Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পবিত্রভূমি বরাক, মত আরেফিনের

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শিলচর পবিত্রভূমি— ভাষাশহিদ দিবস উপলক্ষে বরাকে এসে এমনই মন্তব্য করলেন মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এএসএম শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘‘ও পারে বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে সাধারণ মানুষ নতুন এক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। এ পারে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১১ জন শহিদ হয়েছেন।’’

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শিলচর পবিত্রভূমি— ভাষাশহিদ দিবস উপলক্ষে বরাকে এসে এমনই মন্তব্য করলেন মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এএসএম শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘‘ও পারে বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে সাধারণ মানুষ নতুন এক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। এ পারে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১১ জন শহিদ হয়েছেন।’’

আজ নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ততার ফাঁকে আনন্দবাজার পত্রিকা-কে তিনি বলেন, ‘‘মাতৃভাষার বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। রাষ্ট্র বদলাতে পারে, কারও মাতৃভাষা বদলায় না। তাই যাঁরাই মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করেন, আমরা তাঁদের সম্মান জানাই।’’

তবে অন্যদের ভাষার লড়াইয়ের সঙ্গে তাঁদের ফারাকও কম নয়। তাঁর বক্তব্য, অন্যরা যখন দাবি আদায়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) তা যুদ্ধে পৌঁছয়। পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াই করেন তাঁরা। মেজর শামসুল আরেফিনও তেমনই এক যোদ্ধা। শুরুতে ছিলেন পাক সেনাবাহিনীতে। যাবতীয় প্রশিক্ষণ তাদের সূত্রেই পাওয়া। ভাষার প্রশ্নে স্বাধীনতার সংগ্রাম দানা বেঁধে উঠলে তিনি পাকিস্তান থেকে পালান। মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখান। খুলনা সাব-সেক্টরের দায়িত্ব পড়ে তাঁর উপর।

সে সব দিনের কথা উঠলে আজও নড়েচড়ে বসেন তিনি। শোনান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘চার্লি কোম্পানি’ পুরো সেক্টরে নিয়োজিত ছিল। খুলনা সাব-সেক্টরে ছিল গোর্খা রাইফেলস। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী তখন মেজর। অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল তাঁরই উপর। আজও তাঁর মনে পড়ে আশাশুনি থানা দখল, কপিলমুনির যুদ্ধ, বারোয়াড়ির যুদ্ধ, মংলা বন্দর আক্রমণ, খুলনা সদর দখলের নানা কাহিনি। পাক-জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার কথায় তিনি বললেন, ‘‘সেটি ছিল নৌ-বাহিনীর বিশেষ অপারেশন। আমি তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম।’’ ধরা পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত, তা জেনেও নৌ-জওয়ানরা সাঁতরে গিয়ে পাক-জাহাজে লিম্পেড মাইন লাগিয়ে আসে। তাঁরা ফিরে আসার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরণ। কত কী যে করা হয়েছে! শেষে যুদ্ধ জিতে বাংলাদেশ তৈরি করেন তাঁরা।

তবে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আক্ষেপ যায়নি শামসুল আরেফিনের। তাঁর কথায়, ‘‘ভাষার দাবিতে স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমরা চেয়েছিলাম অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি।’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজকর্মে তিনি অবশ্য সন্তুষ্ট। দাবি করেন, বর্তমান সরকার অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। কিন্তু সমস্যা হল, মধ্যপ্রাচ্যের সাহায্য-সহযোগিতায় মৌলবাদীদের আর্থিক প্রতিপত্তি বেড়ে চলেছে। তার জোরে ওরা সরকারকে অস্থির করে তোলার জন্য চেষ্টা করে চলেছে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা হচ্ছে।

আরেফিন তাকে ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ বলে উল্লেখ করেন। দাবি করেন, ‘‘বছর দু’য়েকের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। ধর্ম নয়, ভাষা-সংস্কৃতিই হবে মূল বন্ধন। ১৯৭২-র সংবিধানে ফিরে যাবে বাংলাদেশ।’’

মৌলবাদী তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও আরেফিনের দাবি, এখন সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে মোটেও নিরাপত্তাহীন নন। নীচুতলায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তাও মানুষে-মানুষে বিদ্বেষ নয়। সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে জমিদখলই এর পিছনে। তিনি এ জন্য হিন্দুদের ভারতে চলে আসার প্রবণতাকেও দায়ী করেন।

তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দুদের পরিবার পিছু এক-দুই সন্তান। ফলে জনসংখ্যার হার মুসলমানদের চেয়ে এমনিতেই কমছে। তার উপর তাঁদের মধ্যে ভারতে পালানোর প্রবণতা কাজ করে। যদি কেউ ভারতে না-পালাতেন, তবে প্রতিরোধের শক্তি গড়ে উঠত। কিন্তু ঘটছে উল্টোটা।’’ তিনি ভারত সরকারের সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা করেন। বলেন, ‘‘ভারতে এলেই আশ্রয় মিলবে, এমন নিশ্চয়তা মিললে দেশত্যাগের মানসিকতা তৈরি হবেই। তাতে যাঁরা থেকে যাচ্ছেন, তাঁরা অসহায় বোধ করছেন।’’

মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে জনমত গঠনের আহ্বান জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘‘এরা ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের কাছে হুমকিস্বরূপ।’’ তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশ কঠোর হতেই সে দেশের মৌলবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল। বর্ধমান বিস্ফোরণ এরই ফল। অন্যদিকে ভারতীয় মুসলমানদেরও একাংশ বাংলাদেশে গিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছে। সাতক্ষীরা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত তাদের বেশ প্রভাব। বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা ভারতের মুসলমান অধ্যুষিত জেলাগুলি মৌলবাদীদের করিডর হয়ে ওঠে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় মেজর আরেফিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barak Arefin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE