Advertisement
E-Paper

আগের ‘চায়েওয়ালা’ মোদী এখন বলছেন, ‘আমি ইউপিওয়ালা’

কমলা নেহরু রোডের মোড়ে রাজুর পানের দোকানে অনর্গল বেজে চলেছে ‘হিরো নম্বর ওয়ান’ সিনেমার গানটি— ইউপিওয়ালা ঠুমকা লাগাও, হিরো য্যায়সা নাচকে দিখাও...। বনারসী পান গালে ঠুসে গোবিন্দা গাইছেন, আর ‘ইউপিওয়ালা’ ঠুমকা লাগাচ্ছেন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৫৩

কমলা নেহরু রোডের মোড়ে রাজুর পানের দোকানে অনর্গল বেজে চলেছে ‘হিরো নম্বর ওয়ান’ সিনেমার গানটি— ইউপিওয়ালা ঠুমকা লাগাও, হিরো য্যায়সা নাচকে দিখাও...। বনারসী পান গালে ঠুসে গোবিন্দা গাইছেন, আর ‘ইউপিওয়ালা’ ঠুমকা লাগাচ্ছেন।

কাকতলীয় ভাবে পানের দোকানের ঠিক উল্টো দিকেই নরেন্দ্র মোদীর বিরাট পোস্টার। তাতে লেখা ‘ম্যায় ইউপিওয়ালা হুঁ’।

সরকারের দু’বছরের জন্মদিনে এই উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরে এসেই মোদী প্রথম সুরটি বেঁধে দিয়েছিলেন। আগে বলতেন, ‘আমি চায়েওয়ালা।’ এখন বলছেন, ‘আমি ইউপিওয়ালা।’

গত লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থেকে গুজরাতের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকেও লড়েছিলেন মোদী। কারণ উত্তরপ্রদেশের মতো দেশের সব থেকে বড় রাজ্যে বাজি না জিতলে ৫৬ ইঞ্চির ছাতিটা় ঠিকঠাক চওড়া হতো না। সে জন্য নিজের সব থেকে বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহকে সেই সময় দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের ভার।

বারাণসী জিতে দু’বছর আগেই উত্তরপ্রদেশের সাংসদ হয়েছিলেন। গুজরাতের বদোদরা ছেড়ে দিয়ে পাকাপাকি উত্তরপ্রদেশেরই সাংসদ এখন মোদী। কিন্তু এত দিন এ ভাবে ঢাক পিটিয়ে নিজেকে ‘ইউপিওয়ালা’ বলতে হয়নি। এখন হচ্ছে। গরবা ছেড়ে মন দিতে হচ্ছে ইউপিওয়ালা ঠুমকাতেই।

কারণ? বিজেপি নেতারা বলছেন, একে তো নীতীশ কুমারের ভূত এখনও পিছু ছাড়েনি। বিহারের ভোটের সময়ও গোটা দল বাজি রেখেছিলেন মোদীর নামেই। কিন্তু নীতীশ কুমার সুকৌশলে লড়াইটি ‘বিহারি’ বনাম ‘বাহারি’ করে দিয়েছিলেন। সেই হারের জ্বালা এখনও মেটেনি। এর পরেই গোবলয়ের আর একটি রাজ্যে লড়াইয়ের আগে, তা-ও আবার সেটা যখন উত্তরপ্রদেশ— মোদী নিজেকে আর বহিরাগত রাখতে চান না। তাই বারাণসীর সাংসদ হওয়ার তাসটি খেলে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ গোছের গান গেয়ে রাখছেন তিনি।

লোকসভায় যে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৭৩টি মোদীর ঝুলিতে পুরে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর শিরোপা পেয়েছিলেন অমিত শাহ, আজ তিনিই বললেন, “প্রধানমন্ত্রী এক জন ইউপিওয়ালা, এতে অতিশয়োক্তি কোথায়? তিনি তো সংসদে এই রাজ্যের মানুষেরই প্রতিনিধি। উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নে কাজ করেন। কিন্তু অখিলেশ সরকার সেই উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। সে কারণেই এ রাজ্যে বিজেপি সরকার হওয়া দরকার।”

কাল থেকে এই সঙ্গম-নগরী ইলাহাবাদেই বসছে মোদীর দলের দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। গত আধা-দশকে এই উত্তরপ্রদেশে কখনও কর্মসমিতির বৈঠক হয়নি। কিন্তু এখন উত্তরপ্রদেশেই নজর মোদী-শাহ। এই বৈঠকের পরেই ‘অভিষেক’ ইউপিওয়ালা মোদীর। ইতিমধ্যেই দল ছক কষেছে, ভোট পর্যন্ত প্রায় একশো সভা করবেন মোদী-অমিত শাহ-রাজনাথরা।

দলের কেউ চান, রাজনাথ সিংহকে মুখ করা হোক। কেউ চান, কল্যাণ সিংহকে রাজ্যপালের পদ থেকে ইস্তফা দিইয়ে ফিরিয়ে আনা হোক। কেউ বা চান, যোগী আদিত্যনাথকে দিয়ে হিন্দুত্বের জিগির তুলে বাজি মারুক বিজেপি। কেউ বা আবার স্মৃতি ইরানির ভক্ত। উঠেছে বরুণ গাঁধীর নামও। বিভিন্ন সমীক্ষায় তাঁকেএগিয়ে রাখা হলেও এই গাঁধীতে খুশি নন দলের নেতারা। এই অবস্থায় প্রচারে প্রধান মুখ রাখা হবে মোদীকেই। কারণ, এত বড় রাজ্য, এত জাত-পাত, ধর্মের ভেদ। কোনও এক জন নেতাকে মুখ করে রাজ্যের বৈতরিণী পার হওয়াটা বেশ কঠিন কাজ।

রাজনাথ সিংহ ঘনিষ্ঠ বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী তাই বললেন, “আমাদের দলে সেনাপতির অভাব নেই। ২০০২ সালে রাজনাথ সিংহ, ২০০৭ সালে কল্যাণ সিংহ, ২০১২ সালে উমা ভারতীকেও মুখ্যমন্ত্রী মুখ করা হয়েছিল। কিন্তু কাউকে মুখ করলেই দল ভাল ফল করেছে, ইতিহাস তা বলে না।” কারণটি স্পষ্ট। এত বড় রাজ্যে এত জাত-পাতের জটিল সমীকরণে এক জনকে মুখ করলে অখুশি হন অন্য জাত-সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপির তুরুপের তাস এক জনই হতে পারেন বলে মনে করছেন নেতৃত্ব। তাঁর নাম নরেন্দ্র মোদী। তাই মোদীর ভাবমূর্তিকেও এখন নতুন করে ঢেলে সাজা হচ্ছে। গত দু’বছরে যে ‘মোদী-ঝড়ে’ ভাটা পড়েছে, তাতে শান দিয়ে ফের হাওয়া তোলাটাই এখন দলের রণনীতি। বিরোধীদের কৌশল বুঝে ভবিষ্যতে আর কোনও মুখকে তুলে ধরার প্রয়োজন হলে সে সিদ্ধান্ত নেবেন অমিত শাহ।

আপাতত ঠুমকা লাগাতে হবে ‘ইউপিওয়ালা’ মোদীকেই।

narendra modi UP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy