Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Gauhati High Court

নাবালিকার বিয়ে যৌন হেনস্থা নাকি? প্রশ্ন তুলে ৯ অভিযুক্তকে জামিন দিল অসম হাই কোর্ট

নাবালিকা বিবাহের চারটি মামলায় অভিযুক্ত ন’জনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে নাবালিকার সঙ্গে সঙ্গমজনিত হেনস্থার অভিযোগও ছিল। যার শাস্তি হতে পারে কমপক্ষে ২০ বছর জেল। সর্বোচ্চ ফাঁসি।

Gauhati High Court gives bail to 9 men accused in child marriage.

১৪ বছরেরও কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চারটি আলাদা মামলায় ন’জনের বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের করেছিল অসম পুলিশ। প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২১
Share: Save:

বয়স ১৪ পেরোয়নি। এ বয়সে পুতুলখেলাও ছাড়ে না তাদের সমবয়সিরা। কিন্তু তারা এরই মধ্যে বিয়ের পিঁড়ি পার করে স্বামীর ঘরে। কেউ কেউ বিয়ের পর যৌনজীবনেরও সাক্ষী হয়েছে। এমনই চারটি মামলায় ৯ জন অভিযুক্তকে জামিন দিল গুয়াহাটি হাই কোর্ট। যৌন অপরাধের হাত থেকে শিশুদের বাঁচানোর আইন পকসো (প্রিভেনশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স)। সেই আইনেই মামলা হয়েছিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার হাই কোর্ট সেই পকসো আইনের আওতা নিয়েও তুলেছে প্রশ্ন। আদালত উল্টে জানতে চেয়েছে, ‘‘যে কোনও অপরাধেই পকসো দেওয়া যায় নাকি? এখানে (নাবালিকা বিবাহে) পকসো (অপরাধ) কোনটা? পকসো দেওয়া হয়েছে বলেই কি তা মেনে নিতে হবে! বিচারকেরা কি বুঝতে পারবেন না মামলাটিতে আসলে কী রয়েছে?’’

১৪ বছরেরও কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চারটি আলাদা মামলায় ন’জনের বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের করেছিল অসম পুলিশ। পুলিশের মনে হয়েছিল প্রত্যেকটিই আসলে শিশুদের যৌন হেনস্থার ঘটনা। এর মধ্যে একটি নাবালিকার সঙ্গে সঙ্গমজনিত হেনস্থার অভিযোগও ছিল। সাধারণত এই ধরনের অপরাধে পকসো আইনে কমপক্ষে ২০ বছরের জেল হতে পারে। সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে ফাঁসিও। অন্য দিকে সঙ্গমহীন যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং ন্যূনতম তিন বছরের জেল হতে পারে। দু’টি অপরাধই জামিন-অযোগ্য। যার অর্থ পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। গুয়াহাটি হাই কোর্টের বিচারপতি সুমন স্যাম অবশ্য তাঁর নির্দেশে বলেছেন, ‘‘অবশ্যই অপরাধগুলি গুরুতর। অভিযুক্তদের কাউকে আমি মামলা থেকে নিষ্কৃতি দিচ্ছি না। পুলিশেরও তদন্ত করতে বাধা নেই। তবে এই অভিযোগে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন পড়ে না।’’

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল গুয়াহাটি হাই কোর্টে। শুনানিতে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা আইন মেনে কাজ করুন। একটি চার্জশিট ফাইল করুন। যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তবে অপরাধী হিসাবে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।’’ কেন এমন সিদ্ধান্ত, সে প্রসঙ্গে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এর বিপুল প্রভাব পড়ছে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে। পারিবারিক জীবনে নাবালক-নাবালিকা থাকবে। বৃদ্ধেরা থাকবেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও থাকবেন। এই বিষয়টা (নাবালিকা বিবাহ) হয়তো ভাল নয়, নিশ্চিত ভাবেই এটা একটি খারাপ বিষয়, কিন্তু আমরা তখনই আমাদের বক্তব্য জানাব যখন উপযুক্ত সময় আসবে।’’

বিচারপতি এর পরে পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপাতত একটাই চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত। এঁদের গ্রেফতার করে কি জেলে পাঠানো হবে? আপনাদের জেলে জায়গা নেই। তা হলে আপনারা বরং আরও বড় কারাগারের ব্যবস্থা করুন।’’

গুয়াহাটি হাই কোর্টের এই রায় প্রসঙ্গে এক আইন গবেষক স্বাগতা রাহা বলেছেন, ‘‘সমস্ত নাবালিকা বিবাহেই যৌন হেনস্থা হয়, তার কোনও অর্থ নেই। ফলে সমস্ত নাবালিকা বিবাহেই পকসো প্রয়োগ করা যায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর বয়সও এ ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি করে। বয়সের জন্যই অপরাধের শিকার হয়েও অনেক সময় মুখ খোলে না নাবালক-নাবালিকারা।’’

গুয়াহাটির এক আইনজীবীর মতে, ‘‘পুলিশ অনেক সময় বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে, যত্রতত্র পকসো আইন প্রয়োগ করে গণ গ্রেফতার করছে তারা, এতে বহু পরিবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gauhati High Court Child Marriage POCSO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE