোর্টের কোনও কপি নিয়ে গিয়েছে কি না, তা বলতে পারব না।’’ কেজরীবালের পরই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জেটলির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মণীশ সিসৌদিয়া।

আবার কেজরীবালের অফিসে তল্লাশির বিরোধিতা করে আজ লোকসভায় স্বর চড়িয়েছে তৃণমূল। দু’পক্ষের ‘টুইট-মিতালি’ও দেখা গিয়েছে আজ। ওয়েলে গিয়ে স্লোগান দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা। দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়, এক জন মুখ্যমন্ত্রীর অফিস কী ভাবে সিবিআই তল্লাশি হতে পারে? এই ঘটনা আমাদের মর্মাহত করেছে।’’ সুদীপবাবু যখন গত কালের ঘটনা তুলে সরকারকে বিঁধছেন, তখন তার অংশবিশেষ টুইট করতে থাকে তৃণমূল। কেজরীবাল তাঁর নিজের পেজে সেগুলি রিটুইট করতে শুরু করেন। পরে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘তৃণমূলের এই যে অতিসক্রিয় হয়ে কেজরীবালকে সমর্থন করা, এটা আসলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিমার ব্যবস্থা করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়!’’

তবে আজও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের মুখপাত্র দেবপ্রীত সিংহ বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে সিবিআইয়ের ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কোনও ফাইল সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নেয়নি।’’ আজ ফের সিবিআই দাবি করছে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে তল্লাশি করা হয়নি। দফতরও সিল করা হয়নি। আজও দিনভর রাজেন্দ্র কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্রের খবর, রাজেন্দ্রর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৮ লক্ষ টাকার হদিশ পাওযা গিয়েছে। এ ছাড়া বেনামে রাজেন্দ্রর বিনিয়োগের তথ্যও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

কংগ্রেস ও আপ, দু’দলই জেটলিকে নিশানা করলেও, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই গোটা বিষয়টিতে কেজরীবালকে কৃতিত্ব দিতে রাজি নয় কংগ্রেস। উল্টে আজ তারা আক্রমণ শানিয়েছে কেজরীবালকে। দিল্লির নেতা অজয় মাকেন আজ বলেন, ‘‘কেজরীবাল নাটক করছেন। ক্রিকেট দুর্নীতির তদন্ত করার আইনি এক্তিয়ারই নেই দিল্লি সরকারের। স্রেফ গিমিক দিতেই কেজরীবাল এ ভাবে জেটলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।’’

কংগ্রেসের বক্তব্য, ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক ডিডিসিএ-র দফতরে তল্লাশি চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের চার কর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের হদিশ পায়। ওই চার জন হলেন, সুনীল দেব, নরেন্দ্র বাত্রা, এস পি বনশল এবং সি কে খন্না। এঁদের সঙ্গে জেটলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। প্রথমত, ওই অভিযোগগুলি কি আদৌ কোম্পানি ল’বোর্ড খতিয়ে দেখবে? দ্বিতীয়ত, অরুণ জেটলি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদে থাকলে নিরপেক্ষ তদন্ত কি আদৌ সম্ভব? তৃতীয়ত, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, আয়কর দফতর, রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর, এসএফআইও-সহ সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সি অর্থ মন্ত্রকের অধীনে থাকায় নিরপেক্ষ তদন্ত কী ভাবে হবে?

মাকেন জানান, এসএফআইও-র তদন্তে দেখা গিয়েছে ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম পুনর্নিমাণের ক্ষেত্রে বড় আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। শুরুতে ২৪ কোটি টাকা খরচ ধরা হলেও, মোট খরচ হয় ১২৪ কোটি টাকা। এ জন্য দরপত্র ডাকা হয়নি। দরপত্র বণ্টন নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগও রয়েছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে জেটলির জমানায় বার্ষিক হিসাবের খাতা ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণই করা হয়নি। ভেন্ডার তালিকায় থাকা ৯টি কোম্পানির দফতর, ফোন নম্বর এমনকী ই-মেল আইডি পর্যন্ত এক। কংগ্রেসের বক্তব্য, একমাত্র যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত ছাড়া নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই দল জেটলির ইস্তফা দাবি করেছে। সরকার তাতে রাজি না হলে বুঝতে হবে, জেটলির বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আড়াল করতে চাইছেন মোদী।

Arvind Kejriwal CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy