পশ্চিমবঙ্গে যা এখনও করা যায়নি, তা সম্ভব হতে চলেছে দিল্লিতে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে বুথ ব্যবস্থপনায় এখনও পিছিয়ে বিজেপি। কিন্তু ভোটমুখী দিল্লিতে অন্তত শাসক দল আম আদমি পার্টি (আপ)-এর সঙ্গে ওই বিষয়ে তাঁরা পাল্লা দিচ্ছেন বলে আজ দাবি করলেন বিজেপির এক শীর্ষ স্তরের নেতা। জোরের সঙ্গে ওই নেতার দাবি, ভোটের ফলে তাঁর কথার সত্যতা প্রমাণিত হবে। বিজেপির আরও দাবি, বুথস্তরের সংগঠনকে পোক্ত করে শেষবেলায় ‘খেলা ঘুরিয়ে’ দেওয়া সম্ভব হবে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের ওই নেতার মতে, পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু বুথ ব্যবস্থাপনার অভাবে সেই ক্ষোভকে ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত করাতে পারছে না পদ্মশিবির। আগে বাম জমানায় সিপিএম যে ভাবে রিগিং করে জিতত, এখন তৃণমূল তাই করছে। কিন্তু বিজেপির কাছে সমস্যা হল, বুথ পর্যায়ে ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’ করার লোক না থাকায় তা রোখা সম্ভব হচ্ছে না। তৃণমূলের কাছে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। সেই কারণে যেনতেন ভাবে পশ্চিমবঙ্গে নিচু তলায় শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে দল। বিজেপি বুথ ব্যবস্থাপনায় খামতির যুক্তি দিলেও, রাজনীতিকদের মতে রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের এখনও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি মোদীর দল।
দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনে দশ দিন আগেও বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা জানিয়েছিল, রাজধানীতে জেতার মতো জায়গায় নেই দল। বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে আপ। ওই ব্যবধান ঘোচাতে শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি, গোটা এনডিএ-র লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদের মাঠে নামাচ্ছে বিজেপি। আজ এনডিএ সাংসদের বৈঠকে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা প্রত্যেক সাংসদকে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক-একটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতি সাংসদকে কমপক্ষে পঞ্চাশটি পরিবারের কাছে পৌঁছতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভা ও লোকসভা সাংসদ যথাক্রমে শমীক ভট্টাচার্য ও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচারের দায়িত্ব পড়েছে মুস্তাফাবাদ ও রিঠালা কেন্দ্রে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের দায়িত্ব পেয়েছেন রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ কার্তিক পাল।
বিজেপির দাবি, ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূলের ধাঁচেই দিল্লিতে রিগিং চালিয়ে এসেছে আপ। বিজেপির ওই নেতা বলেন, এ বারে যেনতেন প্রকারে তা রোখা হবে। দলীয় নেতারা প্রতিটি ঝুগ্গি-ঝুপড়িতে গিয়ে কথা বলে ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’ অনেকটাই সেরে ফেলেছেন। ওই নেতার ব্যাখ্যা, কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত ক্ষমতায় থাকাকালীন চতুরতার সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিল্লির বেশ কিছু আসনে পুন্যর্বিন্যাস ঘটিয়েছিলেন। এতে গেরুয়া ভোট ছত্রভঙ্গ হওয়ায় নির্ণায়ক কেন্দ্রগুলিতে দুর্বল হয়ে পড়ে বিজেপি। পরবর্তী সময়ে সেই কেন্দ্রের ভোটারদের কার্যত কিনে রেখেছিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। কিন্তু এ বারে আপের সমীকরণ সফল না হওয়ার পিছনে ওই নেতার ব্যাখ্যা, গত দশ বছরে ওই মানুষগুলির জীবনের সামগ্রিক মান্নোনয়ন হয়নি। জনতা, কেজরীওয়ালের মিথ্যা ধরে ফেলেছে। বিশেষ করে যুব সমাজ। তা ছাড়া শিসমহল প্রভাব ফেলবে না বলে আপ দাবি করলেও, মধ্যবিত্ত সমাজকে ওই দুর্নীতি যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। তা ছাড়া যমুনা সাফ করার পরিবর্তে জল-সন্ত্রাসের অভিযোগও দিল্লিবাসী ভাল ভাবে নেননি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)