হতে পারে মাত্র দু’মিনিটের নুডল, আমাদের কাছ থেকে কিন্তু অনেকটা সময় নিয়ে নিল— ভারতীয় বাজারে ম্যাগির উপর থেকে সাময়িক ভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরে আজ এমন মন্তব্যই করেছে বম্বে হাইকোর্ট। যে নির্দেশে আপাতত স্বস্তি পেয়েছে ম্যাগি প্রস্তুতকারক সংস্থা নেসলে। এই রায়ের পরে আজই নেসলে ইন্ডিয়ার শেয়ারদর বেড়েছে তিন শতাংশ।
তা হলে কি বাজারে এখনই ফিরতে চলেছে দু’মিনিটের জাদু?
হাইকোর্ট তেমন নির্দেশ দেয়নি। আপাতত স্বস্তি মিললেও ম্যাগিকে এখনও অপেক্ষা করতে হবে আরও ছ’সপ্তাহ। ভারতেরই আরও তিনটি স্বীকৃত গবেষণাগারে ফের ম্যাগির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে। ওই নতুন পরীক্ষায় যদি দেখা যায়, ম্যাগির মধ্যে সিসার পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রয়েছে, তা হলে ফের ভারতে ম্যাগি তৈরি এবং বিক্রি করতে পারবে নেসলে।
গত মে মাসে তাদের চটজলদি নুডলে নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় বেশি পরিমাণ সিসা এবং মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি বা আজিনামোতো) রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় এই খাদ্যপণ্য ভারতের বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুইস সংস্থা নেসলে। জুন মাসে ভারতে ম্যাগি তৈরি এবং বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রীয় খাদ্য নিয়ামক সংস্থা এফএসএসআই।
বিচারপতি ভি এম কানাড়ে এবং বিচারপতি বি পি কোলাবাওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চ আজ কেন্দ্রীয় খাদ্য নিয়ামক সংস্থা এফএসএসআই এবং মহারাষ্ট্রের খাদ্য সংস্থার নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে বলেছে, এই মামলার ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থার ন্যূনতম নীতি অনুসরণ করেনি ওই দুই খাদ্য সংস্থা। অভিযুক্ত সংস্থা এ ক্ষেত্রে কোনও শুনানির সুযোগও পায়নি। বস্তুত নেসলে-ও আদালতে এই যুক্তিই দেখিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, এফএসএসআই কোনও আগুপিছু বিবেচনা না করে একতরফা ভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়। এমনকী নিষেধাজ্ঞা চাপানোর আগে সংস্থাকে কোনও নোটিস দর্শানোও হয়নি।
আরও একটি দিক থেকে দুর্বল হয়ে গিয়েছে খাদ্য নিয়ামক সংস্থার অবস্থান। হাইকোর্ট এ দিন জানিয়েছে, যে সব গবেষণাগারে সেই সময় ম্যাগির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলির ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন স্বীকৃতি ছিল না। তাই বম্বে হাইকোর্ট ফের ম্যাগির নমুনা পরীক্ষার কথা বলেছে। পঞ্জাব, হায়দরাবাদ এবং জয়পুরের স্বীকৃত তিনটি গবেষণাগারে ম্যাগির নমুনা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেসলে ইন্ডিয়াকে। সংস্থার কাছে এখনও ম্যাগির যে ৭৫০ বাক্স নমুনা রয়েছে, তার থেকেই প্যাকেট সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
তবে হাইকোর্টের আজকের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিল খাদ্য নিয়ামক সংস্থা। বিচারপতিরা সেই আর্জি খারিজ করে বলেছেন, ‘‘নতুন করে পরীক্ষা করতে এমনিই সময় লাগবে। তাই স্থগিতাদেশের প্রয়োজন নেই।’’ তা ছাড়া বিচারপতিদের দাবি, ওই তিন গবেষণাগারের ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত নেসলে ভারতে ম্যাগি তৈরি বা বিক্রি করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, বম্বে হাইকোর্টের রায় তারা খতিয়ে দেখে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। নেসলের স্বস্তিতে কী প্রতিক্রিয়া এফএসএসআইয়ের? খাদ্য নিয়ামক সংস্থার চেয়ারম্যান আশিস বহুগুণা বলেছেন, ‘‘এখনই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা আমরা ভাবছি না। আবার সে সম্ভাবনা উড়িয়েও দিচ্ছি না।’’ ম্যাগি ভারতে ফিরলে এফএসএসআইয়ের দরজা কি তাদের জন্য খোলা থাকবে? বহুগুণার জবাব, ‘‘নেসলের জন্য দরজা সব সময়েই খোলা ছিল। কোনও দিন বন্ধ হয়নি।’’
ম্যাগির মতো কিছুটা একই রকম বিতর্ক তৈরি হয়েছে মাদার ডেয়ারির দুধ নিয়েও। এ বছরের গোড়ায় গাজিয়াবাদে মাদার ডেয়ারির একটি বুথ থেকে সংগ্রহ করা দুধের নমুনায় ডিটারজেন্ট পেয়েছিল জেলার খাদ্য সংস্থা। তখন সেই নমুনা ফের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়। তাতেও একই ফল পাওয়া গিয়েছে।
মাদার ডেয়ারির দুধে ভেজালের খবর পেয়ে এ দিন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের নিয়ে এক বৈঠক করেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। পরে তিনি জানান, কলকাতা শহরের বিভিন্ন দোকানে মাদার ডেয়ারির দুধ বিক্রি হয়। সতর্ক থাকা দরকার। আপাতত শহরের কয়েকটি এলাকা থেকে মাদার ডেয়ারির দুধের প্যাকেট সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তিনি জানান, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy