Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিহু, সংক্রান্তির আনন্দে মেতেছে বরাক

ভোগালি বিহুকে ঘিরে বদরপুরের বৃহত্তর বড়গুলের অসমিয়া সমাজে তৎপরতা তুঙ্গে। ভোগালি বিহু আসলে ভোগ বা খাওয়া-দাওয়ার উৎসব। পৌষে পাকা ধান গোলায় তোলার পর তা পালিত হয়। ফসল-তোলা খেতে খড়-বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় ভেলা বা মেজি-ঘর। এই ঘরকে কেন্দ্র করে অসমিয়ারা নাচ-গান করেন। থাকে অঢেল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

ভোগালি বিহুকে ঘিরে বদরপুরের বৃহত্তর বড়গুলের অসমিয়া সমাজে তৎপরতা তুঙ্গে।

ভোগালি বিহু আসলে ভোগ বা খাওয়া-দাওয়ার উৎসব। পৌষে পাকা ধান গোলায় তোলার পর তা পালিত হয়। ফসল-তোলা খেতে খড়-বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় ভেলা বা মেজি-ঘর। এই ঘরকে কেন্দ্র করে অসমিয়ারা নাচ-গান করেন। থাকে অঢেল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।

বরাক উপত্যকায় অসমিয়াদের সংখ্যা খুবই কম। কর্মসূত্রে যাঁরা এখানে রয়েছেন, বিহু উপলক্ষে তাঁরা নিজের বাড়িতে ফেরেন। তাই বাঙালিদের পৌষ সংক্রান্তির পিকনিক-ঘর প্রচুর দেখা গেলেও ভোগালি বিহুর মেজি-ঘর নজরে পড়ে না বললেই চলে।

দু’টির ভাবনা এক হলেও মেজি-ঘর তৈরি হয় নানা কারুকার্য সহ। থাকে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা। বাঙালিপ্রধান বরাক উপত্যকায় তার ছোঁয়া টের পাওয়া যায় বৃহত্তর বড়গুল এলাকায়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানকার মেজি-ঘরেও লেগেছে আধুনিকতার পরশ। কী ধরনের মেজি-ঘর তৈরি হবে, সেখানে এক-দুই মাস আগেই তা চূড়ান্ত হয়। থিম, বাজেট সবই বৈঠক ডেকে পাকা করেন গ্রামবাসীরা। বৃহত্তর বড়গুলে মোট ৫টি অসমিয়া গ্রাম রয়েছে। সবাই পৃথক ভাবে মেজি-ঘর তৈরি করে। তবে দুটি গ্রামের শিল্পকর্ম নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি। ঘিলাইজানে এ বার তৈরি হয়েছে লন্ডনের টেমস নদীর সেতু। ১৩০টি বাঁশ দিয়ে একমাস ধরে পাড়ার ছেলেরা এটি তৈরি করেছে। গত রাতে এই ঘরের সামনে হবে বিহুর আসর। প্রথম দিন পাড়ার শিল্পীরাই গাইবেন, নাচবেন। পর দিন আমন্ত্রিত শিল্পীদের অনুষ্ঠান। গ্রামের মোড়ল ৭০ বছর বয়সী হরকিশোর হাজরিকা জানিয়েছেন, পাড়ার ৭০ পরিবার নিজেরা চাঁদা দিয়ে মেজি-ঘর তৈরি করে, নাচ-গানের আয়োজন করে।

অন্য দিকে, বড়গুলের মেজি-ঘরে অসমের পরম্পরাগত শিল্পকে তুলে ধরা হয়েছে। সামনে রয়েছে অসমের জাতীয় প্রতীক গণ্ডার। সেখানেও দু’দিনের বিহু নাচগানের আয়োজন। থাকবে পিঠেপুলির ভোজ। একই ধরনের অনুষ্ঠান হবে আদরকোনা, মাঝরগুলেও। কাছাড় জেলায় কারুকার্যখচিত মেজি-ঘর তৈরি করা হয় কালাইনের কৈয়াজেনি এবং বিহাড়ার গড়েরভিতর গ্রামে। বিহু উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠান হয় লাবকপার, লক্ষ্মীছড়া, ঝাপিরবন্দ, লারসিংরপার, লেবুরবন্দ, হরিনগর, নারায়ণপুর প্রভৃতি রাজবংশী গ্রামেও। তবে তাঁরা মেজি-ঘর তৈরির চেয়ে খাওয়া-দাওয়াতেই গুরুত্ব দেন।

বাঙালিদের পৌষ সংক্রান্তির পিকনিক-ঘরের মতো অসমিয়া মেজি-ঘরেও সংক্রান্তির সকালে স্নান করে গ্রামবাসীরা অগ্নিসংযোগ করেন। তবে বিশেষ কারুকার্যের মেজি-ঘর অতিরিক্ত দুই-চারদিন প্রদর্শনীর জন্য রেখে দেওয়া হয়। ঘিলাইজানের মেজি-ঘরও সংক্রান্তির সকালে জ্বালানো হচ্ছে না। তাঁরা আলাদা করে একটি সাধারণ মেজি তৈরি করেছেন। পৌষ সংক্রান্তির সকালে তাতে আগুন ধরিয়েই পরম্পরা রক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bihu Barak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE