Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদী দমনে মহিলা বাহিনী পাঠাচ্ছে কেন্দ্র

মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায় উপদ্রুত এলাকাগুলিতে এ বার নিজস্ব মহিলা বাহিনীকে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিল সিআরপিএফ। বর্তমানে দেশের ছ’টি রাজ্যে মাওবাদী দমনে প্রায় ৯০ ব্যাটেলিয়ন সিআরপিএফ মোতায়েন রয়েছে। এদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার জন্য দিন কয়েক আগেই দু’প্লাটুন মহিলা সিআরপিএফ মাওবাদী অধুষ্যিত দু’টি রাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০২
Share: Save:

মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায় উপদ্রুত এলাকাগুলিতে এ বার নিজস্ব মহিলা বাহিনীকে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিল সিআরপিএফ।

বর্তমানে দেশের ছ’টি রাজ্যে মাওবাদী দমনে প্রায় ৯০ ব্যাটেলিয়ন সিআরপিএফ মোতায়েন রয়েছে। এদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার জন্য দিন কয়েক আগেই দু’প্লাটুন মহিলা সিআরপিএফ মাওবাদী অধুষ্যিত দু’টি রাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। সিআরপিএফ সূত্রে বলা হয়েছে, এর মধ্যে একটি বাহিনীকে ছত্তীসগঢ়ের বস্তারে অন্যটিকে ঝাড়খণ্ডে মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ঝাড়খণ্ডের বাহিনীটিকে ঠিক কোথায় পাঠানো হয়েছে তা অবশ্য নিরাপত্তার জন্য জানাতে চায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী সপ্তাহে সেখানে ভোট। অনেকেই মনে করছেন, সেই কারণেই কোনও রকম ঝুঁকির রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না কেন্দ্র।

কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান নীতি হল, সেনা বা আধা সামরিক বাহিনীতে যে মহিলা বিগ্রেড রয়েছে তাদের এমন কোনও এলাকায় নিয়োগ করা হবে না যেখানে প্রাণ সংশয় রয়েছে। অর্থাৎ সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্র বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি রয়েছে অথবা উপদ্রুত এলাকায় এ যাবৎ মহিলা নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করেনি কেন্দ্র। সেই কারণে দু’বছর আগে বিএসএফের মহিলা বাহিনীকেও অপেক্ষাকৃত শান্ত পঞ্জাব সীমান্তে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু যে ভাবে ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডের মতো দু’টি সর্বাধিক মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যে মহিলা সিআরপিএফ নিয়োগ করা হয়েছে তা ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত হিসাবে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

কেন এই সিদ্ধান্ত? সরকারের মতে, মূলত স্থানীয় গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জন করতেই এই পদক্ষেপ। মাওবাদী দমনে সম্প্রতি যে নতুন নীতি সরকার নিয়েছে, তাতে সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের আস্থা ও ভরসা অর্জনের উপরেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, মাওবাদীদের বড় শক্তি হল মূলত স্থানীয় মানুষের মদত। মাওবাদীদের আশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের রসদ জোগান, সবই করে থাকেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। কোথাও প্রাণের ভয়ে আবার কোথাও মাওবাদীদের প্রতি আস্থা দেখিয়েই। মাওবাদীদের সেই জনভিত্তিই এখন গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে চাইছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন স্থানীয়দের আস্থা অর্জন। আর তাই এখন পুরুষের চেয়ে মহিলা কর্মীদের উপর ভরসা রাখতে চাইছেন মন্ত্রক কর্তারা। মন্ত্রক দেখেছে, আস্থা অর্জন ও পরবর্তী ধাপে তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নে মহিলা নিরাপত্তারক্ষীরা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি দক্ষ।

তা ছাড়া, শুধু পুরুষদের দিয়ে তল্লাশি চালাতে গিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয় নিরাপত্তা বাহিনীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “মাওবাদীদের খোঁজে প্রায়শই গ্রামে তল্লাশিতে যেতে হয়। খবর পেলেই সবার আগে গ্রামের পুরুষরা পালিয়ে যান। পড়ে থাকেন মহিলা-শিশুরা। মহিলাদের তল্লাশি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।” মহিলাদের হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ যে ওঠে তা-ও অনেকাংশে সঠিক বলে মেনে নেন মন্ত্রক কর্তারা। ফলে মানবাধিকার সংগঠনগুলি নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে থাকেন। এতে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়। উল্টে মাওবাদীদের প্রতি গ্রামবাসীদের সমর্থন বাড়ে। এই ছবিটা পাল্টাতেই মহিলা কর্মী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। তবে অন্য কারণও আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক সময়ই মহিলা মাওবাদীরা আহত বা গ্রেফতার হন। তখন তাঁদের তল্লাশি বা জেরা করার ক্ষেত্রেও মহিলা কর্মী না থাকায় অসুবিধা হয়। বাহিনীতে মহিলা থাকলে সেই সমস্যাও অনেকটা কমবে। আগামী দিনে তাই আরও বেশি সংখ্যক মহিলা বাহিনীকে উপদ্রুত এলাকায় নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। তাই পাঁচ বছরের মধ্যে সিআরপিএফের মহিলা বাহিনীর সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE