Advertisement
E-Paper

ফাঁস হওয়া রিপোর্টে মান বাড়াতে গুচ্ছ প্রস্তাব

সরকারি ভাবে প্রকাশ হওয়ার আগেই ফাঁস হয়ে গেল বিজেপি সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি। যেখানে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পঞ্চম শ্রেণি থেকে ফের পাশ-ফেল প্রথা চালু-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৯:১৬

সরকারি ভাবে প্রকাশ হওয়ার আগেই ফাঁস হয়ে গেল বিজেপি সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি। যেখানে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পঞ্চম শ্রেণি থেকে ফের পাশ-ফেল প্রথা চালু-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সে সব কিছুর আগেই যে ভাবে রিপোর্টটি ফাঁস হয়ে গিয়েছে, তাতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার। ফের এক দফা মুখ পুড়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানিরও।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে নতুন নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি জোট সরকার। দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সচিব টি এস আর সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে। ২০১৫ সালের মধ্যে ওই শিক্ষা নীতি কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। সূত্রের খবর, গত এপ্রিলে ওই রিপোর্ট জমা পড়লেও কবে তা জনসমক্ষে আনা হবে, তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন স্মৃতি ইরানি। আশ্বাস দিয়েছিলেন, খুব দ্রুত প্রকাশ করা হবে নয়া শিক্ষানীতি। কিন্তু তার আগেই আজ ফাঁস হয়ে গিয়েছে রিপোর্টটি।

কী রয়েছে ওই রিপোর্টে?

গড় জাতীয় আয়ের অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে খরচের সুপারিশ করার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কমিটি জোর দিয়েছে পাশ-ফেল প্রথা ফেরানোর উপরে। গত সরকারের আমলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে রাজ্যগুলি গোড়া থেকেই সরব ছিল। নতুন শিক্ষানীতিতে তাই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল না রাখলেও পঞ্চম থেকে তা ফের চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ওই প্রথা ফিরলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় কোনও পড়ুয়াকে ফেল করানোর বিষয়ে বেশ কিছু কড়াকড়ি করার সুপারিশ করেছে কমিটি। সুপারিশ বলছে, কোনও ছাত্র ষাণ্মাষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকরা স্কুলের ছুটির পরে সেই ছাত্রকে ওই বিষয়গুলি পড়াবেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ফের ওই বিষয়গুলির পরীক্ষা নিতে হবে স্কুলকে। তখনও ফেল করলে আবার একই পদ্ধতিতে পড়ানো এবং পরীক্ষা নেওয়া হবে। তখনও ফেল করলে এবং শেষ পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষাতেও ওই সব বিষয়ে ফেল করলে তবেই তাকে একই ক্লাসে রেখে দেওয়া হবে। পাশ-ফেল প্রথা ফেরাতে প্রয়োজনে ‘শিক্ষার অধিকার’ আইনে সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে প্রাক্-প্রাথমিক (নার্সারি) শিক্ষার উপরে। কমিটির মতে, ছ’বছরের মধ্যেই একটি বাচ্চার মানসিক গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তাই বর্তমানে নার্সারি স্কুলগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে সেগুলিকেও শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিটি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সিবিএসই, আইসিএসই ও রাজ্য বোর্ডের সিলেবাসে দীর্ঘ দিন ধরেই বিস্তর ফারাক রয়েছে। যার প্রভাব পড়ে উচ্চশিক্ষায়। কমিটি মনে করেছে, এর ফলে সবর্ভারতীয় পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছেন রাজ্য বোর্ডের পড়ুয়ারা। সমতা ফেরাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গোটা দেশে প্রায় একই সিলেবাস এবং সর্বভারতীয় পরীক্ষার জন্য সওয়াল করেছে কমিটি।

বদল আনার কথা বলা হয়েছে দশম শ্রেণির পরীক্ষা ব্যবস্থাতেও। কমিটি দেখেছে, মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ছাত্ররা মূলত অঙ্ক ও ইংরেজি নিয়ে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষাকে দু’টি ভাগে ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। প্রথম পর্বের পরীক্ষা সকলের জন্য আবশ্যিক। যা অপেক্ষাকৃত সহজ। যাঁরা দশম শ্রেণির পরে উচ্চ-মাধ্যমিক বা তারও বেশি পড়াশোনা করতে চান, তাঁরা প্রথমটির পাশাপাশি দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও বসবেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ শিক্ষার গৈরিকীকরণের চেষ্টা। নতুন শিক্ষানীতি চালু হলে সেই অভিযোগ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ নয়া নীতিতে সংস্কৃত শিক্ষার উপরে জোর দিয়েছে কমিটি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সংস্কৃত ভাষা এখনও ভারতের সংস্কৃতি, দর্শন এবং বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে আরও বেশি করে সংস্কৃত শিক্ষায় জোর দেওয়া হোক। পাশাপাশি স্কুল পর্যায়ে জার্মান, স্প্যানিশ, ফরাসি, রুশ বা আরবি-র মতো বিদেশি ভাষা শিক্ষাতেও উৎসাহ দেওয়ার কথা বলেছে কমিটি।

এ সবের পাশাপাশি সুপারিশ করা হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার। জোর দেওয়া হয়েছে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপর। কলেজগুলিকে চাকরিমুখী সিলেবাস গঠনের উপর নজর দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ, রাজনীতি-মুক্ত কলেজ ক্যাম্পাস গড়া দরকার। কলেজে ধর্ম বা জাতপাত ভিত্তিক সংগঠন না থাকার উপরেও জোর দিয়েছে কমিটি।

বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের উপরেও। বর্তমানে দেশে ৫ লক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে অল ইন্ডিয়া এডুকেশন সার্ভিস গঠনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে আইএএস-এর ধাঁচে স্থায়ী ভিত্তিতে আমলা নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিটি।

smriti irani recommendations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy