Advertisement
১৯ মে ২০২৪
নাগরিকত্ব বিতর্ক

নাগরিকত্বের পক্ষে সরব বরাক কংগ্রেস, সওয়াল হিমন্তেরও

অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে বাঙালি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের পক্ষেই দাঁড়াল বরাক উপত্যকার তিন জেলা কংগ্রেস কমিটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে বাঙালি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের পক্ষেই দাঁড়াল বরাক উপত্যকার তিন জেলা কংগ্রেস কমিটি। তবে তাঁরা বিজেপি সরকারের আনা সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অন্য দিকে, রাজ্যের বিজেপি সরকারের ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ হিমন্তবিশ্ব শর্মাও জোট সরকারের শরিক অগপ-র বিল-বিরোধিতার চাপের মুখে দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব বিলের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তাঁর বক্তব্য, অসমে ধর্মীয় ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে এই ভারসাম্য একটা সময় গিয়ে একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে।

কংগ্রেস কেন একই সঙ্গে বিলের বিরোধিতা করছে আবার কেনই বা নাগরিকত্বের পক্ষে সওয়াল করছে তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ও স্ব-বিরোধিতা তৈরি হয়েছে জনমানসে। তা কাটাতে তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে কংগ্রেসের বার্তা পৌঁছে দিতে ব্যাপক সভা-সমিতি করা হবে বলে বরাকের তিন জেলা কংগ্রেস কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ শিলচরে কংগ্রেসের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই প্রচার অভিযান পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি তৈরি করা হবে। বিধানসভা নির্বাচনের সমস্ত প্রার্থী ছাড়াও প্রত্যেক জেলা থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধি থাকবেন কোর কমিটিতে। নাগরিকত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় তাঁরাই দেখভাল করবেন।

শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ কর্ণেন্দু ভট্টাচার্যের উদ্যোগে আজকের এই যৌথ সভার আয়োজন করা হয়। বৈঠকে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস সভাপতি সতু রায়, হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেস সভাপতি অশোক দত্তগুপ্ত, সাংসদ সুস্মিতা দেব, প্রাক্তন সাংসদ ললিত মোহন শুক্লবৈদ্য ও বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সভায় থেকে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা ধরে সবাইকে নাগরিকত্ব দিতে হবে—তাঁরা এই অবস্থান থেকে সরবেন না। কারণ এত বছর ধরে এখানে বসবাসের পর উদ্বাস্তুরা এখন যাবেন কোথায়! প্রদেশ কংগ্রেসকেও তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হবে বলে কর্ণেন্দুবাবু জানিয়েছেন। তিনি অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধের কথা অস্বীকার করেন। বরং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের মতামতকে ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করে তাঁকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেন। সাংসদ সুস্মিতা দেবের দাবি, এখনও রাজ্যস্তরে এই ইস্যুতে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। জেলা কমিটিগুলিকে তাদের অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে। এরপরই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আশাবাদী, বরাকের চিন্তাভাবনা দলে গুরুত্ব পাবে।

বিলের বিরোধিতা কেন? এই প্রশ্নে সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, ‘‘এই বিল আইনে পরিণত হলে উদ্বাস্তুদের বিপদ বাড়বে। উদ্বাস্তুরা আগে আবেদন করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় ধরা দেবেন। পরে নাগরিকত্ব মিলবে কিনা তা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’’ এ ছাড়া, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী বাঙালি ঐক্যে বিভাজন ধরাতে চাইছেন বলে সুস্মিতা দেবীর অভিযোগ।

এ দিকে, আজ গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, অসমীয়া জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই বাংলাদেশি শরণার্থীদের নাগরিকত্বে অসমবাসীর সমর্থন জানানো উচিত। হিমন্ত জানান, অসমের ১১টি জেলায় ধর্মীয় ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়ে অসমীয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেখানে শরণার্থী বাড়েনি। বেড়েছে অনুপ্রবেশকারী। হিমন্ত বলেন, ‘‘অসমীয়াদের উপরে এই আক্রমণ ভাষিক না ধর্মীয় তা ভেবে দেখা এখনই দরকার।’’ হিমন্ত বলেন, ‘‘যাঁরা নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা অসমীয়াদের অস্তিত্ব বাঁচানোর বিকল্প রাস্তা দেখাতে পারেননি।’’ মহন্ত ও অগপর বিরোধিতা নিয়ে হিমন্ত বলেন, ‘‘বিজেপি ও অগপর আদর্শগত কয়েকটি ফারাক আছে। তা নির্বাচনের আগেই আলোচনা হয়েছে। তা বলে জোটের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই। মহন্ত প্রকৃত ছবিটা বুঝতে পারছেন না বলে বিরোধিতা করছেন। এক দিন ভাল করে বসে তাঁকে বুঝিয়ে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barak congress citizenship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE