Advertisement
E-Paper

জনবিচ্ছিন্নতাই ‘পরিবর্তন’ আনল, ‘হাত’ ধরল ছত্তীসগঢ়

কংগ্রেসও কি ভেবেছিল, দিনের শেষে ৬৭টি আসন পেয়ে বিজেপির ১৫ বছরের দুর্গ গুঁড়িয়ে দেবে তারা?

তাপস সিংহ

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:২৭
ছত্তীসগঢ়ে জয়ী কংগ্রেস।

ছত্তীসগঢ়ে জয়ী কংগ্রেস।

উন্নয়ন নিশ্চয়ই হয়েছিল ছত্তীসগঢ়ে, কিন্তু সেই ‘উন্নয়ন’-এর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল জনবিচ্ছিন্নতা। যে বিচ্ছিন্নতার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি বিজেপি নেতৃত্ব। এমনই বিচ্ছিন্নতা, যা ছাপিয়ে গেল চিরাচরিত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ধ্যানধারণাকেও।

কংগ্রেসও কি ভেবেছিল, দিনের শেষে ৬৭টি আসন পেয়ে বিজেপির ১৫ বছরের দুর্গ গুঁড়িয়ে দেবে তারা? ছত্তীসগঢ় গঠনের পর থেকে সেখানে এত আসন কংগ্রেস কখনও পায়নি। এমনকি, অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশেও ওই অঞ্চলে কংগ্রেস এমন ফল করতে পারেনি।

‘পরিবর্তন’-এর আভাস অবশ্য ছিল।ছত্তীসগঢ়েসেই আভাসই বাস্তবেপ্রতিফলিত হল। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে ফেলে দিয়ে ছত্তীসগঢ়েসরকার গড়তে চলেছে কংগ্রেস।মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার জোর ধাক্কা খেল কংগ্রেসের কাছে। কোনও মুখ্যমন্ত্রী-মুখ না থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের এ হেন উত্থান নিঃসন্দেহে চমকে দিয়েছে বিভিন্ন মহলকে।তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অজিত জোগীর দল ছত্তীসগঢ় জনতা কংগ্রেস এবং মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) জোট ভোটের লড়াইয়ে থাকলেও সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তাদের দরদামের আর কোনও জায়গাই থাকল না।

কেন এমনটা হল?

‘চাউলবাবা’ রমন সিংহের এই পতনকে অবশ্যই ইন্দ্রপতন বলা যায়। এ বারেরবিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস লড়তে নেমেছিল আক্ষরিক অর্থেই মুখ্যমন্ত্রী-মুখ ছাড়া। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেশ বাঘেল আর যা-ই হোন, ওজনে রমন সিংহের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো নেতা ছিলেন না। কংগ্রেসের মূল ভরসা ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, ছিল বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ। এর সঙ্গে তীব্র ভাবে উঠেছে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না পাওয়া, ক্রমবর্ধমান বেকারি, নোটবন্দির মতো জ্বলন্ত বিষয়গুলিও।

আরও পড়ুন: কোনও মুখ্যমন্ত্রী-মুখ না থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের এ হেন উত্থান নিঃসন্দেহে চমকে দিয়েছে বিভিন্ন মহলকে।

রায়পুর শহর ও ছত্তীসগঢ়ের নানা জেলায় একান্ত আলাপচারিতায়বিজেপির কিছু নেতাও জানিয়েছিলেন, দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের জীবনযাপন ও আচরণ দলকে বিড়ম্বনায় ফেলছে। রাজ্যের নানা প্রান্ত ঘুরে এ কথাটাও কানে আসছিল যে, ছত্তীসগঢ়ে ‘কমিশন রাজ’ চলছে। মোটা কমিশন না দিলে এখানে নাকি কোনও কাজই হয় না! ‘আম আদমি’র কথাবার্তায় ঘুরেফিরে এসেছে, ‘অনেক দিন তো হল, এ বার পরিবর্তনের দরকার।’ একটা অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করেছে নানা দিকে। প্রশ্ন করলে উড়ে এসেছে সতর্ক উত্তর: ‘দেখুন, এ বার কী হয়।’

এমনকি, যে রাজনন্দগাঁও কেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের দুর্গ বলে পরিচিত, সেই দুর্গ অটুট রাখতে পারলেও দিনভর তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দেননি কংগ্রেস প্রার্থী করুণা শুক্ল। তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি। দীর্ঘ ৩৪ বছর বিজেপি-তে থাকার পরে যিনি দলের প্রতি ‘বিরক্ত’ হয়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।রায়পুর শহরাঞ্চলেও কংগ্রেসের দাপট প্রবল।

ছত্তীসগঢ়ের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের ভোটের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বস্তার, সরগুজা, দুর্গ, রায়পুর এবং বিলাসপুর— এই পাঁচটি অঞ্চলেই কংগ্রেস প্রশ্নাতীত ভাবে তাদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রেখেছে। মাওবাদী প্রভাবিত বস্তার অঞ্চলের ১২টি আসনের মধ্যে দন্তেওয়াড়া ছাড়া বাকি প্রায় সবগুলিই কংগ্রেসের দখলে। সরগুজা অঞ্চলের ১৪টি আসনের মধ্যে ১০টিই পেয়েছে কংগ্রেস।

আরও পড়ুন: ধুন্ধুমার যুদ্ধ মধ্যপ্রদেশে, বিজেপি-কংগ্রেস জোর টক্কর

ছত্তীসগঢ়ে এসে সভা করে গিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা। রাজ্যের নানা প্রান্তে সভা করেছেন তাঁরা। উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সম্ভবত আন্দাজও করতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব। ঠিক যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকতে থাকতে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব বুঝতে পারেননি বা চাননি যে সাধারণ মানুষ তাঁদের আর চাইছেন না।

তফাতের মধ্যে একটাই। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী রাজনীতির উজ্জ্বল মুখ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছত্তীসগঢ়ে প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে দাঁড়াল জনতাই!

Assembly Elections 2018 Chattisgarh Raman Singh Ajit Jogi ছত্তীসগঢ়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy