দল ভাঙিয়ে সরকার ভাঙার অভিযোগ তুলে কর্নাটকের বিজেপি বিধায়ক অশ্বত্থ নারায়ণের বাড়ির সামনে কংগ্রেস বিধায়কদের বিক্ষোভ। ১৬ জানুয়ারি, বুধবার। ছবি: পিটিআই
‘ঘোড়া কেনাবেচা’র ইঙ্গিত পেয়ে ‘বন্দি’ করা হয়েছিল হোটেলে। কিন্তু সেখানেই ‘মারপিট’-এ জড়িয়ে পড়লেন কর্নাটকের কংগ্রেস বিধায়করা। মাথায় বোতলের ঘায়ে এক বিধায়ক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন খবর চাউর হয়েছে। দলের নেতা-নেত্রীদের হাসপাতালে আনাগোনার খবরও মিলেছে। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে মারপিটের ঘটনা ‘স্রেফ গুজব’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি দল ভাঙাতে পারে, এই আশঙ্কায় শুক্রবার থেকেই বেঙ্গালুরুর ইগলটন রিসর্টে রয়েছেন কর্নাটকের কংগ্রেস বিধায়করা। কিন্তু বিপত্তি বাধে শনিবার রাতে। বিধায়কদের মধ্যে ‘গন্ডগোল’ হয় বলে নানা সূত্রে খবর ছড়ায় সংবাদ মাধ্যমে। হোটেল এবং কংগ্রেস সূত্রে খবর পাওয়া যায়, বিধায়ক আনন্দ সিংহকে মাথায় বোতল দিয়ে আঘাত করেন বিধায়ক জে এন গণেশ। তার জেরে আনন্দ সিংহ বেঙ্গালুরুর একটি অভিজাত বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি বলে খবর রটে।
রবিবার সকালে বেশ কয়েক জন কংগ্রেস নেতার পাশাপাশি ওই হাসপাতাল থেকে বেরোতে দেখা যায় কর্নাটকে কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ডি কে শিবকুমারের ভাই ডি কে সুরেশকে। তিনি অবশ্য দাবি করেন, আনন্দ সিংহর বুকে ব্যথা হওয়ায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্য দিকে, হাসপাতাল চত্বরে এক কংগ্রেস নেতা দাবি করেন, তিনি আনন্দ সিংহকে দেখতে এলেও তাঁকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
What more proof do we need to tell all is not well within Congress..
— BJP Karnataka (@BJP4Karnataka) January 20, 2019
Congress MLA's in Eagleton resort indulged in physical fight & 1 MLA is admitted. How long will congress be in denial mode & blame BJP for all their differences?
When political party is lame, it loves to blame pic.twitter.com/4IWSr5xUWi
কর্নাটকে কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যান হিসেবে পরিচিত ডি কে শিবকুমারও ‘মারপিট’-এর ঘটনা উড়িয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘‘অসম্ভব। দেখতেই পাচ্ছেন, সবাই একসঙ্গে রয়েছেন। পুরোপুরি ভুয়ো খবর। একদম সত্যি নয়। পুরো কংগ্রেস দল ঐক্যবদ্ধ।’’ আবার কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা জি পরমেশ্বর বলেন, ‘‘আমাদের কোনও সতীর্থ অসুস্থ হয়েছেন এবং যদি সেটা সত্যি হয়, তাহলে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কে অসুস্থ তা আমি জানি না। শুধু আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: সারা দেশে বিজেপি বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দিতে পারে কংগ্রেসই: তেজস্বী যাদব
গুজব হোক বা সত্যি, সেটার উৎস আসলে বিজেপি। দলের কর্নাটক শাখার পক্ষ থেকে টুইট করে এই গন্ডগোলের কথা চাউর করা হয়। বলা হয়, ‘ঈগলটন রিসর্টে দুই বিধায়কের মারপিটে এক জন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কংগ্রেস আর কতক্ষণ অস্বীকার করবে এবং নিজেদের কোন্দল বিজেপির ঘাড়ে চাপাবে?’ আরও একটি টুইটেও প্রায় একই দাবি করা হয়। তার পরই জল্পনা চরমে ওঠে।
গত কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, কর্নাটকে সঙ্কটের মুখে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকার। জল্পনা ছড়াচ্ছিল, কংগ্রেস ও নির্দল বিধায়কদের কয়েক জন বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তার মধ্যেই কংগ্রেসের পাঁচ বিধায়ক ‘বেপাত্তা’ হয়ে যান। বিজেপির সঙ্গে তাঁদের ‘বোঝাপড়া’ চলছে বলেও শুরু হয় গুঞ্জন। সেই জল্পনা চরমে উঠতেই ‘নিখোঁজ’দের মধ্যে দুই বিধায়ক ফিরেও আসেন। বিজেপির সঙ্গে ‘যোগাযোগ’-এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন তাঁরা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধ ভবনে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে সব বিধায়ককে হাজির থাকতে বলা হয়। বৈঠকে যোগ দেন ৭৬ জন। বৈঠক শেষে সেখান থেকেই বিধায়কদের নিয়ে যাওয়া হয় বেঙ্গালুরুর ঈগলটন রিসর্ট হোটেলে। ওই দিন বাকি চার জনের বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার জানান, বৈঠকে যাঁরা গরহাজির ছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জনকে শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়েছে। দু’জন অনুপস্থিতির কারণ ইতিমধ্যেই দলের নেতা সিদ্দারামাইয়াকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ব্রিগেডের জের! বিহারি বাবুকে বহিষ্কারের পথে এগোচ্ছে বিজেপি?
২০০৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ক্ষমতা ধরে রাখতে মোটা টাকার টোপ দিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে বিরোধী বিধায়কদরে দলে টেনেছিলেন বলে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে অভিযোগ। এই ঘটনা কর্নাটকের রাজনীতিতে ‘অপারেশন লোটাস’ বলে পরিচিত। কর্নাটক বিধানসভায় মোট আসন ২২৫। ম্যাজিক ফিগার ১১৩। এই মুহূর্তে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের হাতে রয়েছে ১১৮ জন বিধায়ক। অন্য দিকে বিজেপির পক্ষে বিধায়ক সংখ্যা ১০৪। এই জোট সরকার ভাঙতে ইয়েদুরাপ্পা ফের সেই ‘অপারেশন লোটাস’ শুরু করেছেন বলে কংগ্রেস ও জেডিএস-এর অভিযোগ। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর কংগ্রেস এবং জেডিএস বিধায়কদের হোটেলে রেখে বিধায়ক ভাঙানো বা ‘ঘোড়া কেনাবেচা’র সুযোগ দেয়নি কংগ্রেস। বিজেপি সরকার গঠনের দাবি জানিয়েও ভোটাভুটির আগে সরে দাঁড়ায়। কর্নাটকে জোট সরকার গঠন হয়। ভোটের পরের সেই কৌশল ছিল ডি কে শিবকুমারের মস্তিষ্কপ্রসূত। এবার তথাকথিত ‘অপারেশন লোটাস’ রুখতেও আসরে নেমেছেন সেই উদ্ধারকর্তা শিবকুমার। এবং এবারও সেই হোটেলে রাখারই কৌশল। তবে সেই হোটেলে কংগ্রেসের দুই বিধায়কের ‘মারপিট’-এর খবরে অস্বস্তিতে কর্নাটক কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy