Advertisement
E-Paper

সংস্কারের কান্ডারি মোদী, স্তুতিতে ওবামা

ভারত সফর সেরে চলে যাওয়ার আগে যাঁকে এক দিন সুকৌশলে বিঁধেছিলেন ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে, আজ তাঁকেই ভরিয়ে দিলেন অকুণ্ঠ প্রশংসায়। নরেন্দ্র মোদী ‘ভারতের সংস্কারের কাণ্ডারী’— এক মার্কিন পত্রিকায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ভাবেই অভিহিত করলেন তাঁকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪১

ভারত সফর সেরে চলে যাওয়ার আগে যাঁকে এক দিন সুকৌশলে বিঁধেছিলেন ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে, আজ তাঁকেই ভরিয়ে দিলেন অকুণ্ঠ প্রশংসায়।

নরেন্দ্র মোদী ‘ভারতের সংস্কারের কাণ্ডারী’— এক মার্কিন পত্রিকায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ভাবেই অভিহিত করলেন তাঁকে। শুধু তা-ই নয়, মোদী-প্রশস্তিতে ১৬৬ শব্দ খরচ করে ওবামা লিখেছেন, দারিদ্র্য থেকে প্রধানমন্ত্রিত্বে পৌঁছনোর এই কাহিনিই ভারতের পরিবর্তনশীলতা এবং উত্থানের সম্ভাবনা তুলে ধরে। ওবামার এই প্রশংসায় আপ্লুত হয়ে কানাডা সফররত মোদীও টুইটারে জানান, ‘প্রিয় বারাক ওবামা, আপনার কথাগুলো মন ছুঁয়ে গেল, অনুপ্রেরণা জোগাল।’ (ডিয়ার বারাক ওবামা, ইওর ওয়ার্ডস আর টাচিং অ্যান্ড ইন্সপায়ারিং)।’

যদিও এ বছরের গোড়ায় ভারতে মোদী-ওবামার ‘দোস্তি’র যে ছবি ধরা পড়েছিল গোটা বিশ্বের কাছে, তা কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদায়ী বক্তৃতায়। নাম না করেও সে বার মোদীকে বন্ধুত্বের মোড়কে সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার গুরুদায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ওবামা। ভারতের দীর্ঘ ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর ওবামার সেই বক্তব্যে অনেকে বিজেপি সরকারের প্রতি বার্তাই খুঁজে পেয়েছিলন। কারণ সেই সময় থেকেই ভারতের নানা প্রান্তে ‘ঘর ওয়াপসি’ (ধর্মান্তরণ) কর্মসূচি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।

শুধু এ দেশেই নয়, আমেরিকায় ফিরে গিয়ে ন্যাশনাল প্রেয়ার-এর বক্তৃতাতেও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গটি আরও চড়া সুরে উঠে এসেছিল ওবামার মুখে। সেখানেও ভারত সফরের কথা মনে করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘‘এত সুন্দর, এত বৈচিত্রে ভরা দেশ! কিন্তু সেখানে গত কয়েক বছরে এক ধর্মের হাতে অন্য ধর্মের মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন! এই অসহিষ্ণুতা দেখলে গাঁধী অত্যন্ত মর্মাহত হতেন!’’

আজ কিন্তু সেই ওবামাই গত বছর মোদীর ওয়াশিংটন সফরের কথা স্মরণ করিয়ে পত্রিকায় লিখেছেন, ‘‘আমরা মার্টিন লুথার কিঙ্গ এবং গাঁধীর আদর্শে চলি। দু’দেশেরই বৈচিত্র্যের যে বাতাবরণ রয়েছে, সেটাই আমাদের শক্তি। তাকে রক্ষা করতে হবে।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপির পালের বাতাস কাজে লাগিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের ‘ঘর ওয়াপসি’-র মতো কর্মসূচিতে মোদী যে অনেকটাই চাপে পড়ে গিয়েছিলেন সন্দেহ নেই। আর ঠিক সেই কারণে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তাঁর সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। সদ্য হ্যানোভার সফরই তার প্রমাণ।

সেখানে মোদী সরাসরি বার্তা দিয়েছেন, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার বুনিয়াদ যথেষ্ট মজবুত। তাকে সহজে নড়ানো যাবে না। সংস্কৃত ভাষা নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে মোদী ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। কয়েক দশক আগে জার্মান রেডিওয় সংস্কৃতে সংবাদ প্রচার করা হত। মোদী সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ভারতে এমনটা হয়নি। মোদীর মন্তব্য, ‘‘জার্মানদের প্রশংসা করতেই হয়। সংস্কৃতে খবর প্রচার করতেন ওঁরা... আমাদের দেশ তা করেনি... ধর্মনিরপেক্ষতার কারণেই।’’ এর পরেই তিনি জানান, ‘‘ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি এত দুর্বল নয় যে একটা ভাষার জন্য তা নড়বড়ে হয়ে যাবে।’’ জার্মানি সফরের আগে ফ্রান্সে ইউনেস্কোর এক সম্মেলনেও মোদী জানান, প্রতি ভারতীয়ের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় তার সরকার দায়বদ্ধ।

ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় মোদী যখন এত সক্রিয়, ঠিক তখনই ওবামার এই প্রশস্তি তাঁকে অনেকটা স্বস্তি দেবে সন্দেহ নেই— বলছেন বিশ্লেষকরা। এমনিতেই মার্কিন ওই পত্রিকায় বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জুড়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম। তার সঙ্গে আবার ওবামার প্রশংসা তো উপরি পাওনা। ‘ভারতের সংস্কারের কাণ্ডারী’ শিরোনামে ওই লেখায় মোদী সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ‘‘ছোটবেলায় বাবাকে চা বিক্রিতে সাহায্য করতেন নরেন্দ্র মোদী। আজ তিনি দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নেতা। দারিদ্র্য থেকে প্রধানমন্ত্রিত্বে উত্তরণের এই কাহিনিই ভারতের পরিবর্তনশীলতা ও উত্থানের সম্ভাবনা তুলে ধরে।’’

স্তুতির এখানেই শেষ নয়। ওবামার মতে, ‘‘তাঁর পথ অনুসরণ করে অন্য ভারতীয়রাও যাতে এগোতে পারেন, তার জন্য তিনি বদ্ধপরিকর। দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন এবং ভারতের আর্থিক শক্তি বৃদ্ধিতে তিনি দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সদাসক্রিয় মোদীকে মনে রেখে ওবামার মন্তব্য, ‘‘ভারতের মতোই তিনি প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আধুনিকতাকে অতিক্রম করেছেন। যোগের এই শিষ্য টুইটারের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেন আর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা
কল্পনা করেন।’’

Barack Obama PM Modi Time magazine India BJP US President
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy