Advertisement
১৯ মে ২০২৪

হতশ্রী পরিবেশ বদলের আশা দাভের হাতে

দু’জনের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিল সঙ্ঘ পরিবার। সে কারণে রদবদলের প্রথম সুযোগেই মানবসম্পদ মন্ত্রক থেকে বিতর্কিত স্মৃতি ইরানিকে সরিয়ে প্রকাশ জাভড়েকরকে এনেছেন নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

দু’জনের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিল সঙ্ঘ পরিবার। সে কারণে রদবদলের প্রথম সুযোগেই মানবসম্পদ মন্ত্রক থেকে বিতর্কিত স্মৃতি ইরানিকে সরিয়ে প্রকাশ জাভড়েকরকে এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই জাভড়েকর, পরিবেশ মন্ত্রী হিসেবে যাঁর বিরুদ্ধে পরিবেশ-ধ্বংসের অভিযোগ উঠছিল সঙ্ঘের অন্দরেই! জাভড়েকরকে সরিয়ে যে অনিল মহাদেব দাভেকে পরিবেশের দায়িত্ব দিয়েছেন মোদী, তিনি একদিকে যেমন সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তেমনই পরিবেশপ্রেমীদের কাছেও বেশ চেনা নাম।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশ-বিদায়ের পরে প্রশ্ন উঠেছে, পরিবেশপ্রেমী দাভের ছোঁয়ায় কি শ্রী ফিরবে পরিবেশের?

সঙ্ঘ-নেতৃত্বের আশা তেমন হলেও শিল্পায়নের দিকে তাকিয়ে বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলির চাপের মুখে জাভড়েকর যেমন আপস করেছিলেন, দাভেও কি তা-ই করবেন? ঘটনা হল, সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দাভে কিন্তু পরিবেশ নিয়ে বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে একাধিক বার প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি সেই পথেই হাঁটবেন বলে আশা পরিবেশপ্রেমীদের। বিজেপি এবং সরকারের একটা বড় অংশও মনে করছেন, দাভেকে দায়িত্বে এনে পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে মোদী সরকারের যে নেতিবাচক ছবি গত দু’বছরে তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই এ বারে শোধরানো যাবে।

জন্মসূত্রে গুজরাতি হলেও বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা দাভে কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, উন্নয়নের নামে পাহাড়-জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়া, নর্মদা-সহ দেশের অন্য নদীগুলিতে বাঁধ নির্মাণ করে গতিরোধ করার মতো বিষয়গুলির বিরুদ্ধে বরাবরই মুখ খুলেছেন। গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার যখন নর্মদায় বাঁধ নির্মাণে সক্রিয়, তখন দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে’ জড়িয়ে পড়েছিলেন দাভে। শুধু নর্মদা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নদী-বাঁধ নির্মাণেরই বিপক্ষে তিনি। সংসদে এ সংক্রান্ত একটি বক্তব্যে তিনি জানান, যে সব এলাকায় কুড়ি বছর আগে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেখানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা হোক, ওই বাঁধ নির্মাণের ফলে আদৌ ওই এলাকার কোনও আর্থিক বা সামাজিক উন্নতি হয়েছে কিনা। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক মিলিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক যে, ওই বাঁধগুলির আর কোনও দরকার আছে কি না।

বহু পরিবেশবিদের মতো দাভেও মনে করেন, বাঁধের কারণেই ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে এ দেশের প্রায় সবক’টি নদী। বাঁধের ফলে পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে ফেলা নদীগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন সময় সরব হয়েছেন দাভে। আর তাই মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মন্ত্রকের কর্তাদের তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলিকে স্বচ্ছ করা পরিবেশ মন্ত্রকের অন্যতম লক্ষ্য। যার মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছে গঙ্গা সাফাই কর্মসূচি। এ নিয়ে দাভের বক্তব্য, গঙ্গা সাফাইয়ের মতো কাজ এক দিনে হয় না। ঠিক ভাবে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে গেলে অন্তত দু’প্রজন্ম সময় লাগবে। এ কাজে তাড়াহুড়ো করলে কাজের কাজ তো হবেই না, আখেরে আরও খারাপ ফল হবে। দাভের হাতে পরিবেশ মন্ত্রকে আরও একটি কাজ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন অনেকে। তা হল, নদী সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজে এ বারে গতি আসবে বলেই মনে করছেন আরএসএস নেতারা।

নিজের ষাটতম জন্মদিনে মন্ত্রকের দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন দাভে। নিজে আধুনিক প্রযুক্তির ভক্ত, কিন্তু পরিবেশের স্বার্থে কৃষিতে বরাবরই দেশজ প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন। সঙ্ঘের মতোই দাভেও কৃষি ক্ষেত্রে বিনা রাসায়নিক ব্যবহার করে দেশীয় পদ্ধতিতে চাষের পক্ষপাতী। আরও একটা কারণে সঙ্ঘ এবং দলের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়। ইংরেজি সাহিত্যের ভক্ত দাভে সঙ্ঘের নীতি মেনে ‘আংরেজিয়ানা’র বিরোধী। সরকারি কাজে বা আলোচনায় হিন্দি বা অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের পক্ষেই তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anil madhav dave environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE