Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪

রামনামে লক্ষণ খারাপ, তবে কি এ বার খয়রাতি?

‘রাম মন্দির’ কি আজও ভোট টানে? লোকসভার আগে হিন্দি বলয়ে তিন রাজ্যের বিধানসভায় সেই পরীক্ষা সেরে নিতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।

মন্দির, মেরুকরণ ও হিন্দুত্ব— তাদের তিন প্রধান অস্ত্রই আজ ব্যর্থ তিন রাজ্যে। ছবি: পিটিআই।

মন্দির, মেরুকরণ ও হিন্দুত্ব— তাদের তিন প্রধান অস্ত্রই আজ ব্যর্থ তিন রাজ্যে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

রাজস্থানে গো-মন্ত্রী ওটারাম দিওয়াসি গো-হারান হেরেছেন। তা-ও নির্দল প্রার্থীর কাছে। ছত্তীসগঢ় রামের মামাবাড়ি কিংবা হায়দরাবাদ হবে ভাগ্যনগর—নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এ ভাবে যেখানেই মুখ খুলেছেন যোগী আদিত্যনাথ, সেখানেই ফল হয়েছে উল্টো। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর প্রচার করা অধিকাংশ আসনে পরাস্ত হয়েছে বিজেপি। মন্দির, মেরুকরণ ও হিন্দুত্ব— তাদের তিন প্রধান অস্ত্রই আজ ব্যর্থ তিন রাজ্যে। ফলে আগামী ছয় মাসে বিজেপি কী কৌশল নেয়, তা-ই দেখার। বিজেপির একাংশ বলছে, এখন খয়রাতির পথে হাঁটাই উচিত মোদী সরকারের।

‘রাম মন্দির’ কি আজও ভোট টানে? লোকসভার আগে হিন্দি বলয়ে তিন রাজ্যের বিধানসভায় সেই পরীক্ষা সেরে নিতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সে কারণে বিধানসভার আগে দেশ জুড়ে মন্দির নির্মাণ কর্মসূচি নিয়ে উঠেপড়ে লাগে সঙ্ঘ পরিবার। কিন্তু রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির পরাজয় প্রশ্ন তুলেছে, একচেটিয়া হিন্দুত্বের রাজনীতি কি আদৌ প্রাসঙ্গিক এখনও?

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর মতে, ‘‘নোট বাতিল, জিএসটি এক দিকে অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। অন্য দিকে যুব সমাজ, কৃষকদের চাহিদা কী, তা ধরতেই পারেনি মোদী সরকার।’’ সব মিলিয়ে রাম মন্দির তাসে হিন্দি বলয়ে বাজিমাৎ করার যে পরিকল্পনা মোদী-অমিত শাহ নিয়েছিলেন, তা আদৌ লোকসভায় কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই। রাম মন্দির নির্মাণের প্রশ্নে চাপের কৌশল নেওয়া সঙ্ঘ পরিবারও ‘চিন্তিত’।

আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের ‘ফাইনালে’ মোদীর সঙ্গে টক্করে তৈরি রাহুল

বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সঞ্জয় দত্তাত্রয়ে কাকাড়ে আজ সাফ বলেন, ‘‘ছত্তীসগঢ় বা রাজস্থানে হার হবে, তা জানা ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের ফল অবাক করে দিয়েছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘মোদী ২০১৪ সালে উন্নয়নের যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, তা থেকে দল সরে গিয়েছে। উন্নয়নের পরিবর্তে রাম মন্দির, মূর্তি বা নাম পরিবর্তনেই আটকে পড়েছে দল।’’ আজ সকাল থেকে প্রকাশ্যে বিশেষ দর্শন দেননি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। কংগ্রেস সদর দফতরে সকাল থেকেই জয়োল্লাস, বাজি-আবিরে অকাল হোলি-দিওয়ালি, সেখানে বিজেপির নতুন দফতরে চাঁদোয়া খুলে নেওয়া হয় দুপুর-দুপুর। মোদী-অমিত আসবেন না, চাউর হতেই দফতর ছাড়েন মুখপাত্রেরা।

দু’দিন আগে বড় গলা করে বিজেপি সভাপতি বলেছিলেন, ‘‘সব রাজ্যে জিতব।’’ তিনি আজ সারাদিন কোথায়? সকালে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে একবার দেখা গিয়েছিল মোদীকে। উজ্জীবিত বিরোধী শিবির আগামিকাল থেকে সংসদে প্রবল ভাবে সরব হতে চলেছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তিনি। তাই চলতি অধিবেশন ইতিবাচক ভাবে চালানোর জন্য আবেদন করেন। সেই বার্তা শেষ হতেই তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন আসে, ‘‘আজকের ফল কি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গণভোট?’’ শুনেই উল্টো দিকে হনহন করে হাঁটা দেন মোদী। পরে বেশ রাতে দুই নেতাই টুইট করে পরাজয় স্বীকার করেন।

রাহুল অবশ্য আজ সাংবাদিক বৈঠক করে সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, অনুন্নয়নের কাছে পরাজিত হয়েছে বিজেপির মন্দির-মেরুকরণের রাজনীতি। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের মানুষ কী চাইছেন, তা বুঝতেই পারছেন না প্রধানমন্ত্রী।’’ এ যাবৎ আত্মবিশ্বাসী অমিতের ব্যাখ্যা ছিল, ২০১৪ সালে সাড়ে ১৭ কোটি লোক বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। আর মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে ২২ কোটি পরিবারের কাছে সরকারি সাহায্য যেমন রান্নার গ্যাস, আবাসন, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। তারপরেও কেন ওই ফল—সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না অমিতেরা।

কংগ্রেস সভাপতির অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচন অঙ্ক নয়। রসায়ন। সেটাই আসলে ভুলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE